ভারতকে কী কী দিয়েছেন সেগুলো প্রকাশ করুন: খন্দকার মোশাররফ

ভারতকে কী কী দিয়েছেন সেগুলো প্রকাশ করুন: খন্দকার মোশাররফ

ঢাকা, ৩১ মে (জাস্ট নিউজ) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সফর শেষে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমরা (বিএনপি) মিডিয়ার মাধ্যমে এ দেশের জনগণের পক্ষ থেকে জানতে চাই। আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই যে বলেন, অনেক দিয়েছেন, আমরা ভালো করে জানি না কী কী ভারতকে দিয়েছেন। আপনি দয়া করে জনগণের সামনে প্রকাশ করুন।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, জনগণ আপনাকে অবিশ্বাস করে। কারণ আপনি ভারতকে কেবল দিতে পারেন। কিন্তু ভারত থেকে কিছু আনার ক্ষমতা আপনার সরকারের নেই।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৭তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, শফিউল বারী বাবু ও রাজীব আহসানসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি শীর্ষক যুব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য এসব কথা বলেন।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, ভারতকে আপনারা এত দিয়েছেন যে, ভারত সারা জীবন তা মনে রাখবে। কিন্তু বলেননি, ভারত থেকে আপনারা কী এনেছেন। আপনারা বারবার ভারত যান। আমাদের বাঁচা-মরার যে সমস্যা, সেই পানির সমস্যার ব্যাপারে কোনো সমাধান আনতে পারেননি। এমনকি আলোচনার বিষয়বস্ত আপনারা করতে পারেননি। কী নির্লজ্জের মতো বলেন যে, আপনি ভারতকে এত কিছু দিয়েছেন, ভারত না কি সারা জীবন তা মনে রাখবে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভারত সফর শেষ করে এসে প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আমরা এটা দেখে আশ্চর্য হয়েছি। কারণ ভারতে সফরে তিনি কেন গেলেন, কী করলেন, কী দিলেন এবং কী আনলেন?- এবারে বিস্তারিত না বলে বেগম জিয়া, বিএনপি, ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এমনকি আমাদের রুহুল কবির রিজভীকে এক বালতি পানি দেওয়ার কথা বলেছেন। তা শুনে আমাদের লজ্জার মাথা নত হয়ে গেছে। কীভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের ভারত সফরের কথা বলে ডেকে নিয়ে, এসব কথা বলতে পারেন!

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, দয়া করে আপনি বুধবার কী কথা বলেছেন, সেই অডিও নিয়ে আপনি আরেকবার ভালো করে শুনেন। আপনিও লজ্জা পাবেন যে, বিদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে একজন প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলতে পারেন!

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনি বলছেন, আপনার চাওয়ার অভ্যাস খুব কম। বাংলাদেশের মানুষের বাঁচা-মরার যে সমস্যা পানি? এটা চাওয়ার অভ্যাস যদি কম থাকে তাহলে এ দেশের জনগণ আপনাকে সেভাবেই দেশে থেকে বিতাড়িত করবে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বুধভার ভারত সফরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, তখনো তিনি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি করে কারাগারে আছেন। তাকে আমরা (সরকার) কীভাবে মুক্ত করব? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। আপনি যেকোনো বক্তব্যে, যে কোনোভাবে দিতে পারেন না। কারণ বেগম জিয়ার শাস্তি দুর্নীতি দমনের কোনো আইনের ধারায় হয়নি। সুতরাং আপনি, বেগম জিয়া দুর্নীতি করে কারাগারে এটা আপনি বলতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর মুখে এটা সাজে না। একজন দলীয় নেত্রী ও একজন স্বৈরাচারী হিসেবে আপনি নিজেকে আবারো গতকাল প্রমাণ করলেন।

সরকার কীভাবে বেগম জিয়াকে মুক্ত করবে- প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এ দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, এ সরকার নিম্ন আদালতকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেছে। সরকার এখন উচ্চ আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সাবেক বিচারপতিকে যেভাবে বিদায় করেছে, তাকে বিদায় করার পরই সরকার উচ্চ আদালতকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে। আজকে উচ্চ আদালত যদি নিয়ন্ত্রিত না হয়, তাহলে কেন বেগম জিয়া হাইকোর্টে জামিন পাওয়ার পরও আপিল বিভাগ সেই জামিন স্থগিত করে দিয়ে তার কারাবাসকে দীর্ঘায়িত করেছেন?

সুপ্রিম কোর্টের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকারই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আবদ্ধ রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, সরকার যদি আবদ্ধ না রাখতে তাহলে হাইকোর্টে জামিনের পর সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হলো কেন? অথচ তিনি বলেন, সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশ ছাড়া আপিল করা সম্ভব নয়। আপিল করে আবার আপিল বিভাগের জামিন স্থগিত করা সর্বোচ্চ জায়গা থেকে এটার ইঙ্গিত না হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এটা করতে পারে না।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, যে আন্দোলনে স্বৈরাচারের টনক নড়ে এবং স্বৈরাচারে পতন হয়, আমাদের সেই আন্দোলনই করতে হবে। সেই ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আবারো নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরো বলেন, ৫ জানুয়ারির মতো এবারো যদি নির্বাচন করতে চান তাহলে জনগণ সেটা হতে দেবে না। জনগণ এবার রাস্তা বন্ধ করবে এবং আমরা জনগণের সঙ্গে থাকব।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমীন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সম্প্রতি ভারত সফর নিয়ে বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজারে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে করা সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন পত্রিকা এসব নিউজ করেছে তা আমি জানি না। আমি কারো কাছে কোনো প্রতিদান চাই না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কারো কাছে কিছু চাই না। আমি নিতে পছন্দ করি না। সব সময় অন্যকে দিতে বেশি পছন্দ করি। আর আমরা ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩৫৯ঘ.)