আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান তারেক রহমানের (ভিডিও)

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান তারেক রহমানের (ভিডিও)

ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

তিনি বলেছেন, "রাজপথে আন্দোলনকারী এই শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই কেউ আপনার-আমার-আমাদের ভাই বোন সন্তান কিংবা স্বজন। সুতরাং, তারুণ্যের ন্যায্য অধিকার আদায়ের চলমান এই লড়াইকে সফল করতে অভিভাবক হিসেবে অবশ্যই আমাদের সমর্থন-সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির কাছে আমার আহ্বান, আমাদের ভাই বোন কিংবা সন্তান স্বজনদের ন্যায্য দাবি আদায়ে তাদের পাশে থাকুন। তাদেরকে সাহস দিন, সহযোগীতা করুন। আওয়ামী লীগের হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আন্দোলনকারীদের সহিস দিন। স্লোগান তুলুন "ফয়সালা নয় আদালতে-ফয়সালা হবে রাজপথে।""

মঙ্গলবার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, "বারবার প্রমাণিত হয়েছে, খুনি হাসিনার হাতে কেউ নিরাপদ নয়। এমনকি দেশের স্বাধীনতাও নিরাপদ নয়। মিথ্যাবাদী প্রতারক হাসিনার কবল থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা উদ্ধার করে  জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে ছাত্র-শিক্ষক কিংবা পেশাজীবী কারো কোনো দাবি আদায় হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং, দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষায় হোক এই মুহূর্তের স্লোগান "দফা এক দাবি এক, খুনি হাসিনার পদত্যাগ।""

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, "কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলনরত প্রিয় ভাই ও বোনেরা। খুনি হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আপনারা নিজেদের ন্যায্য-যৌক্তিক এবং সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। আপনাদেরকে বীরোচিত অভিনন্দন।"

তিনি আরও বলেন, "কোটা কখনো মেধার বিকল্প হতে পারেনা। এই অন্যায্য কোটার কারণেই দক্ষতা এবং মেধার পরিবর্তে জনপ্রশাসন সম্পূর্ণ দুর্নীতি নির্ভর হয়ে পড়েছে। জন প্রশাসনে চলমান বৈষম্য আর অনাচারের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা বাংলাদেশের ছাত্র-তরুণ-শিক্ষার্থী আপনারা আবারো রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ ন্যায্য দাবি মেনে না নিয়ে খুনি হাসিনা নিরস্ত্র ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীদেরকে লেলিয়ে দিয়েছে। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর আওয়ামী হানাদারবাহিনীর সশস্ত্র হামলায় সারাদেশে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭ জন শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সারাদেশে শত শত শিক্ষার্থীদেরকে নির্মম-নির্দয়ভাবে আহত করা হয়েছে।"

তিনি বলেন, "বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা না চেয়ে উল্টো বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে পুলিশি তল্লাশি চালিয়ে খুনি হাসিনা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে রাজনৈতিক রং দিতে চায়। তবে হাসিনার ষড়যন্ত্র নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী কিংবা দেশবাসী সজাগ এবং সচেতন।"

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, "আওয়ামী লীগের হানাদারবাহিনীর হামলায় যারা হতাহত হয়েছে, তারা তো আমার-আপনার- আপনাদের প্রিয় ভাই-বোন-সন্তান-কিংবা স্বজন। তারা নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। সাম্য মানবিক মর্যাদা নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়েছিলো। স্বাধিকার আর সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাওয়াই কি তাদের অপরাধ? কেন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের উপর এমন বর্বরোচিত হামলা চালানো হলো? আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের কেন তাদের উপর গুলি চালানো হলো? হাসিনার জঙ্গিবাহিনীর আক্রমণে শহীদ প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীই ছিল তাদের নিজ নিজ পরিবারের একেকটি স্বপ্ন, রাষ্ট্রের সামনে একটি সাফল্যের সম্ভাবনা। সুতরাং, একজন শিক্ষার্থীকে হত্যা করে শুধু একজন ব্যক্তিকেই হত্যা করা হয়নি বরং একেকটি পরিবারের স্বপ্ন, আকাঙ্খাও ভেঙে দেয়া হয়েছে। একেকটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।"

তিনি বলেন, "বিনাভোটে অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে রক্ত পিপাসু হাসিনা এভাবে  আর কত মানুষের জীবন কেড়ে নেবে? আর কত পরিবারের স্বপ্ন কেড়ে নিলে খুনি হাসিনার রক্তের নেশা মিটবে? আমি এই হত্যকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। হতাহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবার এবং স্বজনদের প্রতি জানাই গভীর শোক এবং সমবেদনা।"

তারেক রহমান বলেন, "একজন শহীদের সন্তান হিসেবে, স্বাধীনতার ঘোষকের সন্তান হিসেবে, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, আমার দল বিএনপি বিশ্বাস করে, চাকুরী ক্ষেত্রে ৫৬ পার্সেন্ট কোটার বিদ্যমান ব্যবস্থা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সামাজিক সুবিচার, মানবিক মর্যাদা এবং সাম্য বিরোধী। কোনো সভ্য রাষ্ট্র ও সমাজের শাসন-প্রশাসন দা-চাপাতি-কুড়াল কিংবা হেলমেটবাহিনী দিয়ে চলতে পারেনা।"

তিনি বলেন, "জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে, মেধাভিত্তিক শাসন প্রশাসনের বিকল্প নেই।  এ কারণেই সরকারি চাকুরীতে ৫ পার্সেন্টের বেশি কোটা রাখা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আমি কথা দিচ্ছি, জনগণের রায়ে বিএনপি আবারো সরকার গঠনের সুযোগ পেলে সংবিধানের ২৯ বিধির আলোকে অবশ্যই কোটা সংস্কারের যৌক্তিক এবং ন্যায্য দাবি মেনে নেয়া হবে। বাস্তবায়ন করা হবে।"