সিটি নির্বাচন

খুলনার মতো গাজীপুরের হালচাল, পুলিশের ভয়ে বিএনপি

খুলনার মতো গাজীপুরের হালচাল, পুলিশের ভয়ে বিএনপি

ঢাকা, ২১ জুন (জাস্ট নিউজ) : খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বিএনপির মনে সংশয় ছিল। দলটি অভিযোগ করে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। লঙ্ঘন করা হচ্ছে আচরণবিধি। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বারবার সেনাবাহিনী নিয়োগের আবেদন জানায়। বেশকিছু সংগঠনও এমন অভিযোগ করে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবশ্য সব অস্বীকার করা হচ্ছে। দলটি বলছে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে বিএনপি।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। অবশ্য ঈদের আমেজ কাটেনি। এরই মধ্যে অলিগলিতে উচ্চস্বরে বেজে চলেছে মাইক। খানিক ঝিমিয়ে পড়া ভোটাররা আবার পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে সরগরম। দুপুরের তীব্র রোদ উপেক্ষা করে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন কাউন্সিলর আর মেয়র প্রার্থীরা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই পছন্দের প্রার্থীর মার্কা নিয়ে মিছিলের ধুম-ধামাক্কা চলছে গাজীপুর মহানগরে। মৌসুমি উচ্ছ্বাসে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটি কাটিয়ে আসা মানুষগুলো। ঈদ আনন্দের রেশ না কাটতেই ভোটের মাঠ সরগরম হলেও বিএনপির শঙ্কা ঠিক আগের মতোই, পুলিশি হয়রানি আর গ্রেপ্তারে। তবে খুলনার নির্বাচনের ফল দেখে নির্ভার আওয়ামী লীগ। জয় পেতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দলটির প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।

বিএনপির প্রার্র্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নির্বাচন পরিচালনা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগের দিন কাশিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শওকত হোসেন সরকারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতের পর টঙ্গীতে লেগুনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপি জোটের ১০৩ নেতাকর্মীর নামে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করা ১২ জন এখনো কারাবন্দি।

এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে স্থানীয় চক্রবর্তী পুলিশ ফাঁড়ি। হুমকি-ধমকির অভিযোগের তীর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীর দিকেও।

বিএনপির গাজীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী মীর হালিমুজ্জামান ননী বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) সব জায়গায় ভীতি প্রদর্শন ও গুজব ছড়াচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্র্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এমন আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। দেখছি পুলিশও বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। নৌকার লোকজন প্রচারণা করছে তারা খুলনার মতো গাজীপুরেও ভোট করবে। তবে আমরা এসব ভয় পাই না। কেন্দ্রে কেন্দ্র সব গুজব আর বাস্তবতাকে প্রতিহত করব। তিনি বলেন, বিএনপি ব্যানার-বিলবোর্ড সাঁটালে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন হয়। আওয়ামী লীগ সাঁটালে হয় না। এটা আবার কেমন বিধি?

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মিডিয়া সমন্বয়কারী ডা. মাজহারুল আলম বলেন, বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগকে ১ লাখ ভোটে হারিয়েছে। এখন মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর আরো ক্ষুব্ধ। তাই এবার দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে জিতব। এটা বুঝতে পেরে তারা নির্বাচন বন্ধের কৌশল গ্রহণ করে। এখন আবার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের অনেকে ভয়ে বেরোতে পারছে না। তবে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে।

জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ বা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করবে পুলিশ। জেলা পুলিশের এসপির বিরুদ্ধেই বিএনপিকে হয়রানি-গ্রেপ্তারের বড় অভিযোগ। নির্বাচনের আগে তাকে সরানোর অনুরোধ করা হলেও সরকার কর্ণপাত করছে না। বরং খুলনায় নির্বাচনের আগে যেভাবে দলীয় নেতাকর্মীকে বিনা অপরাধে গণহারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন শুরু করে গাজীপুরেও তেমনটা ভীতি রয়েছে বিএনপিতে। পুলিশের দলীয় আচরণে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তারা শঙ্কিত।

তবে সব শঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়ে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সচেষ্ট আছে।

একইভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয় তা হলে যে ব্যক্তি দায়ী হবে তার বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নিতে যে পর্যায়ে যাওয়া দরকার হয় যাওয়া হবে। তিনি বলেন, গাজীপুরে নির্বাচন নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেই। প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য।

গাজীপুর ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, ভোগড়া, টঙ্গী এলাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির মেয়র পদসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের পক্ষে মাইকে জোরালো প্রচার চলছে। নতুন করে অলিগলিতে ঝোলানো হচ্ছে পোস্টার-ব্যানার। দুপুরে জয়দেবপুরের হারিনাল এলাকায় ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী দীপা চৌধুরীর পোস্টারে আঠা লাগাচ্ছিল একদল যুবক। আর একদল নারীকে সঙ্গে নিয়ে পাশের জোড়পুকুর এলাকায় ভোট চাচ্ছিলেন ওই প্রার্থী।

দীপা চৌধুরী বলেন, ভোট স্থগিত হওয়াতে ভোটার তো দূরের কথা প্রার্থীরাও ঝিমিয়ে পড়েছিল। এখন সবাই চাঙ্গা। সুষ্ঠু ভোটে যে জিতবে তাকেই জনগণ মেনে নেবে।
গতকাল বুধবার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড নীলেরপাড়, বাঙালগাছ, কানাইয়া এলাকায় জনসংযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। কয়েকটি ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করেন জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

জনসংযোগকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের খুনির ভাইকে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে। বিএনপি খুনির পরিবারকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় বিএনপি সংঘর্ষ এবং খুনের রাজনীতি করে। এ জন্য ভোটাররা নৌকার সঙ্গে রয়েছে। এটা জেনে বিএনপি এখন সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এদিকে বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সুত্র: দৈনিক আমাদের সময়।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৭৩৫ঘ.)