বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ আগামী শনিবার

বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ আগামী শনিবার

ঢাকা, ৫ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দলটির পূর্ব ঘোষিত আজকের প্রতিবাদ সমাবেশ আগামী শনিবার বেলা ২টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

তিনি বলেন, বিশেষ কারণে আজকের কর্মসূচি পরিবর্তন করে শনিবার নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যথাসময়ে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। একই দাবিতে আগামী ৯ জুলাই সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালিত হবে। প্রতীকি অনশন ওই দিন সকাল ৯টা থেকা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।

ইতোমধ্যে ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-রমনায় এবং ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে উক্ত প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালনের জন্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। ঢাকায় দুই স্থানের মধ্যে যেকোন একটিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালিত হবে।

রিজভী আহমেদ বলেন, আজও দুই মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনার নির্দেশে সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যাঙ্গারু আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী রাখার পর এখন তার সকল জামিনযোগ্য মামলায় বাধা দিচ্ছে সরকার। আইন, আদালত, বিচার ও প্রশাসনসহ সবকিছু করায়ত্ত করে আওয়ামী লীগ দম্ভে ও গর্বে আত্মস্ফীত হয়ে উঠেছে। ন্যায়বিচারকে তারা বিলীন করে এক জড়ীভূত পরিবেশ তৈরী করেছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নতুন নতুন নীলনকশা তৈরি করছে সরকার। অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ আদালতকে সরাসরি ব্যবহার করছে বলেই জনগণ বিশ্বাস করে। এজন্য বেগম খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে আরো নতুন নতুন গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে সরকার। একের পর এক বেগম খালেদা জিয়ার জামিনযোগ্য মামলায় জামিন না দেওয়া সরকারের মনোবাসনা পূরণেরই বর্ধিতপ্রকাশ।

তিনি বলেন, জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত কারাগারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলেও, এমনকি তার ব্যক্তিগত ও মেডিকেল বর্ডের চিকিৎসকরা বার বার উন্নত চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করলেও সরকার তা অগ্রাহ্য করে তার অসুস্থতাকে চরম অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর সেজন্যই তারা বেগম জিয়ার পছন্দানুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে সুচিকিৎসার দাবী প্রত্যাখান করছে। আমি আবারও দলের পক্ষ থেকে সরকার ও সরকার প্রধানের এধরণের ঘৃন্য আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দেশনেত্রীর সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে জনগণ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এখন আর বেশী ঐক্যবদ্ধ এবং অগ্রগামী।

এদেশে গণতন্ত্রের-জমি এখন সম্পূর্ণভাবে বেদখল। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখতে পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের নগ্নভাবে ব্যবহার করছে আর্ন্তজাতিক খেতাবপ্রাপ্ত স্বৈরাচারী সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর থেকে অবৈধ সরকার জনআতঙ্কে ভুগছে। একমাত্র সরকার দলীয় কর্মকাণ্ড ছাড়া আর কাউকে সভা-সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে যেভাবে ছাত্রলীগ ও পুলিশের নির্যাতন ও নিপীড়ণের শিকার হচ্ছে, যেভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক ও উদ্বিগ্ন অভিভাবকদেরকে পুলিশি তান্ডবের শিকার হতে হয়েছে, যেভাবে শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হয়েছে-ছাত্রলীগের এসব তান্ডব লগি-বৈঠারই পূনরাবৃত্তি বলে দেশবাসী মনে করে। প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এবারে অবৈধ ক্ষমতার বিবর্তনে ছাত্রলীগ ভয়াল প্রেতাত্মা হয়ে ভীষণ মূর্তি ধারণ করেছে।

তিনি আরো বলেন, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আগ্রাসী থাবায় সারাদেশই এখন বধ্যভূমি। গুম, খুন, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গ্রেফতার, নির্যাতন ও দলীয় সন্ত্রাসীদের তান্ডবই হলো এখন শেখ হাসিনার টিকে থাকার অবলম্বন। গণমাধ্যমে প্রকাশ গুম ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ভয়ে ক্যাম্পাসে যেতে পারছেন না। অথচ গতকাল জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা শিক্ষার উন্নয়নের আষাঢ়ে গল্পের যে লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন, যেটির সাথে বাস্তবতা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ এই সরকার শিক্ষার কোন উন্নয়ন করেনি বরং শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, নকলের উন্নয়ন হয়েছে, প্রশ্নফাঁসের উন্নয়ন হয়েছে, প্রশ্নপত্রের উত্তর না লিখেও পরীক্ষা দিলেই পাশ করিয়ে দেয়ার উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে মেধাবীদের স্থান না দিয়ে দলীয় ক্যাডার নিয়োগ দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে নিম্নগামী করার উন্নয়ন হয়েছে, ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রী লাঞ্ছনার উন্নয়ন হয়েছে। চানক্য ও মেকিয়াভ্যেলির নীতিই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নীতি, তার কাছে ন্যায়-অন্যায়-আইন-বিবেক ইত্যাদির কোনো স্থান নেই। সকল শিক্ষাঙ্গনগুলোতে এখন ছাত্রলীগ ও পুলিশের তান্ডবে বিভিষিকাময় অবস্থা বিরাজ করছে। গত পরশু দিন পুলিশ প্রতিবাদকারিদের ঠেকাতে যেভাবে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছিল তাতে মনে হয়েছে তারাই যেন মানববন্ধন করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে গতকালও প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি তাদেরকে কি সবক দিয়েছে তা আল্লাহ মাবুদই জানেন। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে রক্তাক্ত করার বীরত্বে তাদেরকে একইভাবে আগামী নির্বাচনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের উক্ত বৈঠক নতুন করে প্রতিবাদকারিদের রক্ত ঝরাতে তাদের আরও উৎসাহিত করবে। কিন্তু যতো অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ণ ও জেল-জুলুম চলুক না কেন যৌক্তিক আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যায় না।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৭৩০ঘ.)