ঢাকা, ৮ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : অতীতে যেভাবে স্বৈরাচার পতনে আন্দোলন করা হয়েছে সেভাবে নেতা-কমীদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কোন স্বৈরাচার সরকারকে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে নামানো যায় না। এর আগে এরশাদের যেদিন পতন হয়েছিল সেদিনও তিনি একটি জনসভায় গিয়েছিলেন। ব্যাপক শো-ডাউন ও প্রতাপ নিয়েই গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণের আন্দোলনের কাছে টিকে থাকতে পারেনি।
তিনি বলেন, জনগণ মাঠে নামলে আজকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনাও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নাই। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার বিষয় আছে। কে কিভাবে যাবে বলা যায় না। সত্য প্রতিষ্ঠিত হতে একটু সময় লাগলেও যেকোন সময় তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সত্য কখনো মিথ্যার স্রোতে ভেসে যায় না। দেশটা জনগণের। সেই জনগনের বেদখল হলেই সমস্যা। আওয়ামী লীগের দখলে গেলেই সমস্যা।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের কোন আদর্শ নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাই সব। ক্ষমতায় থাকলে তাদের আয়-বরকত বাড়ে। ক্ষমতা না থাকলে তাদের কিছু থাকে না। তারা ক্ষমতায় গেলে জনগণের কিছু হয় না, জনগণ কিছু পায় না শুধু নেতারা পায়। আর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নেতারা কিছু পায় না, জনগণ পায়। বিএনপির নেতারা আদর্শ বিক্রি করে না। আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে তাদের সাধারণ ভোটাররাও অস্বস্তিতে আছে। তাদের মধ্যে অপমান বোধ আছে।
খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রগুলোতে এ পজেটিভ লোকজনে ভরপুর ছিল। তারা জালভোটের মহাউৎসব করেছে। সেখানে ভোটারদের মধ্যে কেউ ভূয়া ভোটার কিনা সেটা যিনি চেক করবেন তিনিও এ পজেটিভ। যাকে চেক করবে সেও এ পজেটিভ। এ পজেটিভে সয়লাভ ছিল। কারণ বি পজেটিভ ভোটার কেউ কেন্দ্রে যেতে পারেনি। বি পজেটিভ কোন নির্বাচনী কর্মকর্তা বা এজেন্টও রাখা হয়নি।
তিনি বলেন, এখন দেশে কেউ গুলিতে নিহত হলে তার খোঁজ পাওয়া যায় না। কিন্তু একটা সময় ছিল কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলে লাশের কফিন কাধে নিয়ে মিছিল হতো। রাস্তা দিয়ে যখন লাশ কাধে কোন মিছিল হতো তখন রাস্তার পাশ থেকে সাধারণ মানুষ সেই মিছিলে অংশ নিতো। সেভাবে দাবি আদায় হতো। কিন্তু এখন গুলিতে কেউ নিহত হলে তার লাশটাই পাওয়া যায় না। তাহলে কিসের কফিন নিয়ে মানুষ মিছিল করবে?
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজ হঠাৎ করে যদি বেগম খালেদা জিয়া স্বপ্নে দেখেন কোন হুজুরের পানি পড়া খেলে তার অসুস্থতা ভালো হয়ে যাবে তাহলে সেই হুজুরের পানি পড়া এনে খাওয়ানো সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হয়ে পড়ে। কিন্তু আজ তার চিকিৎসার বিষয়ে যারা আইন দেখায় তারা বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মারার চক্রান্ত করছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারেক রহমানের মা এখন জেলখানায়। নিজে বিদেশে। এখন আপনারা কেউ কেউ বলেন ভাইকে একটু বলেন আমার কমিটিটা দিয়ে দিতে। আমার কমিটিটা ছোট হয়ে গেল। যেখানে মা জেলখানায় সেখানে খাবার টেবিলে বসে মাছ ছোট না বড় হল সেটা নিয়ে মরামারি করা কোন ভালো মানুষের কাজ না। মায়ের মুক্তির জন্য আন্দোলন করুন। আগে তাকে জেলখানা থেকে মুক্ত করুন।
কোটা সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন করছে কোটা সংস্কারের দাবিতে। আন্দোলন যখন একটা যৌক্তিক পর্যায় চলে গেল তখন জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিলের ঘোষণা দিলেন। কিন্তু ছাত্ররা আন্দোলন করেছে কোটা কিছু কমানোর জন্য। পুরো বাতিল করার জন্য নয়। কারণ কোটা বাতিল করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। নতুন আইন তৈরী করতে হবে। আর সরকার পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল ঘোষণা করল। এখন আবার তা পালন করছেনা। ঘোষণাই যদি করলেন তাহলে পালন করতে সমস্যা কোথায়।
সংগঠনের সভাপতি সোহেল রানার সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।
(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৬৩৩ঘ.)