খালেদা জিয়ার মামলার সব ডকুমেন্ট ‘ওভাররাইটিং-ঘষামাজা’: যুক্তিতর্কে দাবি

খালেদা জিয়ার মামলার সব ডকুমেন্ট ‘ওভাররাইটিং-ঘষামাজা’: যুক্তিতর্কে দাবি


ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান বলেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় যত ডকুমেন্ট এসেছে তার সবই ‘ওভাররাইটিং-ঘষামাজা’। সব সাক্ষীরাই বলেছেন, তারা জানে না এগুলো (ওভাররাইটিং-ঘষামাজা) কে করেছে। ঘষামাজা, ঘষামাজা আর ঘষামাজা দিয়েই চলছে এই মামলা।

তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার একটি রাজনৈতিক জীবন রয়েছে। সেখানে কলঙ্ক দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা অপপ্রয়াস মাত্র, এটা কোনো দিনই সফল হবে না। সার্বিকভাবে এটি একটি যুক্তিহীন মামলা।

বুধবার রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী এসব কথা বলেন।

এ দিন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় আদালত বৃহস্পতিবার পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেন। এ দিন একই আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল মামলার শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।

বুধবার দুই মামলায় হাজিরা দিতে বেগম খালেদা জিয়া বেলা ১১টা ৭ মিনিটে এজলাসে প্রবেশ করেন। ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে প্রবেশ করলে অনুমতি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া নির্ধারিত আসন গ্রহণ করেন। এর পরই বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থান কার্যক্রম শুরু হয়।

আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে আবদুর রেজ্জাক খান বলেন, পত্র-পত্রিকায় কী লিখেছে- তা আমরা দেখতে চাই না। রাস্ত-ঘাটে কী স্লোগান দেয়া হচ্ছে- তা আমরা শুনতে চাই না। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে যত কোলাহলই থাক না কেন, এই বিচারাঙ্গনে তা প্রবেশ নিষেধ।

তিনি বলেন, দুদকের আইনজীবীর পক্ষ থেকে মামলা প্রমাণিত হয়েছে বলে সর্বোচ্চ সাজা দাবি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হলে সর্বোচ্চ কমপ্লায়েন্স দরকার। কিন্তু কীভাবে বেগম খালেদা জিয়া সম্পৃক্ত হলেন- কিছুই এখানে নেই। এফআইআর ও চার্জশিটে ঘটনাস্থল ও ঘটনার তারিখ- কিছুই মিল নেই।

আবদুর রেজ্জাক খান বলেন, ফৌজদারি আইনে বিচারে ৪০৯ ধারার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এখানে অর্পিন করা বা গচ্ছিত করা হয়েছে- এ ধরনের কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি প্রসিকিউশন। ৪০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার কোনো উপাদান চার্জের মধ্যে সন্নিবেশিত হয়নি। এই চার্জ ডিফেক্টিভ। কোনো সাক্ষী আদালতে বলেননি যে, বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অর্গানোগ্রাম ও সাক্ষীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বহু সচিব চাকরি করতেন। অনেক পরিচালক পদমর্যাদার লোকজন চাকরি করতেন। তারা কেউই এই মামলার সাক্ষী নন। এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়া আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কোনো অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেছেন বা পরিচালনার জন্য কাউকে নোটশিটে আদেশ দিয়েছেন-এমন কোনো নোটশিট আদালতে উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে প্রসিকিউশন।

দুপুর ১টা ৩৭ মিনিটের দিকে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে এ দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থান শেষ হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেল ট্রাস্ট মামলায় আদালতে দুটি আবেদন দাখিল করেন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

এর একটি হলো সাফাই সাক্ষী উত্তোলন করা ও অপরটি লিখিত আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য না দিয়ে তা মৌখিকভাবে উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া।

আদালত শুনানি শেষে দুই আবেদনই নাকচ করেন। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাস ত্যাগ করলে এরপর বেগম খালেদা জিয়াও আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

বেগম খালেদা জিয়ার হাজিরা উপলক্ষে এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল কবির রিজভী, মির্জা আব্বাস, আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।

এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, মো. জিয়াউদ্দিন জিয়াসহ শতাধিক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় প্রথম মামলাটি দায়ের করা হয়। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় দ্বিতীয় মামলাটিও দায়ের করে দুদক।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৮৪০ঘ.)