প্রধানমন্ত্রী কোটা নিয়ে ইউটার্ন করেছেন : মির্জা আলমগীর

প্রধানমন্ত্রী কোটা নিয়ে ইউটার্ন করেছেন : মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ১৮ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইউটার্ন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকেরা ন্যায়সঙ্গত কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছিলো। প্রধানমন্ত্রী সংসদে রেগে-মেঘে বলে দিলেন, কোটা থাকবে না। আপনি(প্রধানমন্ত্রী) এখন ইউটার্ন করেছেন। ইউটার্নে বলেছেন- হাইকোর্টের রায়ের বাইরে তিনি যেতে পারেন না। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে কী আছে? এটি পর্যবেক্ষণ, ওইটা রায় নয়। আপনি তো হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণকে এড়িয়ে গেলেন।

বুধবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ-বিএসপিপি আয়োজিত মানববন্ধনে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধনী যখন বাতিল করা হলো তখন সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনী ব্যবস্থা রাখালেন। যেটাতে আপনার সুবিধা সেটাতে আপনি আদালতকে ব্যবহার করছেন, যেটাতে সুবিধা নেই সেখানে করছেন না। আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, কোটা নিয়ে বা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছি না। আমরা যেটা সত্য তা জনগণের সামনে তুলে ধরছি। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে সত্যকে প্রকাশিত করা, জনগণের সামনে তুলে ধরা। তিনি বলেন, আপনারা(সরকার) এতো বড় হয়ে গেছেন, এতো দাম্ভিক হয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেতা তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে আটকিয়ে রেখে তাকে কোনো চিকিৎসা সেবা পর্যন্ত দিচ্ছেন না।

মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা যখনই বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কথা বলছি তখনই সরকার বলছে- না সব ঠিক আছে, তার কোনো অসুখ নেই। এই চরম মিথ্যা কথা আপনারা বলছেন। আইনজীবী, চিকিৎসক, পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে দিচ্ছেন না, আমাদের কথা বাদই দিলাম। আমাদেরকে পুরো জাতিকে এ বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। বাস্তবে রাজনীতি থেকে, নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখার জন্যই সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি ন্যুনতম আইনি সুযোগ পাচ্ছেন না। মূল মামলায় জামিন পেলেও এখন একটার পর একটা মিথ্যা মামলা সামনে এনে তার মুক্তি বিলম্ব করা হচ্ছে। সরকারের অভিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আবারো একটি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখা। সরকার সেই পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে চায় যতদিন না তারা অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।

নির্বাচনের নামে তামাশা
সরকার নির্বাচনের নামে দেশে তামাশা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেছেন, দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা আর নেই। এটা এখন খেলা খেলা তামাশা চলছে। তারপরও আমরা তামাশায় যাচ্ছি। জনগণ চায় আমরা সে নির্বাচনে যাই, জনগন চায় আমরা তাদের উন্মোচিত করি। মির্জা আলমগীর বলেন, রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের মিটিংয়ে বোমা মারলো। তারপর সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমতাসীনরা বলল, আমরা মারিনি। ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না- অবস্থা করে আপনারা প্রমাণ করে আপনারাই মেরেছেন, আপনারাই নির্বাচনকে বিতর্কিত করছেন। বিএনপি মহাসচিব এটা মনে রাখতে হবে এই যাওয়াটাই স্থায়ী নয়। বাংলাদেশের জনগণ রুখে দাঁড়াচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ রুখে দাঁড়াবে। ঐক্য হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। একটি মাত্র ইস্যুতে আমরা ঐক্য চাই- বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যা দিয়ে জনগণ পরবর্তী সরকার গঠন করবে এবং সংকটের সমাধান হবে।

অর্থনীতি ফোকলা করেছে সরকার
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা দেখুন- সরকার দুর্নীতির কোনো পর্যায়ে চলে গেছে। আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ঘটনা উঠে এসেছে- ভল্টের মধ্যে সোনার বদলে রাখা হয়েছে ধাতব মুদ্রা। সেখানে অর্নামেন্টগুলো বদলিয়ে দিয়ে রাখা হয়েছে নকল জিনিসপত্র। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বহু টাকা হ্যাকিং করে নিয়ে চলে গেলো যার প্রতিবেদনটা আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। কারণ অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের হাত নাকি অনেক লম্বা। মির্জা আলমগীর সরকারের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশকে আপনারা অর্থনীতির দিক থেকে সম্পূর্ণ ফোকলা করে দিয়েছেন। মাইক্রো ইকোনোমি সিস্টেমকে আপনারা শেষ করে দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে অর্থনীতির সাবেক প্রফেসর মির্জা আলমগীর বলেন, দেশে এখন মানবাধিকার বলুন, মানুষের মৌলিক অধিকার বলুন, গণতান্ত্রিক অধিকার বলুন- সব শেষ। মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করে তারা (সরকার) একটা ধোঁয়া তুলেছেন, এখন নাকি বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সবল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার প্রমাণ হচ্ছে- প্রতিদিন এখানে রেমিটেন্স কমছে, বিনিয়োগ কমছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জনগণের পকেট থেকে পয়সা কেটে দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প চালাচ্ছেন। ওইসব প্রকল্পে লাভ হচ্ছে শুধু আপনাদের। তিনি বলেন, মঙ্গলবার একটি রাজনৈতিক দলের নেতা একটা ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেখানে তিনি বলেছেন, প্রতিমাসে এখানে লাখ হাজার কোটি টাকা পাঁচার হয়ে যাচ্ছে। এই টাকা কোত্থেকে আসছে? এই টাকা জনগণের পকেট থেকে আসছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই পদ্মাসেতু প্রকল্প এখন ১০ গুণ বেড়েছে। প্রত্যেকটি প্রকল্পই এভাবে বাড়ছে আর বাড়ছে। আর এখন আপনাদের বিদেশে সকলের বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সুইস ব্যাংকের একাউন্টের সংখ্যা বাড়ছে। কী রেখেছেন, এদেশের জন্যে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর
দেশের মানবাধিকার ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া সম্প্রতিক বক্তব্যকে হাস্যকর বলে অভিহিত করেছেন মির্জা আলমগীর। তিনি বলেছেন, আপনারা(সরকার) আজকে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হাস্যকর একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন। কালকেও (মঙ্গলবার) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এখানে নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না, একটাও নাকি এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হয় না। এটা শুনে তো মানুষ হাসবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুরনো ঢাকার ঘোড়ার গল্প আছে- জানেন তো। একবার সওয়ারি ভাড়া কম বলায় কোচোয়ান বলেছিল, আপনার কথা শুনলে ঘোড়াও হাসবে। এদেশের অবস্থা এখন তেমনটিই হয়েছে। বৃটিশ মানবাধিকার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, মঙ্গলবার এই প্রতিবেদনটি বেরিয়েছে। সেখান পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম, হত্যাকাণ্ড ও রাজনৈতিক নির্যাতন বেড়েছে। প্রতিবেদন বলা আছে, মিডিয়ার ওপরে চাপ আগের চেয়ে অনেক বেশি। এসব কথার একটাও মিথ্যা নয়। প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশী সংস্থা থেকে পরিস্কার করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ক্রমশই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের স্পেস সংকুচিত হয়ে আসছে।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, আজকে দেশের স্বাধীনতা চলে গেছে। এই স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে আমাদের দিল্লীর সঙ্গে লড়াই করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ও জনগণের মুক্তি আজকে একাকার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগেও বলেছি, এখনো বলছি, কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ঘটবে না। কারণ দেশের বিচার বিভাগ একেবারে আওয়ামীকরণ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে এই বিচারবিভাগ তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে থাকে। কাজেই সকলকে আমি বলব, বৃহত্তর লড়াইয়ের দিকে আপনারা মনোযোগী হোন। সংগঠনের সদস্য সচিব প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আখতার হোসেন খান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, জাকির হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, ড্যাব নেতা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কৃষিবিদ রিয়াজুল ইসলাম রিজুসহ মানববন্ধনে শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২৫৬ঘ.)