ড.কামাল-বি. চৌধুরীর জোট, একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা

ড.কামাল-বি. চৌধুরীর জোট, একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা

ঢাকা, ২৯ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ কথা জানান বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ঢাকার বেইলি রোডে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসায় ‘জাতীয় ঐক্য’র বিষয়ে বৈঠক শেষে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে একসঙ্গে আমরা কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই লক্ষ্যে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা পরবর্তী কর্মসূচি বিষয়ে জানাবে। তবে বৈঠকে বিএনপির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

ওই কমিটির চার সদস্য হলেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারা মহাসচিব আবদুল মান্নান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ও নাগরিক ঐক্যের নেতা জাহিদুর রহমান।

এর আগে রাত আটটার দিকে ড. কামাল হোসেনের বাসায় ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার লক্ষ্য বৈঠকে বসেন যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতারা। তাদের সঙ্গে ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। বৈঠকে ড. কামাল হোসেন এবং যুক্তফ্রন্টের তিন দল বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব আবদুল মান্নান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে জোট বেঁধে দেশব্যাপী জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরাম নেতারা। একই সঙ্গে তারা দাবি আদায়ের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে একমঞ্চ থেকে অভিন্ন কর্মসূচি দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মধ্য সেপ্টেম্বর থেকেই মাঠে নামবেন নতুন এ জোট নেতারা। প্রণয়ন করা হবে অভিন্ন রূপরেখা। এক্ষেত্রে যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে উত্থাপিত সাত দফাকে গাইড লাইন হিসেবে ধরা হবে। কর্মসূচি প্রণয়নে চার সদস্যের একটি সাব-কমিটিও গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দু’পক্ষের শীর্ষ নেতারা।

রাতে প্রায় ২ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরামের সভাপতি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য এ সভায় আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

সাবেক এ রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘এ লক্ষ্যে পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য আমরা একটি সাব-কমিটি গঠন করার ব্যবস্থা নিয়েছি। দ্রুত তারা এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে জানাবেন।’

রাত ৭টা ৫০ মিনিটে বি. চৌধুরী বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় আসেন। বৈঠক শেষে তারা বেরিয়ে যান রাত ১০টা ১০ মিনিটে। ড. কামাল হোসেন বাসার ফটক থেকে বেরিয়ে গাড়ি পর্যন্ত এসে বি. চৌধুরীকে বিদায় জানান।

ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গত কয়েক মাস ধরেই জাতীয় ঐক্যের কথা বলে আসছিলেন ড. কামাল হোসেন। একই দাবি জানিয়ে আসছে যুক্তফ্রন্টও।

অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও বৃহত্তর ঐক্য গড়ার কাজ করে আসছে। এ নিয়ে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা দফায় দফায় যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরাম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। এসব বৈঠকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ে সবাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। পাশাপাশি বি. চৌধুরী এবং ড. কামাল হোসেনের মধ্যকার ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। এর আলোকেই কয়েক দফা বৈঠক শেষে একসঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরাম।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে সাতটি প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবে বলা হয়- জাতির ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় স্বার্থে জামায়াতে ইসলামী ব্যতিরেকে সমমনা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোর ঐক্য জরুরি। বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সভা-সমিতির স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা। রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করার জন্য সংসদ ও সরকারের ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া এবং প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো দলের কর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না এবং তফসিল ঘোষণার আগে সব ছাত্র-ছাত্রী ও রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

একই ভাবে গণফোরামের পক্ষ থেকেও সাত দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়- চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনের সময় সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে সাজানো প্রভৃতি। বৈঠকে এসব বিষয়ে একমত হন যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম নেতারা। তারা দু’পক্ষ থেকে উত্থাপিত সাত দফাকে সামনে রেখে অগ্রসর হওয়া এবং একটি অভিন্ন রূপরেখা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/১০০৭ঘ.)