এক মঞ্চে বিরোধী নেতারা

একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাই না

একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাই না

ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : নাগরিক ঐক্য আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের প্রয়োজনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বক্তারা আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিরোধিতা করেন।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘ইভিএম বর্জন, জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক জোট’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে বিকল্প ধারার সভাপতি সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, এখন বলা হচ্ছে উন্নয়নের গণতন্ত্র। উন্নয়ন থাকলে গণতন্ত্র থাকবে না। এটা কী। আমরা উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চাই। আজ ঘরে বা রাজপথে কোথাও নিরাপত্তা নেই।

কখন ধরে নিয়ে হাতুড়ি পেটা করা হবে তার ঠিক নেই। গণতন্ত্রহীনতা দেশের মানুষ অনেক সহ্য করেছে। আর নয়। আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করবো। তবে এক স্বৈরাচারকে বিদায় করে অন্য স্বৈরাচারকে আমরা আনব না। তা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মানুষ আশা নিয়ে শুনে। কিন্তু তার কথায় অবহেলা, অবজ্ঞা রয়েছে। তা শুনে মানুষ দুঃখ পায়। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসলে জিয়াউর রহমানকে ঘৃণা করতে হবে কেন? শ্রদ্ধা করে কেউ ছোট হয় না। আবার ঘৃণা করে কেউ বড় হয় না।

সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তলোয়ার ও লাঠি দিয়ে নিরাপদ সড়ক ও কোটা আন্দোলনকারীদের মারা হয়েছে। এটা কী রাজনীতি? আশ্চর্য হই। প্রধানমন্ত্রী বার বার গণতন্ত্রের কথা বলেন। সে গণতন্ত্র অবশ্য তার দলে আছে। তার মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতাকর্মীরা কথা বলতে পারে। গালিগালাজ করতে পারে। তার দলেই গণতন্ত্র আছে। বিরোধী দলের জন্য গণতন্ত্র নেই। তাদের চাপাতি আছে, লাঠি আছে।

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন নির্বাচনে ইভিএম হবে না। তাহলে আপনার কথা ছাড়া, অনুমতি ছাড়া কি তা কেনার বন্দোবস্ত হয়েছে? ইভিএম হবে না। ইভিএম নেভার। দেশের মানুষ রাজশাহী ও খুলনার মতো নির্বাচন আর মেনে নেবে না। সরকারি দল ও দলের নেতাকর্মীরা দুর্নীতি না করলে দুর্নীতি ৯০ ভাগ কমে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনায় সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, যখন জাতি সংকটের মধ্যদিয়ে অতিক্রম করে তখন ঐক্যের প্রয়োজন হয়। দলমত নির্বিশেষে দেশের জন্য সবাই কাজ করে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছতাসহ আমরা আগেই সাত দফা দাবির কথা জানিয়েছি। সেই দাবিগুলো নিয়ে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সংবিধানে জনগণকে সরকারের মালিক বলা হয়েছে। জনগণ ক্ষমতার মালিক মানে এখানে আর কোনো বিভেদ থাকার কথা নয়।

ঐক্যের ডাক দিয়ে ড. কামাল বলেন, আমরা ঐক্যে বিশ্বাস করি। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাই না। ঐক্য হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আসুন সংবিধানের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হই। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ চাই। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের আন্দোলনে জাতি মুক্তি পাবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের অধিকার হরণ করেছে। আবার অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নীল নকশা এঁকেছে। যে কারণে বিতর্কিত ইভিএম চালু করার চেষ্টা করছে। ইভিএম পৃথিবীর সব দেশে বাতিল করা হয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশেই এখন ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় না। এই সরকার এখন ইভিএম দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না। দেশের প্রয়োজনে জাতির প্রয়োজনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আসুন আমরা ন্যূনতম কর্মসূচির মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে রুখে দিই। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে তার মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করছে। এটা সম্পূর্ণ সংবিধান বহির্ভূত।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, রাজনৈতিক দলের বক্তব্য হলো, যা জনগণ বলতে না পারে তা তুলে ধরা। জনগণ চায় এই সরকার ক্ষমতায় না থাকুক। তাই এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। সব পেশাজীবীসহ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র হয়েছিল সেনানিবাসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি সংবিধান মানেন তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা কারাগারে চালাতে হবে কেন। তা তো সংবিধানের ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। শুধু হিংসা, ক্ষোভে এসব করা হচ্ছে। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে বর্জন হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে বর্জন হয়েছে। গরু, ছাগল, ঘোড়া যে মার্কায় চাপ দেবেন সব নৌকায় যাবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোনো সরকার কি কখনও বলে যে, বিরোধী দল আন্দোলন করতে পারে না। কোনো সরকার কি আন্দোলন করতে বলে?

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ১০০ বছরের পরিকল্পনা করছেন কেন। আর কত দিন বাঁচবেন। এখন ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগে জনসভা করার জন্য অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। সংবিধানে তো সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নেয়ার বিধান নেই। অনুমতি নিতে হবে কেন। স্বৈরাচারের পতনের জন্য আর বিলম্ব না করে মাঠে নামার আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার জুলুমবাজ, চোর। সব লুটেপুটে খাচ্ছে। শেয়ারবাজার দিয়ে শুরু। একে একে ব্যাংক, কয়লা, গ্যাস, পাথর, পানি সব খেয়েছে। আমি আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীকে দেখে কাঁদি। এক সময় গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলাম। কিন্তু এখন টাকার পর ভোট চুরি করছে। ভোটের নামে একটি নাটক করে আমি তো ক্ষমতায় থাকতে পারি। তাই ধরে নিয়েছে। সিটি করপোরেশনে ভোট চুরি করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, সবাই এখন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এই দাবি নিয়ে সবাই একসঙ্গে রাজপথে নামব। শক্তিধর বাহিনীও এক সময় ধীরে ধীরে ফনা নামাবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা মোঘল সম্রাট বা রাশিয়ার জারেরও তত ক্ষমতা ছিল না। চলমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিগগিরই বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ইভিএম অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। বিশ্বে ইভিএম গ্রহণের চেয়ে বর্জন হয়েছে বেশি। জার্মানি এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ইভিএমে দুর্নীতি ধরা কঠিন। ইভিএম মানে ভোট গুম। যন্ত্রের পেছনের মানুষগুলো নিরপেক্ষ না থাকলে ইভিএমের ফল নির্ভুল হবে না। ইভিএমে মানুষকে আরো উস্কে দেয়া হচ্ছে। আমার ভোট যেন কাউন্ট না হয় সে ব্যবস্থা হচ্ছে। ১৯৭১ সালের সবচেয়ে বড় চেতনা হচ্ছে মানুষের সরকারই ক্ষমতায় থাকবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, অপজিশন না থাকলে গণতন্ত্র হয় না। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল। আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। একটি ইস্যুতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব অপচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৪১৪ঘ.)