দেশবাসীকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান বিএনপি নেতাদের

দেশবাসীকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান বিএনপি নেতাদের

ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : কারান্তরীণ দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বড় ধরণের কর্মচূচি আসছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতারা দেশবাসীকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত অনশন কর্মসূচিতে তারা এ আহ্বান জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ সংহতি জানিয়ে অনশন ভাঙান।

অনশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। অবিলম্বে তার মুক্তি দিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার দাবি জানাই। তার নেতৃত্বেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মিথ্যা মামলায় বেগম জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করেছে। তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত দিচ্ছে না। জামিনের পরও তার মুক্তি দিচ্ছে না। আমরা বলবো ৫ জানুয়ারি মার্কা আর কোনো নির্বাচন জনগণ হতে দেবেনা। আজকে আওয়ামী বাক্সে গণতন্ত্র বন্দি।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে সব দল ঐক্যবদ্ধ। তারা সবাই গণতন্ত্রের মা বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চায়। গোটা দেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। তফসিলের আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে, সেনা মোতায়েন করে ইসি পুনর্গঠন করে এবং সরকারের পদত্যাগ করেই আগামী নির্বাচন হতে হবে।

তিনি বলেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলবো কেবল সরকারের নির্দেশে নয় নিরপেক্ষভাবে কাজ করুন।

ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এই মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অপরিহার্য। আজ গণতন্ত্র ভূলুন্ঠিত। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। মামলা প্রত্যাহার ও নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সামরিক বাহিনীর হাতে দিতে হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় অনশনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, আলতাব হোসেন চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহাজাহান, আতাউর রহমান ঢালী, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জাগপার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।

মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের সময় শেষ আসছে। আপনারা অপেক্ষা করুন, এমন কর্মসূচি দেয়া হবে যে আন্দোলনে সরকারের নৌকা ভেসে যাবে। আজকে খালেদা জিয়ার মুক্তি রাজপথের আন্দোলনেই সম্ভব। সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। আমরা সফল না হওয়া পর্যন্ত কেউ ফিরে যাবো না।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলখানায় তিলে তিলে মেরে ফেরার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা আদালতের রায় মানি না। তাকে মুক্তি দিতে হবে। সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করেই তার নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। কারণ বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি হবেও না।

ড. মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে বিরোধী দল ধ্বংস করছে। ভেবেছিল বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে। কিন্তু এ দেশের মানুষ তাদের নেত্রীকে মুক্ত করেই আগামী নির্বাচনে যাবে।

নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে অনশন
ওদিকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশন পালন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি গত ২৯ জানুয়ারি হতে দলীয় কার্যালয়ে কার্যত গৃহবন্দী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে রয়েছেন। সেখানে ছোট একটি কক্ষে কাটছে তার সময়। যদিও এই সময়ের মধ্যে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অন্তত ১০ দিন রাজধানীর একাধিক স্থানে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন রিজভী আহমেদ। তার সাথে অনশন করেন দলের সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেনসহ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এদিকে বিএনপির অনশন কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে।

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি এক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তার মুক্তি দাবিতে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। সর্বশেষ তার মুক্তির জন্য গত শনিবার সারাদেশে প্রতিবাদ মিছিল এবং সোমবার সারাদেশে মানববন্ধন করেছে বিএনপি।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১২৫৫ঘ.)