ঐক্যের পথে আমরা একধাপ এগিয়ে : মির্জা আলমগীর

ঐক্যের পথে আমরা একধাপ এগিয়ে : মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে নতুন পথ দেখাচ্ছেন ড. কামাল। তিনি তার ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আজকে জাতির এই চরম দুর্দিনে তিনি মুক্তির একটি পথ দেখিয়ে জনগণকে সামনে নিয়ে আসলেন। এ জন্য ড. কামাল হোসেনকে ধন্যবাদ। একই সঙ্গে সবাইকে এই আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

শনিবার বিকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী (খালেদা জিয়া) কারাগার থেকে আমাদের খবর পাঠিয়েছেন যে কোনো মূল্যে আজকে ঐক্য তৈরি করে এই সরকারকে সরাতে হবে। আমার কী হবে, না হবে সেটার একটা ব্যবস্থা হবে।

সমাবেশের প্রধান বক্তা বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে যদি আমরা সরিয়ে দিতে না পারি। জনগণের সরকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, জনগণের ঐক্যের সরকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি তাহলে এই দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের আন্দোলন শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় নেতাদের কাছে আহ্বান জানাব- আসুন আমরা ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ে একটা আন্দোলন শুরু করি। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে এবং একই সঙ্গে সব রাজবন্দি যারা আছেন তাদের মুক্তি দিতে এবং এ দেশে একটি নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য করতে হবে। সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

মির্জা আলমগীর বলেন, এই সভার মধ্য দিয়ে ঐক্যের পথে আমরা ইতোমধ্যেই একধাপ এগিয়ে গেছি। আমরা আশা করি, দ্রুত সেই ঐক্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষকে তাদের হারিয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার বেঁচে থাকার অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য জাতীয় নেতারা একতাবদ্ধ হয়ে এই মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন। শুধু একটি কারণে সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছেন সেটা হলো পরিবর্তন দেখতে চান, এই সরকারের পতন দেখতে চান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চান।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞ আলোচকরা আজকে পরিষ্কারভাবে বলেছেন দেশে এখন দুঃশাসন চলছে। এই দুঃশাসন আমাদের স্বাধীনতার সব স্বপ্নকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে। আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে হাজার হাজার মামলা দেয়া হয়েছে ৩ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। উদ্দেশ্য একটাই এই আন্দোলন থেকে বিরত রাখা এবং আগামী নির্বাচনে জনগণ যাতে অংশ নিতে না পারে সে জন্য।

মির্জা আলমগীর বলেন, আজকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে যে দাবিদাওয়া এসেছে প্রায় সব দলগুলোর দাবি একই এসেছে। আমরা দেখেছি যে প্রধান শর্ত হচ্ছে- এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং ইভিএম পদ্ধতি কোনোমতেই এই নির্বাচনে প্রয়োগ করা যাবে না।

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে মহানগর নাট্যমঞ্চে বিকাল ৩টার দিকে শুরু হয় নাগরিক সমাবেশ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির শীর্ষ চার শীর্ষ নেতা সমাবেশে যোগ দেন। পরে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপস্থিত হন সমাবেশের প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এ সময় হাতে হাত রেখে ঐক্যের ঘোষণা দেন সমাবেশে অংশ নেয়া বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার শীর্ষ নেতারা। সমাবেশ শুরুর আগে ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হলে নাগরিক সমাবেশ কার্যত জনসভায় পরিণত হয়।

সমাবেশে অংশ নেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের- জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, গণফোরাম নেতা সাইদুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাশেমী প্রমুখ।

সভা পরিচালনা করেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব ও ফরোয়ার্ড পার্টির সভাপতি আবম মোস্তফা আমিন। আলোচনা শেষে সমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তেল গ্যাস খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৪৮ঘ.)