আওয়ামী লীগের কৌশলেই তাদের ঘায়েল করবে বিএনপি

আওয়ামী লীগের কৌশলেই তাদের ঘায়েল করবে বিএনপি

ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের দাবি না মানলে আন্দোলন করেই তা আদায় করা হবে, বলছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ। "কিভাবে দাবি আদায় করতে হয় তা আওয়ামী লীগের কাছেই শিখেছি" - বলেন তিনি।

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট যে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেছে - তার প্রথমটিই হচ্ছে 'বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের' দাবি। তাতে এটাও বলা হয়েছে যে 'নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না'।

"সারা দেশের মানুষ যেটা চায় সেটাই তো করতে হবে। সংবিধানে কি আছে সেটা বড় কথা নয়। তাহলে তো ১৯৯৪-৯৫ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কি বলেছিলেন সেটা দেখতে হবে" - বলেন মওদুদ আহমেদ।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই, এ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে - এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা কতটা হতে পারে?

বিবিসি বাংলার মিজানুর রহমান খানের এ প্রশ্নের জবাবে মওদুদ আহমেদ বলেন, "এই একই কথা সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন। তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ কথা মানেননি। সর্বদলীয় সরকারের কথা স্যার নিনিয়ান বলেছিলেন, সেটাও মানেননি - বলেছিলেন সর্বদলীয় সরকার নয় আমরা আন্দোলন করছি নির্দলীয় সরকারের জন্য। সে দাবি আদায়ের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করা হয়েছিল। আর এখন তিনি সংবিধান পরিবর্তন করে ঠিক আগের অবস্থানে ফিরে গেছেন।"

তার মানে কি বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করবে নিরপেক্ষ সরকারের অর্ধনে নির্বাচনের জন্য? দেশ কি সংঘাতের দিকে যাবে?

জবাবে মওদুদ আহমেদ বলেন, সেটাই আমরা চেষ্টা করব। আমরা তো সংঘাত করব না, সেটা সরকারের ওপর নির্ভর করবে।

"আমাদের তো একটা ঘরোয়া বৈঠকও করতে দেয়া হয় না। আমাদের কয় হাজার নেতাকর্মীকে কারাবন্দী করেছে, কয় হাজার মামলা দিয়েছে? এসব কি আপনাদের চোখে পড়ে না? আর আমাদের বলছেন, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য - যারা এখনই আমাদের কোনো স্পেস দিচ্ছে না?" পাল্টা প্রশ্ন করেন মি. আহমেদ।

"অপেক্ষা করেন একটু, আমাদের একটু মাঠে নামতে দেন। সব শান্তিপূর্ণ হবে। শুধু আমরা দেখাবো বাংলাদেশের মানুষ কি চায়, কত মানুষ আমাদের দাবির পক্ষে আছে। তা একটু সুযোগ পেলে আমরা দেখাব" - বলেন তিনি।

কিন্তু সে সুযোগ না দিলে, মাঠে নামতে না দিলে কি করবেন? জবাবে মওদুদ আহমেদ বলেন, "যদি না দেয়, তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমেই সেটা আদায় করা হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা হয়েছে - তাই হবে।"

"কি করে আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে হয় - তা তো আমরা আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই শিখেছি" - বলেন মওদুদ আহমেদ।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কিভাবে কাদের নিয়ে সেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হবে? এ সম্পর্কে এই ৫ দফা প্রণয়নকারী দলগুলোর বক্তব্য কি? তাদের সাথে একটা ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছে যে গত নির্বাচন বর্জনকারী বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপি - তাদেরই বা বক্তব্য কি?

এ প্রশ্ন করলে বিএনপির সিনিয়র নেতা মওদুদ আহমেদ বলছেন, তারা এই নিরপেক্ষ সরকারের ব্যাপারে খুবই শিগগিরই একটা রূপরেখা দেবেন।

"কিভাবে এই নির্বাচনকালীন সরকারটা হওয়া উচিৎ - এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রস্তাবনা দেবো। খুব শিগগীরই আপনারা পাবেন" - বিবিসি বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন মি. আহমেদ।

শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই এরকম সরকার হলে তা কি বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে?

এ প্রশ্নের জবাবে মওদুদ আহমেদ বলেন, না। তিনি একটি দলের প্রধান - যে দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

"তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকলে সংবিধান অনুযায়ী তার অধীনেই প্রশাসন থাকবে। সেটা ডেলিগেট করার (অন্য কারো হাতে অর্পণ করার) ক্ষমতা তো তার নেই।"

মওদুদ আহমেদ বলেন, তারা চান যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারে থাকতে পারবেন না।

"কোনো দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কোন সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন হয়নি, এবারও হবে না। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন কোনো দিনই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। এগুলো ঐতিহাসিকভাবে সত্য কথা।"

তাহলে কে থাকবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে?

"কে থাকবেন সেটা তো রাষ্ট্রপতিকে আমরা যে রূপরেখা দেবো তাতে থাকবে, আমরা উপায় বের করব।" সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০৫৫ঘ.)