পাঁচ বছরে দেশ পিছিয়েছে ৫০ বছর: আন্দালিব রহমান পার্থ

পাঁচ বছরে দেশ পিছিয়েছে ৫০ বছর: আন্দালিব রহমান পার্থ

ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে গত পাঁচ বছরে দেশ ৫০ বছর পিছিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি জানান, গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধার’ করাই এখন তাদের মূল দাবি। গণতন্ত্রের চর্চার পুনরুদ্ধার করতেই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্য’ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সোমবার রাতে বেসরকারি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন ডিবিসির টকশো রাজকাহনে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তার সঙ্গে প্যানেল আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম। ‘এ ঐক্যে কী হবে’ শীর্ষক শিরোনামের টক শোটি উপস্থাপন করেন নবনীতা চৌধুরী।

গত শনিবার ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে। সেখানে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর নেতারা অংশ নেন। ছিলেন সুশীল সমাজের সদস্যরাও।

এই সমাবেশ থেকে ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার ডাক আসে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবিতে সারাদেশে কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। একটি স্টিয়ারিং কমিটিও করেছে জাতীয় ঐক্য।

নতুন এই জোট প্রসঙ্গে আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘এ জোটের প্রক্রিয়া অনেক আগ থেকেই চলছিল। আমাদের ২০ দলীয় জোটের নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন মুক্ত ছিলেন তখন থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলাপ চলছিল। এখন পর্যন্ত এই জোটকে নির্বাচনী জোট হিসেবে অ্যাখ্যা দিতে চাই না আমি। দেশে কিছু জাতীয় সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নির্বাচনী সমস্যা। দেশে কোনো ধরনের নির্বাচন হচ্ছে না, স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত। ২০১৪ সাল থেকে নির্বাচন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।’

পার্থ বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম একটা ভালো নির্বাচন কমিশন হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি আমাদের সময় নষ্ট করলেন, নির্বাচন কমিশনও আমাদের সময় নষ্ট করলো। অথচ ইচ্ছার কোনো প্রতিফলন হলো না। এছাড়াও দেশে দুর্নীতি হচ্ছে। তাই অনেকগুলো বড় ইস্যুতে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও দল একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছেন। এখন সিদ্ধান্ত হবে এটা আসন ভাগাভাগিতে যাবে কি না। অনেকের কারও কারও বিষয়ে বক্তব্য থাকতে পারে কিন্তু আলোচনার বিষয়। তবে এটা হলো জাতীয় ইস্যুতে একটা ঐক্য।’

‘আমরা গণতন্ত্রের শুভসূচনা করলাম’
আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘গণফোরামের জন্মের পর থেকে ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়েই কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন দলের সঙ্গেই জোট করেছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গেও জোট করেছিলাম। ২০০২ সালে আমরা ১১ দলীয় জোট করেছিলাম, পরে সেই জোটে আওয়ামী লীগও যোগ দিয়েছিল। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির পাঁতানো নির্বাচন আমরা ঠেকালাম।’

সুব্রত বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে আমাদের গণতন্ত্রের স্বপ্ন একেবারেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ওই নির্বাচন হলো সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নির্বাচন। পরবর্তী সময়ে আলাপ আলোচনা করে আরেকটা নির্বাচন হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম সেটা করতে করতে পাঁচ বছর চলে গেল ‘

‘একটা আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। একদল আরেক দলের প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না। যেই দলই ক্ষমতায় থাকে তারা মনে করে আজীবনই ক্ষমতায় থাকবে, বিরোধী দলে যেতে তারা শঙ্কিত হন।’

সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি দল মনে করে তারা বিরোধী দলে গেলে এক লাখ লোক মারা যাবে। যেই সম্পদ তারা গড়েছে তা ভোগ করতে পারবে না। এটা সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যের ভাষ্য। এত আতঙ্কগ্রস্ত কেন? বিরোধী দলকে স্পেস দিতে হবে, না হলে যেকোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারে।’

‘ওই দিন জাতীয় ঐক্যের সমাবেশে অনেক দলের নেতাই গিয়েছেন, এটা অসাধারণ ঘটনা, গণতন্ত্রের শুভ সূচনা আমরা করলাম। আমাদের সংবিধানে রয়েছে সবার সমান অধিকার পাবে। কিন্তু সরকার সেটা দিচ্ছে না।’

‘গণতন্ত্রের অবনতি হলে উন্নয়ন হচ্ছে কীভাবে?’
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শত ফুল কেন কোটি ফুল ফুটলেও আমরা তাকে স্বাগত জানাবো। কিন্তু ফুলের পরিবর্তে যদি কাটা ফুটে যা জাতিকে বিদ্ধ করে এজন্য দেশবাসী আতঙ্কিত। তাদের এ যোগদান বিয়োগদানের লাভ লোকসান তারাই হিসাব করবেন, আওয়ামী লীগের কোনো লাভ লোকসান হয় না।’

তাজুল বলেন, ‘আজকে উনারা গণতন্ত্রের কথা বলছেন। দেশে যদি গণতন্ত্রের এতই অবনতি হয়, তাহলে দেশ কীভাবে এত উন্নতি করলো? পৃথিবীর যেখানেই গণতন্ত্র আছে, সেখানেই উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নতিও চলমান রয়েছে।’

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৫১৬ঘ.)