মনোমুগ্ধকর নায়াগ্রা

মনোমুগ্ধকর নায়াগ্রা

পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে, যা দেখে আমাদের মনে বিস্ময় জাগে। নায়াগ্রা জলপ্রপাত সেগুলোর অন্যতম। উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত এটি। নায়াগ্রা জলপ্রপাত প্রকৃতির এক মহাবিস্ময়। এই জলপ্রপাতের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ভ্রমণপিপাসু সব প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকের কাছে নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি একটি রোমাঞ্চকর স্থান। এখানে গেলে যে কারও মনে হতে পারে এই বুঝি আকাশ ভেঙে জগতের সব বৃষ্টি দানব আকার ধারণ করে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ছে।

জলপ্রপাতের দিকে তাকালে একদিকে যেমন ভয়ে বুক কেঁপে উঠে, তেমনি কিছুতেই এর মোহময় আকর্ষণকে উপেক্ষা করা যায় না। এ আকর্ষণই অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষকে টেনে আনে নায়াগ্রাকে ছুঁয়ে দেখার কিংবা তার ওপর হেঁটে যাওয়ার এক অদম্য বাসনায়। শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, নায়াগ্রার পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। প্রতিদিন প্রতি মিনিটে নায়াগ্রা জলপ্রপাত ৬০ লাখ ঘনফুট মাত্রাধিক জল প্রবাহিত করে। যার গড় পরিমাণ হল ৪০ লাখ ঘনফুট।

নায়াগ্রা সমগ্র নিউইয়র্ক ও ওন্টারিও-র জলবিদ্যুৎ শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস। অন্যান্য জলপ্রপাতগুলোর চেয়ে নায়াগ্রার স্রোত ঢের বেশি। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের এই স্রোতকে কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর ব্যাপক পরিমাণে তড়িৎ শক্তিও উৎপাদন করা হয়। নায়াগ্রা জলপ্রপাতে স্রোতের শব্দ এতটাই তীব্র যে, অন্য কোনো শব্দ এই স্রোতের শব্দের কারণে কানে পৌঁছায় না।

রঙধনু দেখতে আকাশের দিকে তাকাতে হয় না এখানে। মুগ্ধ পর্যটকদের দৃষ্টির খুব কাছেই জলপ্রপাতের জলরাশিতেই রঙধনু যেন নিজেই এসে ধরা দেয়। নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি আমেরিকার নিউইয়র্ক এবং কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের মধ্যবর্তী আন্তর্জাতিক সীমানার ওপর অবস্থিত। জলপ্রপাতটি বিমান, সড়ক ও রেল পরিবহন মাধ্যম দ্বারা সুসংযুক্ত হওয়ায় এই জলপ্রপাতে পৌঁছানো খুবই সহজ। এর নিকটবর্তী বিমানবন্দরগুলো হল- নিউইয়র্কের বাফেলোয় অবস্থিত বাফেলো এবং নায়াগ্রা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কানাডার ওন্টারিওতে অবস্থিত লেস্টার বি. পিয়ারসন্ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

নায়াগ্রা জলপ্রপাতের তিন ভাগের এক ভাগ আমেরিকায়। এর নাম আমেরিকান ফলস, বাকি দুই ভাগ কানাডায়। যার নাম ‘কানাডিয়ান ফলস এবং ব্রাইডাল ভিল ফলস। এটি প্রায় ১৬৭ ফুট উঁচু থেকে ২৬০০ ফুট চওড়া পানির স্রোত নিয়ে নিচে আছড়ে পড়ে। নায়াগ্রা জলপ্রপাত প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। ১৬৭ ফুট উঁচু এই জলপ্রপাত থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৬৪ হাজার ঘনফুট পানি নদীতে আছড়ে পড়ে। ১৯৫০ সালের নায়াগ্রা চুক্তি অনুযায়ী পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে জলপ্রপাতের পানি পতনের কলকল গর্জন কানে মধুর সংগীতের মতো বাজে। সব মিলিয়ে জলপ্রপাতটি বিস্ময় আর রোমাঞ্চের এক অপরূপ সৌন্দর্যের সম্ভার।

এমজে/