হোয়াইট হাউসে সংবাদসম্মেলন

লঙ্কাকান্ড: পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়া হলো সিএনএন সাংবাদিক অ্যাকোস্টার

লঙ্কাকান্ড: পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়া হলো সিএনএন সাংবাদিক অ্যাকোস্টার

ওয়াশিংটন থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী, ৮ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ): অনেকটা লঙ্কাকাণ্ডই ঘটে গেলো হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে! যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সমাপ্ত মধ্যবর্তী নির্বাচন যুদ্ধ সামাল দেবার পর যেন ছোটাখাটো মিডিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার হোয়াইট হাউস সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সিএনএন এর এক প্রতিবেদকের প্রশ্নের অনেকটা রাগ উগড়ে দেন ট্রাম্প। পুরো বিষয়টিই এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এরকম বাকবিতন্ডার জেরে হোয়াইট হাউসে সংবাদ কাভারেজের জন্য নিজের প্রেস পাস খোয়াতে হয়েছে সিএনএনের প্রধান প্রতিনিধি জিম অ্যাকোস্টারকে।

সংবাদ সম্মেলনে জিম অ্যাকোস্টা প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অভিবাসীদের একটি দল লাতিন আমেরিকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে।মধ্যবর্তী নির্বাচনে কেন বিষয়টাকে একটা ইস্যু বানানো হলো? ট্রাম্পের বক্তব্যের বরাত দিয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেন- কেন অভিবাসীদের আগ্রাসন ভাবা হচ্ছে?

জবাবে ট্রাম্প অনেকটা যেন মুখের উপরই বলে দিলেন। "আমার মতো করে দেশ চালাতে দিন। আপনার সিএনএনটা ভালো করে চালানোর দিকে মন দিন, কাজ ভালো হলে আপনার গুরুত্ব বাড়বে প্রতিষ্ঠানে।

ট্রাম্পের এমন জবাব পাবার পর এই সিএনএন সাংবাদিক এবার প্রশ্ন জুড়ে দিলেন ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে। ট্রাম্প তখন অ্যাকোস্টা দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে মন দেন অ্যালেক্সান্ডারের দিকে। কিন্তু অ্যাকোস্টা তার প্রশ্ন করা অব্যাহত রাখেন। আর তখনি কিছুটা মেজাজ হারিয়ে বসেন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট।

বেশ চড়া মেজাজে বলেন, "তোমার মতো লোক নিয়ে কাজ করার জন্য সিএনএনের লজ্জা হওয়া উচিত।"

তিনি বলেন, " আপনি কর্কশ এবং ভয়ংকর।আপনার সিএনএনে কাজ করা ঠিক না। সারাহ স্যান্ডার্সের সঙ্গে আপনার আচরণটা ছিলো খুবি বাজে। অন্যদের সঙ্গেও আপনার আচরণটা বাজে। আপনার এরকম করাটা মোটেও সাজেনা!"

বাকযুদ্ধের এ পর্যায়ে সহকর্মীর সমর্থনে এগিয়ে আসেন অ্যালেক্সান্ডার। তিনি বলেন, "আমি তার সঙ্গে চলাফেরা করি এবং ভালো করে জানি।তিনি (অ্যাকোস্টা) পরিশ্রমী সাংবাদিক, আমাদের মতোই কাজ করেন।"

এসময় ট্রাম্প বলেন, "আমি আপনাদের বড় রকমের কোন ফ্যান নই। হয়তো এখনো না!"

জবাবে অ্যালেক্সান্ডার বলেন, বুঝতে পেরেছি। তিনি যখন প্রশ্ন করতে চাচ্ছিলেন তখনি অ্যাকোস্টা আবার উঠে দাঁড়ান এবং প্রেসিডেন্ট বিরোধীদের যেসব মন্তব্য সিএনএনের কাছে রয়েছে সে প্রসঙ্গে ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ট্রাম্প তখন অ্যাকোস্টাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, "কোনো কথা না বসুন।আপনার যেসব ভূয়া সংবাদ বানান, যেটা সিএনএন বেশি বেশি করে থাকে, তারা জনগণের দুশমন।"

"তারা শুধু বিপদজনক না। তারা বিরক্তিকর, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কেউ।"

বাকযুদ্ধের এক পর্যায়ে হোয়াইট হাউসের এক নারী সহকর্মী এগিয়ে আসেন অ্যাকোস্টার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিতে। অ্যাকোস্টাও নাছোড় বান্দা! তাকে 'পারডন মি, ম্যাম' বলে আবারো প্রশ্ন করার চেষ্টা করেন।

সিএনএন সাংবাদিকের পাস বাতিল প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র সারাহ সেন্ডার্স এক বিবৃতিতে বলেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন মুক্ত মত প্রকাশে বিশ্বাসী। প্রেসিডেন্ট কিংবা তাঁর প্রশাসন নিয়ে যেকোন কঠিন প্রশ্নকেও স্বাগত জানানো হয়। তবে এমন কোনো সাংবাদিককে আমরা মেনে নিতে পারিনা যে কিনা হোয়াইট হাউসের একজন ইন্টার্ন নারীর গায়ে হাত রেখে বাজে ব্যবহার করেছে অ্যাকোস্টা। বিষয়টা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।"

তিনি আরো বলেন, প্রশ্ন করার সময় অন্য সহকর্মীদের একি সুযোগ না করে দেয়ার মানসিকতাটা প্রকারান্তরে তাদের অসম্মান করা।

সারাহ বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিহাসের অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্টের তুলনায় মিডিয়াকে বেশি সুযোগ দিয়েছেন।

একট টুইট বার্তায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অ্যাকোস্টা।

সিএনএন এক বিবৃতিতে বলেছে, চ্যালেঞ্জিং প্রশ্ন করার কারণেই অ্যাকোস্টার মিডিয়া পাস বাতিল করেছে হোয়াইট হাউস।

অ্যাকোস্টার মিডিয়া পাস বাতিল করার কড়া সমালোচনা করেছে হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্ট এসোসিয়েশন। তারা বিষয়টিকে ভুল পদক্ষেপ উল্লেখ করে তড়িত পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/০৭৩০ঘ)