রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় সকল দেশের দ্বার উন্মুক্ত রাখার আহবান জাতিসংঘের

রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় সকল দেশের দ্বার উন্মুক্ত রাখার আহবান জাতিসংঘের

জাতিসংঘ থেকে বিশেষ সংবাদদাতা

মিয়ানমারের রাখাইনে ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিবেশি সকল দেশের সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত রাখার আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘ। যারা সহিংসতায় আক্রান্ত তাদের এই মানবিক সংকটে সহায়তা জরুরি বলেও মন্তব্য করেছে বিশ্বসংস্থাটি।

জাতিসংঘ সদরদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সম্প্রতি রাখাইনে মিয়ানমার এবং বিদ্রোহীদের সংঘাতের মুখে মুসলমান, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেয়া প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ তরফে এই আহবান জানান সংস্থাটির সাধারণ অধিবেশন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র মনিকা গ্রেইলি।

বৃহস্পতিবার ব্রিফিংয়ের প্রশ্নোত্তর পর্বে মনিকা বলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের বিপদে শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশি অন্যান্য দেশগুলোরও উচিত সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করা, উদারতা দেখানো।

রাখাইনে চলা মানবিক সংকট এবং সহিংস পরিস্থিতির দিকটিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাতিসংঘ সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং রাখাইন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশটির শত শত নাগরিক পশ্চিম রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটছে। বিষয়টি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। এদের অনেকেই এখন নো ম্যানস ল্যান্ডে দিনাতিপাত করছে আর বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার জানিয়ে দিয়েছে তারা আর কোনো শরণার্থী আশ্রয় দিবেনা। এখন অন্য দেশকে একাজে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ১৯৯২ সাল থেকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরনার্থী আশ্রয় দিয়ে আসছে। সে সময়ে আড়াই লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। বর্তমানে যার সংখ্যা ১০ লাখে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ নিজেই নানা সমস্যায় আক্রান্ত, রয়েছে দারিদ্রতা। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন প্রেসিডেন্ট কী অন্য দেশকে আশ্রয়ের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দেবার আহবান জানাবেন?"

জবাবে মনিকা বলেন, "সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট বিষয়টি নিয়ে অধিবেশনে যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যা করছে সেজন্য প্রেসিডেন্ট তাঁর পক্ষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কতজন শরণার্থী রয়েছে সেটি নিয়ে আপনি বলেছেন, আমরা সেটা নিয়ে কথা বলেছি।"

তিনি বলেন, "আমরা এখানে যা বলছি, এবং প্রেসিডেন্টও বিষয়টি নিয়ে সরাসরি যা বলেছেন তা হলো একাধিক দেশের বিষয়টি নিয়ে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। শরণার্থী এবং অভিবাসী নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা আন্তর্জাতিক চুক্তিও রয়েছে। আর সেটার লক্ষ্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে এ নিয়ে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা। সেটা ঐ অঞ্চলের মধ্যে যেমন থাকা উচিত এর বাইরেও তা হওয়া উচিত।"

আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দেবার আহবান জানিয়ে মনিকা আরো বলেন, "আমরা যে বিষয়টি রেফার করবো তা হলো-সাহায্য। এই লোকগুলো (আশ্রয়প্রার্থীরা) বিপদের মধ্যে, তাদের সাহায্য প্রয়োজন। আরা যারা সংকটে রয়েছে তাদের সমস্যায় গভীরভাবে মন দেওয়াটা আমাদের জন্য জরুরি। এটাই প্রেসিডেন্টের বার্তা।"

তিনি বলেন, "বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে যা করে যাচ্ছে সেজন্য দেশটির সরকার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট। দেশটিকে এ জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।"

মনিকা বলেন, "অন্যান্য দেশেরও উচিত সম্মিলিতভাবে এ কাজে এগিয়ে আসা।"

এর আগে একই ইস্যুতে জাতিসংঘের অবস্থানের বিষয়ে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "বিষয়টি নিয়ে আমি জাতিসংঘের মানবাধিকার সহকর্মীদের কাছে থেকে আরো জানার চেষ্টা করবো। রোহিঙ্গা বিষয়টিতে বাংলাদেশ সরকার ও তার জনগণ তাদের সীমান্ত খুলে দিয়ে বিশাল উদারতার পরিচয় দিয়েছে। দেশটিতে লাখো লাখো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তবে আপনি (বাংলাদেশি সাংবাদিক) যে বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন সে বিষয়ে আমি আরো সুস্পষ্টভাবে জানানোর চেষ্টা করবো।"

জিএস/