নির্বাচনে কারচুপির স্বাধীন, পক্ষপাতহীন তদন্তের আহবান এইচ আর ডব্লিউ'র

কারাবন্দিত্বের ১ বছর: নির্বাচনের আগে জেলে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে

কারাবন্দিত্বের ১ বছর: নির্বাচনের আগে জেলে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে

এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগেই একটি মামলায় তাঁকে জেলে পাঠানো হয়।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচ আর ডব্লিউ) সম্প্রতি তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করে। সংস্থাটি একিসঙ্গে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের কারচুপির গুরুতর অভিযোগগুলো স্বাধীন এবং পক্ষপাতহীন তদন্ত করতে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস তাঁর এই প্রতিবেদনে বলেন, "২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে গুরুতর অনিয়মসমূহের যে অভিযোগ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য পক্ষ (বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা) থেকে উত্থাপিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের উচিত সেগুলোর স্বাধীন এবং পক্ষপাতহীন তদন্তের আহবানটি মেনে নেওয়া।"

এতে বলা হয়, "যেখানে কর্তৃপক্ষের উচিত নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত করা তারা সেটা না করে যেসব সাংবাদিক নির্বাচনের প্রহসন নিয়ে রিপোর্ট করেছে তাদের আটক করেছে। গুরুতর অভিযোগগুলোকে দ্রুত ধামাচাপা দিতেই নির্বাচন কমিন এবং সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে-এটা প্রচারে ব্যতিব্যাস্ত হয়ে উঠে।"

সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে দুই দলের শীর্ষ নেত্রীর বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলাগুলো খালেদা জিয়ার বিপক্ষে সচল থাকলেও কোনো মামলা নেই ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। প্রতিবেদনে সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, "(খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে) যেসব মামলা চালু রয়েছে সেগুলো প্রকৃতপক্ষে কী তা নিয়ে কোনো পক্ষপাতমূলক অবস্থানে নেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। খালেদা জিয়ার সমর্থকরা বলছেন- ২০০৭-২০০৮ সালের সেনাসমর্থিত সরকারের সময় একইরকমভাবে দুর্নীতির মামলা করা হয়েছিলো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরই সব মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।"

জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতা-কর্মী আর সরকার সমালোচকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক গ্রেফতারের বর্ণনা দিয়ে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, "২০১৮ সালের নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক পন্থায় গ্রেফতার করা হয়, আর তা থেকে সরকারের সমালোচকরাও কোনোরকমের ছাড় পায়নি। এরকম গ্রেফতার সে সময়টাতে ছিলো স্বাভাবিক একটা বিষয়। এভাবেই শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসেন।"

এতে আরো বলা হয়, "জাতীয় নির্বাচনকালীন সময়টুকুতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কীভাবে বিরোধী দলগুলোর উপর ধারাবাহিক রকমের আগ্রাসন চালিয়েছে তার বর্ণনা এইচ আর ডব্লিউ'র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন-'ক্রিয়েটিং পেনিক: বাংলাদেশ ইলেকশন ক্র্যাকডাউন অন পলিটিক্যাল অপোন‌্যান্টস এন্ড ক্রিটিকস'-এ তার সবিস্তার বর্ণনা রয়েছে। বিএনপির ভাষ্যমতে, সরকার দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩০০,০০০ মামলা দায়ের করেছে আর আটক করেছে হাজারে-হাজার। বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে তাদের ৮,২০০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।"

গায়েবি মামলার কথা তোলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, "অধিকাংশ মামলার অভিযোগ খতিয়ে দেখা গেছে তা ভিত্তিহীন। এ মামলাগুলোকে বলা হচ্ছে- গায়েবি মামলা। এসব মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে ঘটনার সময় তাদের কেউ মৃত, কেউবা বিদেশে কীংবা কেউ হাসপাতালের বেডে ছিলো। উদাহরণস্বরুপ আবু তাহেরের কথাই বলা যায়, তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১০ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তাকে এক ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। অপরাধ হলো তিনি আইন ভঙ্গ করে সমাবেশ করেছেন এবং যুবলীগের এক নেতাকে হত্যা করেছেন।"

এতে বলা হয়, "নির্বাচনের সময়টাতে ঘটা সহিংসতায় প্রধান দলগুলোর সবাই জড়িত ছিলো তবে এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ আচরণ প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে যথাযথ কর্তৃপক্ষ। পুলিশ শুধু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকেই এসব ঘটনায় আটক করেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা যখন বিরোধী দলের প্রার্থী এবং তার সমর্থকদের উপর হামলা করেছে তখন খুব কমই কৃর্তপক্ষকে ভূমিকা নিতে দেখা গেছে।"

জিএস/