আনন্দ আর আড্ডায় সরব হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস ডিনার

মুক্তমত আর বিশ্বের নির্যাতিত সাংবাদিকদের পক্ষে সোচ্চার হবার আহবান

মুক্তমত আর বিশ্বের নির্যাতিত সাংবাদিকদের পক্ষে সোচ্চার হবার আহবান

ওয়াশিংটন হিল্টন থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী

হাসি, আড্ডা, কৌতুক,গাল-গল্প, পেশাদারিত্বের নানান দিকসহ সব কিছুর যেনো এক টুইটুম্বুর অনুষ্ঠান ছিলো হোয়াইট হাউস করসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশনের ডিনার। ইতিহাসবিদ রন চারনো তো পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছড়িয়েছেন খুশির রেশ !

ওয়াশিংটন হিল্টনের বলরুমে শনিবারের রাতটি ছিলো হোয়াইট হাউস করসপন্ডেন্টসদের এক প্রাণের মেলা। অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশের সাথে সাথে রেড কার্পেট রিসিপশন অনুষ্ঠানের বাড়তি মাত্রা যোগ করে। আগত অতিথিরা একে একে রেড কার্পেটে দাঁড়ালে পাপ্পারাজ্জিরা মেতে উঠেন প্রতিযোগিতায়। এ বিরল অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ জাস্ট নিউজের এই প্রতিবেদকও।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পূর্ব ঘোষণা ছিলো তিনি এতে যোগ দিবেন না। রীতির এ জায়গায়টায় একটু ছেদ পড়লেও আনন্দ-আড্ডায় তার কোনো কমতি ছিলোনা। সেলিব্রেটি, মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব, বিশিষ্ট নাগরিক আর শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্হিতিতে ১০০ বছরেরও প্রাচীন সংগঠনটির বার্ষিক আয়োজন হয়ে উঠে উপভোগ্য। সেরা রিপোর্টিংয়ের জন্য পুরস্কার আর ইউনিভার্সিটি বৃত্তিও প্রদান করা হয় এতে।

হোয়াইট হাউস করসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি ওলিভার নক্স বক্তব্যে জন্য আহবান করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া জাগানো লেখক, ইতিহাসবিদ ও বায়োগ্রাফার চারনোকে। আগত অতিথিরা তখনো ভাবতে পারেননি কি বলতে যাচ্ছেন চারনো! সবাইকে তাক লাগিয়ে শুরু করেন একের পর এক হাস্যরসে ভরপুর কথামালা। একদিকে কৌতুকপূর্ণ আর অন্যদিকে ইতিহাস ভিত্তিক তথ্য নির্ভর বক্তব্য আগত অতিথিদের মোহিত করে।”

চারনো বলেন, “প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে একটা ভুল করে বসেছে ওয়াশিংটন। আর তা হলো তিনি তাঁর নামটা মাউন্ট বার্ননে বসাতে পারেননি। সুযোগটা হাত ফসকে গেলো। ‘আর্ট অব ডিল’টাকে তখন লেখা যেতো ‘ফাদার অব হিজ কান্ট্রি’।”

প্রেসিডেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার হেমিলটনের প্রসঙ্গ অবতারণা করে চারনো বলেন, “ট্রাম্প বলেছেন-সব রাস্তা বন্ধ, আমরা আর অভিবাসী নিতে পারবো না। হেমিলটনই একজন অভিবাসী ছিলেন। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে এর আগেই দেশের সব রাস্তা তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়নি। সম্ভবত কেউ তাকে দক্ষিণ সীমান্ত থেকে এ দেশে ফেলে দিয়েছিলো।”

সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “মিডিয়ার যারা সমালোচক তারা মাউন্ট রাশমোরের পাথরে আপনাদের কৃতিত্ব খোদাই করা দেখতে চায়না।যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার খর্ব হয় সেখানে গণতন্ত্র খর্ব হয়।”

চারনো বলেন, “অনুষ্ঠানে যারাই যোগ দিয়েছেন তারা সবাই টিম-ইউএসএ এর সদস্য।”

সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে ওয়ারেন বাফেটকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “সব সময় বড় পথটা বেছে নিন।এখানেই মানুষের (সাহসী) ভীড় কম।”

ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের ডিনার বয়কট প্রসঙ্গে চারনো বলেন, “প্রেসিডেন্ট ডিনারে আসবেন না এবং প্রশাসনের লোকদের না করে দিয়েছেন এটা শুনে আমি চমকে গিয়েছিলাম। পরে যে গুজবটা জানতে পারলাম তা হলো এখানে আসলো হয়তো মুলার রিপোর্টের গুমর ফাঁস হয়ে যাবে।!”

তিনি আরো হাস্যরসের তৈরি করেন এই বলে যে, “মার্ক টোয়েন বলেন-রাজনীতিবিদ আর ডায়াপার ( পেম্পার) মাঝেমধ্যে বদলাতে হয়, আর বদলানোর কারণ দুটার জন্য একই।”

হোয়াইট হাউস করসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ওলিভার নক্স অনুষ্ঠানটিকে নিজেদের ঘুরে দাঁড়াবার আয়োজন বলে অভিহিত করেন। তিনি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে সাংবাদিকদের পাশে এসে দাঁড়ানোর এবং তাদের কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সহযোগিতার আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট নক্স আরো বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করতে গিয়ে যেসব সাংবাদিকরা বাধার মুখোমুখি হচ্ছে তাদের দিকে মনযোগ দিতে হবে।” ২০১২ সালে সিরিয়ায় আটক হওয়া সাংবাদিক অস্টিন টাইসের মুক্তিতে সোচ্চার হবার আহবান জানান তিনি।

জিএস/