বিবিসিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার

‘চাপের কারণে সংবাদ ধামাচাপা দেয় বাংলাদেশের সাংবাদিকরা’

‘চাপের কারণে সংবাদ ধামাচাপা দেয়  বাংলাদেশের সাংবাদিকরা’

বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীন নয়, চাপের মধ্য রয়েছে। চাপের কারণে সাংবাদিকরা সেল্ফ সেন্সর আরোপ করতে বাধ্য হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা সংবাদ ধামাচাপা দেয়।

সম্প্রতি ঢাকায় বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের এমন বেহাল দশার কথা তোলে ধরেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। অথচ এর কিছুদিন আগে লন্ডনে বিবিসি সদর দপ্তরে গিয়ে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গিয়ে বলে এসেছিলেন, ‘যুক্তরাজ্যের চাইতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীন’।

প্রায় একই সময়ে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাতকারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বললেন উল্টো কথা।জানালেন বাংলাদেশে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা, বিতর্কিত ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগসহ অন্যান্য বিষয়। ডিকসনের ওই সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন সংবাদদাতা আকবর হোসেন।

জাস্ট নিউজ পাঠকদের জন্য সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হল:

ডিকসন: তারা খুব স্পষ্টভাবেই বলেছে যে তারা খুব চাপের মধ্যে আছে।এবং কিছু বিষয়ের উপর প্রতিবেদন করতে পারেনা।

আকবর: এটা কে করছে?

ডিকসন: এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলেনি। কিন্তু তারা যা বলছে তাতে বোঝা যায়, নিঃসন্দেহে তারা একটা চাপের মধ্যে থাকে। এই চাপের কারণে তারা সেল্ফ সেন্সর আরোপ করতে বাধ্য হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে অনেক সংবাদ তারা ধামাচাপা দেয়। কারণ তাদের একটা ভয় হল, প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সমস্যায় পড়তে পারে তারা। এমনকি অনেক সাহসী গণমাধ্যমও চাপের ফলে একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত কথা বলতে পারে। এর ফলে নাগরিকেরা তথ্য থেকে বঞ্চিত হয়।এবং এটা গণতন্ত্রের জন্য সমস্যা।

আকবর: আপনি কি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এই বিষয়গুলো নিয়ে ?

ডিকসন: হ্যাঁ। অবশ্যই। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। বিভিন্ন সময়ে সফরে আসা আমাদের দেশের মন্ত্রীরাও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে সাংবাদিক মহলে একটা উদ্বেগ আছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে এই বিষয়টা তুলে ধরেছি।

আমরা আরো দেখেছি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আমি সেরকম কয়েকটি ঘটনা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরেছি।

আকবর: বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একটা যুক্তি তুলে ধরা হয় যে এটা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়। এটা তাদের জন্য যারা মিথ্যা খবর কিংবা গুজব ছড়াচ্ছে এবং সমাজে অরাজকতা তৈরি করছে। ফলে সমাজে স্থিতিশীলতা আনার জন্য এরকম একটা আইনের দরকার আছে।

ডিকসন: হ্যাঁ। বাক স্বাধীনতার সাথে দায়িত্ববোধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই আইনের সমস্যা হচ্ছে এটা খুব বিস্তৃতভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা যে উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হোক না কেন বিভিন্ন ঘটনায় দেখেছি, নির্দিষ্ট ঘটনায় অনেক লোক এই আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে যায়।

আকবর: গত দশ বছরে বাংলাদেশে গণমাধ্যম পরিস্থিতির যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় ত্রিশটির মতো টিভি চ্যানেল আছে। এবং অনেকেই চব্বিশ ঘন্টা সংবাদ পরিবেশনও করছে। সোশাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল জার্নালিজম এর পরিধিও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের অনেকগুলো পত্রিকাও রয়েছে। এখানে একটা যুক্তি হল, সমাজে যতগুলো মিডিয়া থাকবে, ততটা বাকস্বাধীনতাও থাকবে। আপনি কি এই যুক্তির সাথে একমত?

ডিকসন: আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমি মনে করি বিষয়টা সংখ্যা দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। দেখার বিষয় হচ্ছে তারা কী করতে পারে। অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে যেটা অনুধাবন করতে পারছি, সেটা হলো এখানে সাংবাদিক সমাজ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে না। কিছু বিষয় আছে, যা নিয়ে তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে না। তারা এও বলেছে যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা বলছে তারা একটা চাপের মধ্যে আছে।

আকবর: বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের আলাদা কোন মূল্যায়ন আছে?

ডিকসন: আমাদের কাজ কোন একটা বিষয় নিয়ে বিচার করা নয়। যেটা করেছি সেটা হল, গণমাধ্যমের বন্ধুদের সাথে কথা বলেছি। তারাই বলেছে, তারা একটা চাপের মধ্যে আছে।

আকবর: আপনি বলছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের সাথে এই ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। সরকার বিষয়গুলো নিয়ে কি বলেছে?

ডিকসন: তারা বলেছে গণমাধ্যমের ওপর কোন চাপ নেই। যেটা আমরা বলে এসেছি তা হল এখানে যেন একটা গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র নিশ্চিত করা হয়। বিরোধীদল যেন ঠিকমতো কাজ করতে পারে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেন দায়বদ্ধ থাকে এবং গণমাধ্যম যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। এই সবগুলো হল গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

জিএস/