ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকার বন্ধু, মোদীর প্রশংসায় ট্রাম্প

ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকার বন্ধু, মোদীর প্রশংসায় ট্রাম্প

হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা

বিদেশ আর স্বদেশ এ যেনাে তফাত করাই কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য একটু আলাদা দিনই বলা যায়! হাজার হাজার ভারতীয় এক হয়েছেন এক অনুষ্ঠানে। হিউস্টন স্টেডিয়ামে এ দিন যারা যোগ দিয়েছেন তারা হয়তো এক বাক্যে বলবেন ভারত নাকি যুক্তরাষ্ট্র বুঝাই মুশকিল! অনুষ্ঠানের নাম "হাউডি মোদী" অর্থাৎ কেমন আছেন মোদী?

রবিবার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের এক ফুটবল স্টেডিয়ামে জমায়েত হয়েছিলো প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক ভারতীয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি উৎসবে এক ভিন্ন আমেজ দিয়েছে। কি ছিলোনা "হাউডি মোদী" সমাবেশে?

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বিদেশি কোনো নেতাকে নিয়ে এটা বড় কোনো সমাবেশের আয়োজন। মোদী এবং ট্রাম্প মঞ্চে উপস্থিত হবার আগে ৪০০ জন পারফর্মার দেড় ঘন্টা মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন।

অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে উপস্থিত হাজারো ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, "আজকের আয়োজনটি মনে গেঁথে রাখবার মতো ঐতিহাসিক একটি আয়োজন।"

ট্রাম্পের ভাষণের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিলো যেনো স্টেডিয়ামের প্রতি কোণে। তার বক্তব্যের শুরুতে সমবেত ভারতীয়রা দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান। দর্শকদের স্বতস্ফূর্ততার জন্য মাঝে মধ্যে বক্তব্যে বিরতি দিতে হয়েছে ট্রাম্পকে।এসময় ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের প্রশংসা করেন।

সমবেত জনতাকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, "আপানাদের মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে যান। এখানে আপনারা আমাদের সম্প্রদায়ের একজন হয়ে বসবাস করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগিরক হিসেবে গর্ববোধ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রও আপনাদের পেয়ে গর্বিত।"

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, "কেমন আছেন বন্ধুরা?"

হিন্দিতে দেয়া বক্তব্যে মোদী আরো বলেন,"আমি ভারতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।আজ ভারতের সবচাইতে বেশি উচ্চারিত শব্দটা হলো উন্নয়ন।"

মোদীর প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মহান, একনিষ্ঠ ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুদের একজন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাকে টেক্সাসে পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত।"

মোদীও তার বক্তব্যে বলেন হোয়াইট হাউজে "ভারতের একজন সত্যিকারের বন্ধু রয়েছে।"

ট্রাম্পকে "উষ্ণ, বন্ধুবৎসল, তেজদীপ্ত ও রসবোধসম্পন্ন" বলে প্রশংসা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

মোদী-র সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত হওয়াকে শক্তি ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম ও পুরানো গণতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেন ট্রাম্প।

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “আমরা বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ করেছি। প্রত্যেকবারই ট্রাম্প ছিলেন উষ্ণ, বন্ধুত্ত্বপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য, উৎসাহী এবং বুদ্ধিমান... তার নেতৃত্বের ক্ষমতা, আমেরিকার জন্য তার স্বপ্ন, প্রত্যেক আমেরিকান নাগরিকের জন্য উদ্বেগ, আমেরিকার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশ্বাস এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও মহান করে তোলার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করেছি। তিনি ইতোমধ্যেই আমেরিকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলেছেন। বিশ্ব এবং আমেরিকার জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন।”

ট্রাম্প বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি, আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে রয়েছি... আগের চেয়েও দেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে চাই। হোয়াইট হাউসে ভারতের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ভালো বন্ধু আগে কখনও ছিল না।”

পুরো দুনিয়া মোদি-র নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী, সার্বভৌম ভারত প্রত্যক্ষ করছে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

একিদকে যখন মোদী সংবর্ধনা তখন অন্যদিকে চলছিলো তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ।স্টেডিয়ামের বাইরে পাল্টা এক সমাবেশ থেকে তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ভারতে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

কাশ্মিরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শিখ সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ডাকা ওই সমাবেশে মোদীর কাশ্মির নীতির কড়া সমালোচনা করা হয়।

আন্তঃধর্মীয় মানবাধিকার গ্রুপ – জাস্টিস ফর অল ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো স্টেডিয়ামের বাইরে এই বড় আকারের পাল্টা সমাবেশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বিভিন্ন শহর থেকে মুসলমান ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেয়। তারা শ্লোগান দেয় ‘ফিরে যাও মোদী’, ‘মোদী এক সন্ত্রাসী’।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন মোদী। এক সপ্তাহের সফরে তিনি বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে তার।