খালেদা জিয়ার মুক্তির ঘোষণায় স্বস্তি, করোনা মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস তারেক রহমানের

খালেদা জিয়ার মুক্তির ঘোষণায় স্বস্তি, করোনা মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস তারেক রহমানের

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ঘোষণায় শোকরিয়া আদায় করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‌খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি।

মহামারি করোনা মোকাবেলায় সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এই মহামারি মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করতে চায় বিএনপি।

তিনি অনতিবিলম্বে এই মহামারির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুসারে দেশবাসীকে এই রোগ থেকে বেঁচে থাকতে সামাজিক মেলা-মেশার উপর বিধি নিষেধ মেনে চলার জোর তাগিদ দেন তিনি।

জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধৈর্য্য ও সাহসকিতার সাথে এই বিপর্যয় মোকাবিলার উদাত্ত আহবান জানান তারেক রহমান।

জাস্ট নিউজের পাঠকদের জন্য তারেক রহমানের পুরো বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

আমি প্রথমেই মহান আল্লাহর দরবারে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কল্যাণ কামনা করে আমার বক্তব্য শুরু করছি । আপনারা এই মুহূর্তে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া কিংবা দেশের মাটিতে যিনি যেখানেই থাকুন আমি আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা কামনা করছি।

আপনারা জানেন, বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্তি পাচ্ছেন । দেশে গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে এটি অবশ্যই আনন্দ ও স্বস্তির খবর । সন্তান হিসেবে এ জন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই।

সারা বিশ্বের মানুষ এক মহাবিপদের কাল অতিক্রম করছে। বিশ্বের সকল ধনী গরিব, শক্তিমান কিংবা দুর্বল, সাদা কিংবা কালো প্রতিটি মানুষ- ই আজ ভীত - আতংকিত। প্রতিটি দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বর্তমান পরিস্থিতি একাধারে একটি বৈশ্বিক সংকট। আবার প্রতিটি দেশের কাছে এটি একটি জাতীয় সঙ্কট। এটি এখন মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন।

দোষারোপের রাজনীতি মুখরোচক ব্যাক্যবান কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে কিংবা হুমকি-ধামকি শক্তি দেখিয়ে এই ঘোর বিপদ মোকাবেলা সম্ভব নয়। এই বিপদের দিনে প্রতিটি মানুষকে একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিককে নিজের অবস্থা - অবস্থান কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে গিয়ে সর্ব্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে নিজেকে, নিজের পরিবারকে এবং প্রতিবেশীকে নিরাপদ রাখার নীতি গ্রহণ করতে হবে। তবে এই বিপদ মোকাবেলায়, সবার আগে প্রয়োজন, রাষ্ট্র ও সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে মতো জনবহুল একটি রাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কতটা কঠিন হয়ে পড়বে এই নির্মম বাস্তবতা সরকার যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে দেশের জনগণের জন্য ততই মঙ্গল।

এই ভাইরাসটি এতটাই ছোঁয়াচে এবং স্পর্শকাতর যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে বলছে কারো সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, সাবান কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে যাতে মানুষ থেকে মানুষের সংস্পর্শে এটি ছড়াতে না পারে।

অপরদিকে, করোনা ভাইরাস চিকিৎসার জন্য দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালগুলোকে উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। কারণ, সম্প্রতি দেশের অন্যতম বড় হসপিটাল রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের মহাপরিচালক লিখিতভাবে জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় মাস্ক হসপিটালে নাই। যা সত্যিই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। চিকিৎসকরাই যদি নিরাপদ বোধ না করেন তাহলে তারা রোগীর চিকিৎসা করবেন কিভাবে?

তাই আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল কিটস সংগ্রহ করা এবং দ্রুততার সাথে ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে দেশ ও জনগণকে যে কোনো অবহেলায় অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হবে।

প্রিয় দেশবাসী
দেশের ৬৮ টি কারাগারে বন্দি লক্ষাধিক মানুষ। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি বন্দির বসবাস হওয়ায় কারাগারগুলোতে বিরাজ করছে অমানবিক অবস্থা। এরইমধ্যে খবর বেরিয়েছে, কারাবন্দীদের মধ্যেও করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক খবর। এই অবস্থায়, একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হলেও যাচাইবাছাই করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কয়েদি বিশেষ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় বন্দি তাদেরকে কারামুক্ত করা প্রয়োজন। ইতালি, ইরান সহ অনেক দেশই নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই অনেক কয়েদিকে শর্তসাপেক্ষে মুক্ত করে দিয়েছে।

আরো একটি বিষয় আমাদের খেয়াল রাখা দরকার। কক্সবাজার জেলায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা কিভাবে আছে। সেখানে যাতে করোনা ভাইরাস হানা দিতে না পারে সেটি যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

প্রিয় দেশবাসী
বর্তমান বিপদ মোকাবেলায় 'লকড ডাঊন' 'কোয়ারেন্টাইন' কিংবা 'সেলফ আইসোলেশন' অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু বাংলাদেশের বিরাজমান বাস্তবতায় এমন পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের জনগণ ততটা পরিচিত নয়। তাই এসব পদক্ষেপ সফল করতে হলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রয়োজন সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ যাতে দলমত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ সক্রিয়ভাবে 'লকড ডাঊন' 'কোয়ারেন্টাইন' কিংবা 'সেলফ আইসোলেশন' প্রক্রিয়ার সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারে।

তাই … সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে সফলভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জরুরিভিত্তিতে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন …

অবিলম্বে দেশে 'চিকিৎসা জরুরি অবস্থা অর্থাৎ মেডিক্যাল ইমার্জেন্সী ' ঘোষণা ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের কাজকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা এবং বিশেষ বোনাস প্রদান,চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সংখ্যক সেফটি মেডিক্যাল কিট্স সরবরাহ করে দেশের প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ…
প্রবীণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ…
করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষি শ্রমিক, গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানার শ্রমিক এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে আর্থিক সহায়তার উদ্দেশে দ্রুততার সঙ্গে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন…
এবং দেশে কমপক্ষে আগামী ছয় মাসের জন্য জাতীয় কিংবা স্থানীয় সকল নির্বাচন স্থগিত করা…

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশ এবং জনগণের স্বার্থে আমাদের সবাইকে যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখতে হবে । এটিই সময়ের দাবি । দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে অবশ্যই এই সরকারের বৈধতার সংকট রয়েছে কিন্তু চলমান করোনা ভাইরাস সংকট অত্যন্ত ভয়াবহ এবং অত্যন্ত বিপর্যয়কর। কারণ বর্তমান সংকট মানুষের বাঁচা-মরার সঙ্গে জড়িত।

জনগণের রায়ে ক্ষমতায় গিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। অনেক সংকটময় পরিস্থিতি-ও মোকাবেলা করেছে। সারা বিশ্বের সাথে মাতৃভূমি বাংলাদেশও এখন ভয়াবহ সংকটে তাই এই সংকট মোকাবেলায় বিএনপি প্রয়োজনে সরকারকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

কারণ আমরা বিশ্বাস করি বিএনপি বিশ্বাস করে, 'দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি'।

প্রিয় দেশবাসী
এই মহা বিপদকালে প্রতিটি নাগরিকের উচিৎ ... বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শগুলো মেনে চলা। অপরকে মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা ..নিরাপদ দূরত্বে থেকে একের প্রতি অপরের মহানুভবতার প্রকাশ ঘটানো। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা আতংকিত হয়ে অধিকমাত্রায় কেনাকাটা করে ...ঘরে মজুদ করবেন না। এই বিপদের সময় ...কিছু কিছু মানুষের মজুদদারীর কারণে যাতে আরেকজন বঞ্চিত না হয় এ বিষয়ে আমাদের সকলের সচেতন থাকা প্রয়োজন। অন্যের প্রয়োজনের প্রতিও আমাদের দৃষ্টি রাখা কর্তব্য।

একইসঙ্গে, আমি করোনা ভাইরাস চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সকল, ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের কঠিন ত্যাগের বিষয়টি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে চাই। আগামী দিনগুলোতে আপনাদেরকে হয়তো আরো কঠিন ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনাদের এই ত্যাগ সারাবিশ্ব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে করবে।

সবশেষে আমি, আমার দলের সর্বস্তরের নেতা কর্মী শুভার্থী সমর্থক সবার প্রতি একটি আহবান জানাতে চাই এখন মার্চ মাস। এই মাসটি আমাদের জন্য গর্বের। তবে, আমরা যারা বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি'র নেতা কর্মী সমর্থক ২৬ মার্চ আমাদের কাছে আরো একটি কারণে বিশেষভাবে গর্বের সেটি হলো।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আমাদের নেতা..বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। সাম্য মানবিকতা আর ন্যায় বিচারের প্রেরণায় আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম।

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ আজ আবার চরম বিপদে । এই বিপদ মোকাবেলায় স্বাধীনতার ঘোষকের দল বিএনপি'র প্রতিটি নেতা কর্মীকে মানুষের কল্যানে আবারো বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে । একটি দায়িত্বশীল দলের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে নিজেকে এবং নিজেদের পরিবারকে নিরাপদ রাখার পাশাপাশি আপনার প্রতিবেশীর কল্যানে বিশেষ করে নারী শিশু ও বয়স্কদের সহায়তায় যথাসম্ভব ভূমিকা রাখুন।

প্রিয় দেশবাসী
আমাদের সকলের জন্যই এই মহাবিপদ । সুতরাং আতংকিত না হয়ে সাহস ও ধৈর্য নিয়ে এবং নিরাপদ থাকার সকল নির্দেশনা অনুসরণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আবারো মহান আল্লাহর রহমত কামনা করছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি শিগগিরই আমাদেরকে এই মহা বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। আপনারা সুস্থ্য থাকুন।

জিএসস/