র‍্যাব কমান্ডারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায় যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটি

র‍্যাব কমান্ডারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায় যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটি

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ এবং মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে র‌্যাব এর কমান্ডারদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য একজোট হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দলীয় সিনেটররা।

মঙ্গলবার সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির শীর্ষ সদস্য ডেমক্র্যাটিক দলীয় সিনেটর বব মেনেনডেজ এবং রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর টড ইয়াং এর নেতৃত্বাধীন আট সদস্য, র‌্যাব এর সিনিয়র কমান্ডারদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য এ আহবান জানান। অভিযোগ হচ্ছে ২০১৫ সাল থেকে র‌্যাব ৪০০’র ও বেশি লোককে বিচারবহির্ভূত ভাবে হত্যা করেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিনের কাছে লেখা চিঠিতে সেনেটাররা প্রশাসনের প্রতি এই আহ্বান জানান যে তারা যেন র‌্যাব এর সিনিয়র কমান্ডারদের লক্ষ্য করে প্রযোজ্য আইনের অধীনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

সিনেটররা তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেন যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সরকার মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পর র‌্যাব’এর বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। বিচারবহির্ভূত, তাৎক্ষণিক এবং দ্রুত হত্যা বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ রেপর্টায়ারসহ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হচ্ছে বিচার বহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত নীতি এবং তারা সরকারকে এটা বন্ধ করে আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সরকার এই সব বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কোন বিচার ছাড়াই অব্যাহত ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

সিনেটররা আরও বলেছেন যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ছাড়াও, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে র‍্যাবের দ্বারা গুম এবং নির্যাতনের প্রমাণ আছে। বাহিনীটি মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চললেও এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এসুযোগে র‌্যাব তাদের বিচারবর্হিভূত হত্যা অব্যাহত রেখেছে।

চিঠিতে বলা হয়, "বাংলাদেশে র‌্যাব কর্তৃক ক্রমাগত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।২০১৫ সাল থেকে র‌্যাব ৪০০’র ও বেশি লোককে বিচারবহির্ভূত ভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গুম এবং নির্যাতনের অনেক ঘটনায় র‌্যাবের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণাদি রয়েছে।"

বাংলাদেশে এধরনের মানবাধিকার লংঘন আওয়ামী লীগ সরকার দ্বারা পরিচালিত বিরোধীমতকে চরমভাবে দমনেরই একধরণের ধারাবাহিকতা বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন সিনেটররা। তারা বলেন, "এসব কর্মকান্ডের পরও জবাবদিহীতার বাইরে রাখা হচ্ছে র‌্যাবকে।"

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিনকে আহবান জানিয়ে সিনেটররা চিঠিতে বলেন, "ব্যাপকহারে মানবাধিকার লংঘনের এসব ঘটনার দায়ের র‌্যাব এর সিনিয়র কমান্ডারদের লক্ষ্য করে গ্লোবাল ম্যাগনিস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যাক্ট এবং ফারদার কনসিলিডেটেট এপ্রোপিয়েশনস অ্যাক্টসহ প্রযোজ্য সকল আইনের অধীনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ আহবান জানাচ্ছি।"

এতে বলা হয়, "র‌্যাব প্রতিটি বিচারবর্হিভূত হত্যাকে 'ক্রসফায়ার' বলে আড়াল করতে চায়। কিন্তু স্বনামধন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নিকট থেকে পাওয়া তথ্য-প্রমাণে দেখা যায় ভিকটিমরা নিহত হবার আগে র‌্যাবের হেফাজতেই ছিলো। মারা যাবার পর তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেই বুঝা যায় এটা 'ক্রসফায়ার' নয় 'হত্যাকান্ড'।"

সাজানো ক্রসফায়ারের উদাহরণ দিতে গিয়ে চিঠিতে কাউন্সিলর ইকরামুল হক হত্যার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, "কাউন্সিলর ইকরামুল হত্যার অডিও রেকর্ডে শোনা যায় তাকে (ইকরামুল) হত্যা করার পর এটিকে 'ক্রসফায়ার' ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছিলেন র‌্যাবের অফিসাররা।তাদের নির্দেশমতোই মৃত ইকরামুলের পকেটে মাদক এবং বুলেট ঢুকানো হয়েছিলো, খুলে দেয়া হয়েছিলো বাধা হাত দুটো। ঘটনাস্থলের চারপাশে বুলেট ছড়িয়ে রাখা হয়েছিলো (ধোঁকা দিতে), একটি গাড়ির পাশে গুলির ঘটনা মঞ্চ বানানো হয়েছিলো।"

চিঠিতে আরো বলা হয়, "জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যানুযায়ী বিচারবর্হিভূত হত্যা ছাড়াও গুম এবং নির্যাতনের মতো কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে বিরোধ থাকার রেশ ধরে তার প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মচারীকে গুম এবং পরে নির্যাতন করে বাহিনীটি।তাদের নির্যাতনের কারণেই তিন কর্মচারীর একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিচারবর্হিভূত হত্যার কয়েকদিন বা কয়েক মাস আগে ভিকটিমকে গুম করা হয় এবং পরে তা 'ক্রসফায়ার বলে ধামাচাপা দেয়া হয়।"

ব্যাপকহারে মানবাধিকার লংঘনের এসকল ঘটনার পরও র‌্যাব কিংবা তার সিনিয়র কমান্ডাররা কোনো ধরনের বিচারের মুখোমুখি হয়নি বলে মন্তব্য করেন সিনেটররা। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সিনেটররা র‍্যাব কমান্ডারদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য সকল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

র‌্যাবের চলমান মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্রযোজ্য সকল আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহবান জানান ডেমক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দলীয় সিনেটররা।

পুরো চিঠিটি পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন:

https://www.foreign.senate.gov/imo/media/doc/10-27-20%20Letter%20to%20Pompeo%20and%20Mnuchin%20re%20Bangladesh%20RAB.pdf