৯০ শতাংশের বেশী কার্যকর

করোনা ভ্যাকসিনের সুসংবাদ দিলাে ফাইজার-বায়োনটেক

করোনা ভ্যাকসিনের সুসংবাদ দিলাে ফাইজার-বায়োনটেক

মুশফিকুল ফজল আনসারী

করোনাভাইরাস মহামারিতে চারদিকে লাশের সারি কেবলি দীর্ঘ হচ্ছে। স্বজন হারানোর বেদনা, শোক থামতে না থামতেই এখনো আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কার ভয়ে যখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশ চলছে সতর্ক প্রস্তুতি তখন সুসংবাদ নিয়ে সামনে এসে উপস্থিত হল খ্যাতনামা দুই ঔষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজার এবং জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োনটেক জানিয়েছে তাদের যৌথভাবে উৎপাদিত ভ্যাকসিন মানুষকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে ৯০ শতাংশেরও বেশি কার্যকর।

ভ্যাকসিনটির গবেষণা পরিচালনার জন্য ৪৩,০০০ এর অধিক ভলান্টিয়ার বাছাই করা হয়। এদের মধ্যে একটি অংশকে ভ্যাকসিনটির দুই ডোজ প্রয়োগ করা হয়। আর বাকি যারা থাকলো তাদেরকে প্রয়োগ করা হয় 'প্লাসিবো থেরাপি' (শান্তনাসূচক ভিন্ন ঔষুধ প্রয়োগ)।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে তাদের শরীরে ১০ শতাংশেরও কম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে। আর যাদেরকে 'প্লাসিবো থেরাপি' দেয়া হয়েছিলো তাদের মধ্যে সংক্রমিত হবার সংখ্যাটা ৯০ শতাংশের বেশী।

ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজার সোমবার জানায়, "যৌথভাবে তৈরি ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ডোজ শরীরে প্রয়োগের সাত দিন পর এটা ৯০ শতাংশেরও বেশী রোগ প্রতিরোধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।ভ্যাকসিন নেয়ার ২৮ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পায় ভ্যাকসিন গ্রহীতা।"

ভ্যাকসিনটিতে রয়েছে দুটি ডোজ।

যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য এবং ঔষুধ প্রশাসন এর আগে ঘোষণা দিয়েছিল তাদের এমন একটি করোনভাইরাস ভ্যাকসিন প্রয়োজন যেটির অন্তত ৫০ শতাংশ কার্যকারিতা রয়েছে।

ফাইজার সিইও আলবার্ট বুরলা বলেছেন, "বিগত ১০০ বছরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসের করোনার ভ্যাকসিনটি একটি মাইলফলক।"

"এটা নিয়ে অনুভূতিটা কী সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যখন আমি প্রথম ভ্যাকসিনের গবেষণার সংবাদটা শুনি তখনকার অনুভূতি কল্পনা করে দেখুন তো। ১০০ বছরের চিকিৎসার অগ্রযাত্রায় এটা মাইলফলক, এটাই মনে হয়েছে।"
এক বিজ্ঞপ্তিতে ফাইজার জানিয়েছে জরুরি প্রয়োজনে ভ্যাকসিনটি যাতে ব্যবহার করা যায় সেজন্য দ্রুতই তারা যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য এবং ঔষুধ প্রশাসনের নিকট অনুমতি চাইবে।

ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ডোজ ভলান্টিয়ারদের শরীরে প্রয়োগ করার পূর্বে ২ মাস তাদেরকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। আর এটা করা হয়েছিল খাদ্য এবং ঔষুধ প্রশাসনের পরমার্শ অনুসারেই।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি ভ্যাকসিনের এ আবিস্কারকে আলাদা রকমের সুসংবাদ বলে মন্তব্য করেছেন।

জুলাই মাসের ২৭ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনটির ট্রায়ালের জন্য অংশ নিয়েছেন ৪৩,৫৩৮ জন ভলান্টিয়ার। এদের মধ্যে সর্বশেষ রবিবার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৮,৯৫৫ জন।

ফাইজার জানিয়েছে ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশ নেয়াদের মধ্যে ৪২ শতাংশ আন্তর্জাতিকভাবে এবং ৩০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যোগ দিয়েছে।

সর্বমোট ১৬৪ জন করোনা আক্রান্তদের মধ্য এই ট্রায়াল সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে ঔষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি দুটি।

ভ্যাকসিনটি তার গ্রহীতাকে ঠিক কত সময়ের জন্য সুরক্ষা দিবে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ফাইজার সিইও আলবার্ট বুরলা।

তিনি বলেন, "হয়তো এমনো হতে পারে করোনাভাইরাসের জন্য বিভিন্ন সময়েই আপনাকে ভ্যাকসিনটি নিতে হবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ভ্যাকসিনে আরএনএ-প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। কোন সমস্যা ছাড়াই এই প্রযুক্তির একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে।ভ্যাকসিন প্রয়োগে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কোন কারণ নেই।"

ফাইজারের পরিকল্পনা হল এ বছরের শেষ নাগাদ পৃথিবীব্যাপী ৫ কোটি ডোজ সরবরাহ করা। আর ২০২১ সালের শেষ নাগাদ সরবরাহ করা ১৩০ কোটি ডোজ।

যুক্তরাষ্ট্রের সকল নাগরিক এ ভ্যাকসিন ফ্রী পাবে বলে জানিয়েছেন আলবার্ট বুরলা।

ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিক উৎপাদন দুই জায়গায় হবে। প্রথমত যুক্তরাষ্ট্রে, এখানে উৎপাদিত সকল ভ্যাকসিন শুধু যুক্তরাষ্ট্র নাগরকিদের জন্য। আর দ্বিতীয়ত ইউরোপে, এখান থেকে পুরো বিশ্বে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে।