নাটকীয়তার পর করোনা স্টিমুলাস বিলে স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প

নাটকীয়তার পর করোনা স্টিমুলাস বিলে স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প

বিশেষ সংবাদাতা

স্বাক্ষর করবেন না কি করবেন না? এমন দুটানায় রেখে সবাইকে অবশেষে করোনাভাইরাসের রিলিফ ও স্পেন্ডিং প্যাকেজ বিলে সই করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার রাতেই বিশাল অংকের প্রণোদনা বিলে স্বাক্ষর করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট এ বিলে সই করে কার্যত আরেকটি অচলাবস্থা থেকে প্রশাসনকে উদ্ধার করেছেন। ট্রাম্প বিলটিতে সই না করলে মঙ্গলবার থেকে শুরু হত শাটডাউন।

বিলে মোট ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা সহায়তা তহবিলের জন্য ৯০০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ নাগরিকের বেকার ভাতা অব্যাহত থাকার পথ সুগম হলো। মধ্য মার্চ পর্যন্ত ভাতা অব্যাহত থাকবে।

বকেয়া ভাড়ার জন্য উচ্ছেদ অভিযান কিংবা মর্টগেজের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য বাড়ি নিলামে উঠানোর প্রক্রিয়াও স্থগিত থাকবে। গরিবের চেয়েও গরিব নাগরিকদের ‘ফুট স্ট্যাম্প’ কার্যক্রমও ত্বরান্বিত হবে।

করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থনৈতিক প্রণোদনার সঙ্গে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের কেন্দ্রীয় বাজেটও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রত্যেক আমেরিকান (যার বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলারের কম) এককালিন ৬০০ ডলারের চেক পাবেন এবং স্টেটের বেকার ভাতার সাথে যোগ হবে সপ্তাহে ৩০০ ডলার করে।

১১ সপ্তাহের জন্য বেকার ভাতার সঙ্গে সপ্তাহে অতিরিক্ত ৩০০ ডলার করে দেওয়া হবে। নতুন করোনা রিলিফ বিলে ভাড়াটে, বাড়ির মালিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নানা সহযোগিতা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ৫ দিন আগে এই বিল কংগ্রেসে পাশ হলেও তাতে স্বাক্ষরে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, এত স্বল্প পরিমাণের অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারটি অত্যন্ত লজ্জাজনক/অপমানকর। এছাড়া ঐ বিলে বিদেশীদের সহায়তার প্রসঙ্গ থাকায় ট্রাম্প তার নিন্দা জানিয়ে বলেছিলেন যে, করোনা স্টিমুলাস বিলে শুধু আমেরিকানদের সহায়তার প্রসঙ্গ থাকতে হবে, বিদেশীদের অর্থ দেব কেন? তিনি চাচ্ছেন প্রত্যেকের স্টিমুলাস চেকের পরিমাণ যেন দুই হাজার ডলার হয়। এ দাবি এখনও রয়েছে। এ ব্যাপারে ডেমক্র্যাটরা সম্মত থাকলেও ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি রাজি হচ্ছে না বলে সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে।

অনুমোদন দিলেও ট্রাম্প বিলটিকে অমর্যাদাকর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হাউস ও সিনেটে কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর বিলটি পাস হয় করোনাভাইরাসের রিলিফ ও স্পেন্ডিং প্যাকেজ বিলটি সোমবার পাস করে দেয় কংগ্রেস।

প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের জন্য বিলটি ওয়াশিংটন থেকে ফ্লোরিডার প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত অবকাশ কেন্দ্র মারে-লাগোতে পাঠানো হয়েছিল। সবার প্রত্যাশা ছিল ট্রাম্প এতে অনুমোদন দেবেন দ্রুত। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অনেক নাটকীয়তা করেছেন তিনি। অবশেষে রবিবার রাতে ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, কোভিড রিলিফ বিলের জন্য সুসংবাদ।

স্বাক্ষর মূহুর্তের বর্ণনা দিয়ে সিএনএন তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তখন সন্ধ্যা ৭.০০টা। মারে-লাগো অবকাশ কেন্দ্রের বলরুম তখন স্বাক্ষর আনুষ্ঠানিকতার জন্য প্রস্তুত। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের জন্য চেয়ার–টেবিল সাজানো হয় রুমটিতে। পাঁচ হাজারের বেশি পৃষ্ঠার করোনা রিলিফ বিলের পাশে ট্রাম্পের সব সময় ব্যবহার করা কলমও প্রস্তুত রাখা হয়।

বিল প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, এটাকে বলা হচ্ছে করোনা সহায়তা বিল।কিন্তু এতো করোনা সংক্রান্ত কোনকিছুই নেই।

ট্রাম্প বিলটিতে স্বাক্ষর না করলে সোমবার মধ্যরাতের কিছুক্ষণ পরই সরকারের কাজকর্ম আংশিক বন্ধ হয়ে যেতো। একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতো বর্ধিত বেকার ভাতা।

বিলটিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের একদিন আগেই শনিবার এ ইস্যুতে ট্রাম্পকে একহাত নেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিলটি নিয়ে প্রেসিডেন্টের আপত্তির সমালোচনা করে শনিবার এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। এটি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তবে ট্রাম্পের দাবি, তিনি দম্পতিদের জন্য বরাদ্দকৃত ভাতার পরিমাণ ৬০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০০০ কিংবা ৪০০০ ডলার করতে চেয়েছিলেন।

বিলটিকে ‘অপব্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দের হার বাড়ানোর জন্য ট্রাম্প কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বিলের নাম দেয়া হয়েছে কোভিড রিলিফ বিল, কিন্তু কোভিডের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই নেই। তার মতে এই বিল সংস্কার করতে হবে। জনপ্রতি ৬০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ডলার বা দম্পতিদের জন্য চার হাজার ডলার করা।

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের বিলে স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছেন। এবং একিসঙ্গে জনপ্রতি দুই হাজার ডলারের সুবিধা বৃদ্ধির যে প্রস্তাবনা তিনি করেছেন তাতে সমর্থন দিতে রিপাবলিকানদের ডেমোক্রেটদের সঙ্গে এক হবার আহবান জানিয়েছেন।

করোনা প্রকোপ শুরুর মাসেই ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রথম স্টিমুলাস বিল পাশ হওয়ায় মাথাপিছু ১২০০ ডলার (অপ্রাপ্তরা ৫০০ ডলার) এর চেক এবং বেকার ভাতার সাথে ফেডারেল থেকে সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে প্রদান করা হয়েছে ৩১ জুলাই পর্যন্ত।

এরপর করোনা মহামারি অব্যাহত থাকায় আরেকটি স্টিমুলাস বিল পাশের দেন-দরবার চলছিল গত ৭ মাস থেকেই। সিনেটে রিপাবলিকারদের টালবাহানার পরিপ্রেক্ষিতে সেটি সম্ভব হয়নি। অবশেষে ২১ ডিসেম্বর সেই বিল প্রতিনিধি পরিষদে পাশ হয়। এ বিলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থ প্রদানের পাশাপাশি করোনার টিকা বিতরণ ব্যবস্থার অর্থও রয়েছে। বড়দিন ও ইংরেজী নতুৃন বছরের ছুটি কাটাতে ট্রাম্প এখন ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন। সেখানেই বার্ষিক বরাদ্দ বিল সহ এই বিলে স্বাক্ষর দেন বলে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়।

ট্রাম্পের পক্ষে ট্রেজারি সেক্রেটারি মাসের পর মাস ডেমক্র্যাটদের সাথে দেন-দরবারের পর ৯০৮ বিলিয়ন ডলারের স্টিমুলাস বিল পাশ হলেও ট্রাম্প যখন পিছুটান দিয়েছেন তখন সকলেই বিস্ময়ে হতবাক হন। কংগ্রেসের উভয় কক্ষ থেকে তাকে অনুরোধ জানানো হয় নাজুক অবস্থায় পতিত বিপুলসংখ্যক আমেরিকানের কথা বিবেচনা করে যেন বিলে তিনি স্বাক্ষর করেন।

স্বাক্ষরের পর প্রদত্ত অপর এক বার্তায় ট্রাম্প অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে, তিনি যে ভোট জালিয়াতির ভিকটিম হয়েছেন সে ব্যাপারে কংগ্রেসকে ভূমিকা রাখতে হবে। অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ইলেক্টোরাল ভোটের আনুষ্ঠানিক গণনায় যেন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানরা তার পক্ষ নেন।

এ বিলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় এক মিলিয়ন প্রবাসী বাংলাদেশীও উপকৃত হবেন। আশা করা হচ্ছে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই প্রত্যেকে স্টিমুলাস চেক পেয়ে যাবেন। এরপর রিপাবলিকানরা যদি ট্রাম্পের অনুরোধে সাড়া দিয়ে মাথাপিছু আরো ১৪০০ ডলারের চেক সম্পর্কে সিনেটে বিল পাশ করেন, তাহলে সেটিও মধ্য জানুয়ারি প্রত্যেকের একাউন্টে চলে আসবে।