শপথ নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র

শপথ নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র

মুশফিকুল ফজল আনসারী

উৎকন্ঠা, উত্তেজনা আর নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শপথ নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র।

সাংবিধানিক প্রথা অনুযায়ী আজ ২০ জানুয়ারি স্থানীয় সময় দুপুর ১২ টায় গণতন্ত্রের পাদপীঠ ক্যাপিটল হিলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে শপথ বাক্য পাঠ করান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। এর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের শপথ বাক্য পাঠ করান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সনিয়া সটোমেয়র।

চরম বিভাজন, করোনা মহামারির করাল গ্রাস, বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থা, কোটি মানুষের বেকারত্ব, অপরিপক্ষ পররাষ্ট্র নীতি, ক্যাপিটল হিলে ঘটে যাওয়া ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন তান্ডব আর কঠোর নিরাপত্তা বেস্টনীর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ নিলেন জো বাইডেন। শপথ নেবার পথটি প্রাক্তনদের মত এতটা সহজ ছিলো না। ক্ষমতার পালাবদলের প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক পথেই অঘটন ঘটিয়ে ছিলেন সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের হঠকারি সকল কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে শত প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে নতুন এক দেশ গড়ার প্রত্যয় নিলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক জো বাইডেন।

করোনার কারণে আগে থেকেই শপথ অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্তভাবে আয়ােজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। কমিয়ে আন হয় লোক সমাগমের বিষয়টি। তবে ৬ জানুয়ারীর অবাক করা তান্ডব আর ট্রাম্প সমর্থকদের প্রতিবাদের ঘোষণা নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিদের শক্ত অবস্থান নিতে বাধ্য করে। ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ডের উপস্থিতিতে আয়োজিত হয় এই ব্যাতিক্রমী ‘ইনোগরেশন’।

সদ্য বিদায়ী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পূর্বেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে শপথ অনুষ্ঠানে তিনি যাবেন না। আর তার স্বভাবসুলভ কায়দায় টুইটেই সে ঘোষণার জানান দিয়েছিলেন। ট্রাম্প যোগ না দিলেও অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তার রানিংমেট ভাইসপ্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। সেই সঙ্গে পালন করেছেন তার উপর অর্পিত সাংবিধানিক সকল দায়িত্ব।

শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক ফাস্ট লেডি মিশেল ওবামা, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন দম্পতি, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ, সর্ব দলীয় সিনেটর ও কংগ্রেসের সদস্যগণ এবং বাইডেন পরিবারের সদস্যরা।

যুক্তরাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের রীতি হল শপথ অনুষ্ঠানে নতুন প্রেসিডেন্টের পেছনের সারিতেই বসবেন সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য সাবেক প্রেসিডন্টরা। তারা শপথ অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। কিন্তু সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে দেশটির ১৫২ বছরের ঐতিহ্যকে ক্ষুন্ন করেছেন ট্রাম্প। আজ সকাল হোয়াইট হাউস ছেড়ে ফ্লোরিডার মারে লাগোর অবকাশ কেন্দ্রের দিকে পা বাড়ান একরোখা এই প্রেসিডেন্ট।

নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীতের পরিবেশনের মাধ্যমে যেখানে ১০০০ অতিথি অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় সঙ্গিত পরিবেশন করেন পপ তারকা লেডি গাগা।

আমন্ত্রিত অতিথিদের অধিকাংশই সিনেট ও কংগ্রেসের সর্বদলীয় সদস্য। প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে সাধারণত ২ লাখ লোকের সমাগম ঘটে ক্যাপিটলে। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসে কারণে সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত করে দেয়া হয়। কংগ্রেস সদস্যরাও এবার নিজেদের সঙ্গে একজনের বেশি সঙ্গি নিয়ে অংশ নেবার সুযোগ পাননি। বাইডেন ট্রানজিশন টিম পূর্বেই তাদের সমর্থকদের বাড়িতে নিরাপদে থাকার অনুরোধ জানিয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানটি লাইভে সম্প্রচার করেছে প্রেসিডেন্সিয়াল ইনোগরাল কমিটি। সাংবাদিকদের ভিডিওসহ সব তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব নেয় ওই কমিটি।

শপথের পরপরই জো বাইডেন তার স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন।

অন্যান্য সময়ের মতো এবার কোন পাবলিক প্যারেডের আয়োজন রাখা হয়নি। এই প্যারেডের পরিবর্তে 'প্যারেড অ্যাক্রস আমেরিকা' নামে এক ভার্চুয়াল প্যারেডের আয়োজন করা হয়। এপ্রসঙ্গে বাইডেনের ইনোগরাল টিম জানিয়েছে এ আয়োজনের উদ্দ্যেশ্য হল মহামারির সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানানো।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কোন সরাসরি পারফরম্যান্স না থাকলেও বুধবার রাতে আয়োজন করা হয়েছে ৯০ মিনিটের টিভি শো- 'সেলেব্র্যাটিং আমেরিকা' । অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন ফিল্ম তারকা টম হ্যানক।

ক্যাপিটল হিলে হামলা এবং উগ্র ট্রাম্প সমর্থকরা যেন নতুন কোন বিশৃঙ্খলা না তৈরি করে এসকল বিষয় মাথায় রেখেই যেকোন অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে শপথ অনুষ্ঠানে নেয়া হয়েছিল নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা যাতে কোন কমতি না থাকে সেজন্য শুধু ওয়াশিংটনেই জড়ো করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডের ২৫,০০০ সদস্য।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য এটাই সৈন্যদের সব চাইতে বড় জমায়েত। নিরাপত্তা জন্য ন্যাশনাল মলে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। ক্যাপিটল হিলের আশপাশের এলাকাগুলোতে যাতায়াত সীমিত করাসহ বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কড়া নজদারি।

যেকোন বিশৃঙ্খলা এবং দাঙ্গার আশংকা এড়াতে ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মোরেল বাউজার জানুয়ারির ২১ তারিখ পর্যন্ত পাবলিক ইমার্জেন্সি বৃদ্ধি করেছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করে জানান দিয়েছিল যে শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে অঙ্গরাজ্যগুলোতে দাঙ্গার আশংকা রয়েছে। সে সতর্কতার অংশ হিসেবেই অনেক রাজ্যে ব্যারিকেড তৈরি, কাঁটা তার প্রতিবন্ধকতা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নিরাপত্তা জােরদার এবং ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়।