সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হতে চাই: অভিষেক ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন

সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হতে চাই: অভিষেক ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন

মুশফিকুল ফজল আনসারী

সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর দেয়া এক অভিষেক ভাষণে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, "আমি সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হতে চাই। প্রতিজ্ঞা করছি যারা আমাকে সমর্থন করেননি তাদের জন্য আমি এমন নিবেদিতভাবে কাজ করব যেমনটা যারা সমর্থন করেছে তাদের বেলাতে করব।"

বিভক্তির বিপক্ষে ঐক্যের জয় হয়েছে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, "যে শক্তিগুলো আমাদেরকে বিভক্ত করেছে তা প্রকট, বাস্তব।কিন্তু এটাও জানি যে, এসকল প্রতিবন্ধকতা চলার পথে নতুন কিছু নয়। সমতা হচ্ছে আমেরিকার আদর্শ। আমাদের দীর্ঘ দিনের পথ চলার ইতিহাসে বর্ণবাদ, ভীতি, জাতিবিদ্বেষ-এগুলোর বিরুদ্ধে লড়ে এসেছি।"

ভিন্নমত থাকাটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য মন্তব্য করে বাইডেন আরও বলেন, "নির্বাচনি প্রচারণায় যারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, আস্থা রেখেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। যারা আমাকে সমর্থন দেননি তাদের বলব-আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার কথা শুনুন। আমাকে এবং আমার হৃদয়কে অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি এখনও দ্বিমত করেন, সেটা করতেই পারেন। এটাই গণতন্ত্র। এটাই আমাদের আমেরিকা।আমাদের প্রজাতন্ত্রে যে ভিন্নমত রয়েছে সেটার সুরক্ষা দেয়াটাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।"

তিনি আরও বলেন, "আমার কথা আরও ভালোভাবে অনুধাবন করুন।ভিন্নমত মানেই বিভক্তি নয়। আমি এ বিষয়ে আপনাদের নিকট অঙ্গিকার করছি। আমি সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হব। প্রতিজ্ঞা করছি যারা আমাকে সমর্থন করেননি তাদের জন্য আমি এমন নিবেদিতভাবে কাজ করব যেমনটা যারা সমর্থন করেছে তাদের বেলাতে করব।"

সংবিধানের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহবান জানিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট বলেন, "আমি সংবিধান, গণতন্ত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করব। আমেরিকার পক্ষে লড়ব। ক্ষমতাকে বিবেচনায় না এনে বরং সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আপানাদের সেবায় সাধ্যের সবটুকু করব।"

তিনি বলেন, "আমরা একসঙ্গে আমেরিকার এক নতুন ইতিহাস লিখব। সেটা ভয়ের নয় হবে আশার ইতিহাস। বিভক্তির নয় হবে একতার, অন্ধকার নয় আলোর। সে গল্পটা হবে নৈতিকতা এবং আত্ম মর্যাদার, ভালোবাসা এবং আরোগ্যের, মহানুভবতা এবং পরপোকারিতার।"

অভিষেক ভাষণে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে উদ্দেশ্য করে বাইডেন বলেন, "আমার এ বার্তা হল সীমানার বাইরের যারা রয়েছে তাদের জন্য। আমেরিকা পরিক্ষিত, আমরা এর মাধ্যমে আরো শক্তিশালী হিসেবে নিজেদের তৈরি করেছি।মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করব। পুরো বিশ্বের সঙ্গে আবারও সম্পৃক্ত হব।"

বাইডেন তার ভাষণে আগের পূর্বসূরির একলা চল নীতি থেকে সরে আসবেন বলে ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, "ক্ষমতা দিয়ে আমরা নেতৃত্ব দিতে চাইনা বরং অনুপ্রেরণীয় দৃষ্টান্তের শক্তি কাজে লাগিয়ে আমরা নেতৃত্ব দিতে চাই।আমরা শান্তি, অগ্রগতি এবং নিরাপত্তার দৃঢ় এবং বিশ্বস্ত সহযোগি হতে চাই।"

করোনভাইরাস মহামারি প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, "শতকে একবার এরকম ভাইরাস মহামারি দেখা যায়। এটা অজান্তে দেশকে হানা দিয়ে বসেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যত আমেরিকান প্রাণ হারিয়েছে এই এক বছর ভাইরাসে তত লোক প্রাণ হারিয়েছে।"

করোনার ক্ষয়-ক্ষতি, বর্ণবৈষম্য প্রভৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এসকল সংকট মোকাবেলা করতে, প্রাণচাঞ্চল্য ফেরাতে এবং আমেরিকার ভবিষ্যত নিরাপদ করতে মুখের কথার চাইতে কাজের বেশী প্রয়োজন। এজন্য গণতন্ত্রের সবচাইতে মূল্যবান যে জিনিসটা কাজে লাগাতে হবে সেটা হল-একতা।"

বাইডেন তার ভাষণ চলাকালেই করোনায় নিহত চার লাখের বেশী নাগরিকের জন্য দেশবাসীকে এক মুহূর্তের জন্য নিরবতা পালন এবং প্রার্থনায় যোগ দিতে বলেন।

দেশের জন্যই নিজের পুরো মন নিবেদিত উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, "জানুয়ারির আজকের এই দিনে আমার মন একটি জায়গায় নিবিষ্ট হয়ে আছে।আর তা হল- আমেরিকাকে একত্রিত করা। দেশের জনগণকে এক করা।"

ভাষনের শুরুতেই বাইডেন বলেন, "আজকের শপথ অনুষ্ঠান গণতন্ত্রের বিজয়। এখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।"

এসজে/