আল জাজিরার প্রতিবেদন

জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত দাবি করেছে সাত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা

জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত দাবি করেছে  সাত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা

বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনিয়ম আর মানবাধিকার লংঘন নিয়ে আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগগুলো জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত করার আহবান জানিয়েছে সাত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

শনিবার নিউইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতি এ আহবান জানানো হয়।

হিউমেন রাইটস ওয়াচের ইউএন পরিচালক লুইস চারবানো বলেন, ‘এই অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘের উচিত নিজস্ব তদন্ত চালানো এবং শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ ইউনিট ও ব্যক্তিদের মানবাধিকার রেকর্ডের বিষয়টি নতুন করে যাচাই করা।’

দেশে সংঘটিত অনিয়মের ঢাল হিসেবে যেন জাতিসংঘকে ব্যবহার করার সুযোগ না পায় বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, 'জাতিসংঘের উচিত শান্তি রক্ষা মিশনে অংশ নেয়া বৃহৎ অংশীদার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তুলনামূলক পর্যালোচনা করা।' 

এতে আরো বলা হয়, 'আন্ডার সেক্রটারি জেনারেল ফর পিস অপারেশন্স জিন পিয়েরে লেক্রয়িসের উচিত হবে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদেরকে এটা স্পষ্ট করে বলা দেয়া যে- আপনাদের দেশে (বাংলাদেশ) সেনাবাহিনীর অনিয়মের ঢাল হতে চায়না জাতিসংঘ।' 

বিবৃতিতে অংশগ্রহণকারি সাত আন্তর্জাতিক সংস্থা হল: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, দ্য এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাগেইনস্ট টর্চার, দ্য এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ইলিয়স জাস্টিস।

সেনা প্রধানের কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মূল বিষয়ে উঠে এসেছে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ভূমিকার বিষয়টি।আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে ব্যবহার করে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। তার ছত্র ছায়াতেই সেনাবাহিনী কর্তৃক ভয়াবহ রকমের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে।'

লুইস চারবানো বলেন, 'বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসমূহ জেনারেল আজিজের অধীনে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসা বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম আর নির্যাতন ছাড়াও লজ্জাহীনভাবে দেশে সরকারের নির্যাতনমূলক নজরদারি কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছে।'

আল জাজিরা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে সরকার ইসরায়েল থেকে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন নজরদারী করার প্রযুক্তি আমদানি করেছে। কিন্তু প্রতিবেদনের জবাব দিতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে তারা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে অংশ নেয়া কন্টিজেন্টের জন্য এসব নজরদারি প্রযুক্তি কিনেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ ৪ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছে- বাংলাদেশের কন্টিজেন্টে এরকম যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কোন অনুমতি নেই।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিক দূর্নীতির অভিযোগ কে গুরুতর উল্লেখ করে নির্ভরযোগ্য তদন্তের আহবান জানিয়েছেন।

শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের বিষয়টি পর্যালোচনা করার আহবান জানিয়ে সাত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, 'জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের নতুন করে অংশগ্রহণের বিষয়টি ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখা উচিত যতক্ষণ না সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংস্থাটির সম্পর্কের জায়গাটুকু পর্যালোচনা করে দেখা হয়। যেসকল সেনাবাহিনী কিংবা কমান্ডাররা মানবাধিকার লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত অথবা তাদের অধীনে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া ব্যক্তি বিশেষের বিচার কিংবা অপরাধ দমনে ব্যর্থ তাদের সঙ্গে জাতিসংঘের উচিত সকল ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা।'

বিবৃতিতে বলা হয়, 'জেনারেল আজিজ যখন বিজিবি প্রধান ছিলেন তখন শেখ হাসিনার বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে দমনে তার ভূমিকা ছিল। আর তার রেশ ছিল ২০১৪ সালের নিবার্চন পর্যন্ত যে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সে পর্যন্ত।'

বাংলাদেশ সরকার সকল অভিযোগকে রাজনৈতিক অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

মানবাধিকার লংঘনে র‌্যাবের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'র‌্যাব কর্মকর্তাদের জাতিসংঘ মিশনে অংশ নেবার সুযোগ দেবার পূর্বে ইউএন ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপরাশেনস এর উচিত যাচাই-বাচাই করে নেয়া যাতে মিশনে অংশ নেয়া কারো মানবাধিকার লংঘনের রেকর্ড নেই এটা নিশ্চিত করা।'

বিবৃতিতে বলা হয়, 'কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার-এর জাতিসংঘ কমিটি ২০১৯ সালে তাদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের পর্যালোচনায় বলেছিল- এটা উদ্বেগের বিষয় যে যেসকল কর্মকর্তারা র‌্যাবে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদেরকেই একের পর এক শান্তি রক্ষা মিশনে অংশ নেবার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।'

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'অনিয়ম করে পার পেয়ে যাওয়াটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সময়ে একটা স্বাভাবিক নিয়েম পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুসারে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিগতে এক দশকে ৫০০ এর বেশি মানুষকে গুম করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এদের অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী।'

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের সমন্বয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, 'জাতিসংঘের উচিত জেনারেল আজিজকে এটা স্পষ্ট করে বলে দেয়া যে- মানবাধিকার লংঘনকারীদের কোন জায়গা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে নেই।'

এসজে/