বছরের শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশা: জাস্ট নিউজকে ড. ফাউচি

বছরের শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশা: জাস্ট নিউজকে ড. ফাউচি

মুশফিকুল ফজল আনসারী

৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারলে এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা গেলে বছরের শেষ দিকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব। এজন্য প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতনতা এবং সহযোগিতাও জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বর্তমান অবস্থা, প্রশাসনের গৃহিত পদক্ষেপ এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাবার সম্ভাবনা নিয়ে জাস্ট নিউজের স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুুশফিকুল ফজল আনসারীর করা এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রধান স্বাস্হ্য উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি ফাউচি।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন প্রেস সেন্টারের ভার্চুয়াল ব্রিফ্রিংয়ে অংশ নিয়ে শুক্রবার এই প্রতিবেদক জানতে চান, "ড. ফাউচি আপনি নিরলসভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার কাছে আমার সাধারণ জিজ্ঞাসা হলো- কখন, কিভাবে, আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব? করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের উহান ইতোমধ্যে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে এসেছে। আমারা কবে নাগাদ এমন অবস্থায় ফিরতে পারি!

জবাবে ড. ফাউচি বলেন, "বিষয়টি আসলে নির্ভর করছে ভাইরাসটির গতিবিধির উপরে। এ ব্যাপারে আমি আপনাকে বড়জোর আশাবাদের একটা চিত্র আপনার সামনে তুলে ধরতে পারি।"

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পৃথিবীর সব দেশের সংক্রমণ আর প্রস্তুতির অবস্থা একরকম নয় মন্তব্য করে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ফাউচি জানান, "আমাদের কাছে করোনার টিকা রয়েছে। আর এটি জনগণের কাছে বেশি করে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন।কিন্তু পৃথিবীর অন্য সকল দেশের চিত্রটা কিন্তু একিরকম নয়। যদি আমি যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে রেখে কথা বলি, তাহলে বলব- যদি আমরা ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়ে দিতে পারি তাহলে সেটা হার্ড ইমিউনিটির পর্যায়ে চলে যাবে। তাহলে আপনারা ধরে নিতে পারবেন দেশে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে একটি সুরক্ষা দেয়াল তৈরি হয়ে যাবে। আর এটির সংক্রমণের মাত্রাও খুবি কমে আসবে।"

এ বছেরর শেষ দিকে সংক্রমণের মাত্রা কমে যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করে এই চিকিৎসক আরও বলেন, "আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি সে অনুসারে যদি জনগণকে টিকা দেয়া যায় তাহলে বছরের শেষ দিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবার আশা করতে পারি। আমাদের আশা অনুযায়ী আনুপাতিক হারে জনগণকে টিকা দিতে হবে। যদি আমরা সেটা সফলভাবে করতে পারি তাহলে কমিউনিটিতে ভাইরাস সংক্রমণে মাত্রাটা হবে অল্প থেকে অধিকতর অল্প মাত্রার। এটাই আসল বিষয়, আর এমনটা বাস্তবায়ন হলে আমরা ধরে নিতে পারি এরকমের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে যেতে পারব।"

স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবার বিষয়টিকে আরও বিস্তর ব্যাখা করে ড. ফাউচি বলেন, "স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবার বিষয়টি এমন নয় যে আপনি লাইটের সুইচ অন করলেন আলো জ্বললো আর অফ করলেন তা নিভে গেল।আপনি এখন অস্বাভাবিক অবস্থায় আছেন তা থেকে হুট করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছেন। ধারাবাহিকভাবে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ। যেমন ধরুণ- রেস্টুরেন্টে জনসমাগম হবে সীমিত আকারে, থিয়েটার খুলতে হবে একি বিবেচনায়, আর এমন পরিবেশে স্কুল চালু করতে হবে যাতে সংক্রমণের ভয় না থাকে।"

একেবারেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ফাউচি জানান, "আমরা যদি সঠিকভাবে সবকিছু করতে পারি তারপরেও পুরো স্বাভাবিক জীবনে ফিরা সম্ভব হবে না। কিছু পরিবেশে আপনাকে মাস্ক পরিধান করার প্রয়োজন হবে। যখন ভাইরাসটি আর ক্ষতির কারণ হবেনা কিংবা ভ্যারিয়েন্ট আমাদের বড় রকমের সমস্যার কারণ না হয়, আমাদের টেষ্টা গুলো অব্যাহত রাখলে এ বছরের শেষ দিকে হয়ত সবকিছু স্বাভাবিকতার দিকে ফিরে যাবে। যদি আমরা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে এটা আশা করতে পারি।"

অন্য দেশ প্রসঙ্গে ফাউচি বলেন, "একেক দেশের ক্ষেত্রে ভাইরাস প্রতিরোধের চিত্রটা একেক রকম। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ভাইরাস প্রতিরোধ পরিস্থিতির সঙ্গে অন্য দেশের তুলনা করে লাভ নেই।যখন ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রাকে একেবারেই নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে, করোনা পজিটিভ রুগীর সংখ্যা তালানীতে চলে যাবে, তখনি কেবল আমরা চিন্তা করতে পারি একরকমের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবার।"

কেবি/