বাংলাদেশে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, বিরোধীদল দমন অব্যাহত: যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, বিরোধীদল দমন অব্যাহত: যুক্তরাষ্ট্র Photo: Just News BD

স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা

বাংলাদেশে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমকর্মী এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উপর দমন, নিপীড়ন, গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একিসঙ্গে মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং গ্রেফতারকৃতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারকে আহবান জানিয়েছে দেশটি।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশ ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র নেড প্রাইস। মানবাধিকার এবং মুক্তমত ছাড়াও ব্রিফ্রিংয়ে বিরুদ্ধমত দমন, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলেন দেশটির এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে অংশ নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট করসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান-, "মানবাধিকারকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে কাজ করে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন। বাংলাদেশে এখনো চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, অব্যাহত রয়েছে গুম এবং বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং বিচারব্যাবস্থাসহ সবকিছুতেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী। এখন তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ-উৎকন্ঠাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে’ -যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরার কারণে তলব করা হয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনারকে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনেও খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- ‘তাকে (খালেদা জিয়া) রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এটা এক ধরনের রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ।’ বাংলাদেশের এসকল বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানটা কী রকম? বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন কী শক্ত কোনো ভূমিকা গ্রহণ করবে?"

জবাবে মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, "আপনি সঠিক বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রয়েছ্ মানবাধিকার। যা বিশ্বের সকলস্থানের জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসি, তাহলে বলবো দুই পক্ষ অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন ধরুন- জলবায়ু মোকাবিলা। শ্রম এবং মানবাধিকারকে সম্মান দেবার ইস্যুতে আমরা নিয়মিত কথা বলে যাচ্ছি। বিগত বছরগুলোতে মানবাধিকারের কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যদি দেশটির নিজেদের চ্যালেঞ্জের কথাই বলি, যেমন ২০১৭ সাল থেকে ৮৬০,০০০ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটাকে স্বীকৃতি দিতেই হয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের বিষয়টি প্রশংসাযোগ্য হলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লংঘনের বিষয়ে আমরা এখনো উদ্বিগ্ন। ব্যক্তিগত মত প্রকাশের দায়ে যেসকল লোকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ক্রমাগত মামলা এবং গ্রেফতার করা হচ্ছে সে বিষয়টির দিকে আমাদের নজর রয়েছে।"

সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং বিরোধী দলের উপর নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্ট ওবামার সাবেক এই বিশেষ সহকারি বলেন, "সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম কর্মী এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর দমন, নিপীড়ন, গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। করোনা ভাইরাস শুরুর পর থেকে সরকারের মহামারি মোকাবিলার কার্যক্রম নিয়ে কথা বলায় আগ্রাসী তত্পরতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করার কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে অর্ধ শতকের বেশী মানুষকে। করোনা মহামারির শুরু থেকে এই আইনের আওতায় গ্রেফতার থেকে বাদ যাননি শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবিরাও। "

সরকারকে মতপ্রকাশ, সভা-সমাবেশ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহবান জানিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র বলেন, "মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক সরকারের শাসন ব্যবস্থার অন্যতম উপাদান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে আমরা যেরকমটা বলে থাকি, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কথা বলবো। ডিজিটাল নিরপত্তা আইনে আটককৃতদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানাই।"

কেবি/