ড. মোমেন ও শেখ হাসিনার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতের তাগিদ, বড় অংশীদার হিসাবে কথা বলার অবস্থান আছে: নেড প্রাইস

সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতের তাগিদ, বড় অংশীদার হিসাবে কথা বলার অবস্থান আছে: নেড প্রাইস

স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় অংশীদার- সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, বড় অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অনেক অভিন্ন বিষয়ে কথা বলার অবস্থানে রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে যেমন কথা বলার আছে তেমনি, উদ্বেগ জানানোরও অবস্থান রয়েছে।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করার আহবান জানিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওই মুখপাত্র বলেন, আমরা গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম শক্তিশালী করার আহবান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আইনের শাসন, মানবাধিকার, সভাসমাবেশের অধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, কর্মীদের অধিকার, নিরাপত্তা এবং শরণার্থীদের সুরক্ষার নিশ্চিত করার আহবান জানাই।

বৃহস্পতিবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফ্রিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রকে বিরোধি প্রশ্ন করার নির্দেশনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মানদীতে ফেলে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুমকি প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রশ্ন করা হয়। বাংলাদেশের আলোচিত-সমালোচিত এসকল বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইলে এভাবেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানান নেড প্রাইস।

ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান-, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে কী ধরনের প্রশ্ন করতে হবে তার একটা তালিকা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে মোমেন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ নাগরিক নিখোঁজ, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড চলছে, প্রতিবছর হাজারো আফ্রিকান-হেস্পানিক নাগরিকদের হত্যা করছে দেশটির আইনশৃ্ঙ্খলাবাহিনী। নিজেদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আস্থা নেই যুক্তরাষ্ট্রের।” রাশিয়ার আরটি টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেবার সমালোচনাও করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা নিয়ে। এর একদিন পরই গণমাধ্যমে এরকমের বার্তা পাঠান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কতৃর্ত্ববাদী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?

জবাবে নেড প্রাইস বলেন, "ভালো বলেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের একটা শক্তিশালী অংশীদারিত্বের সম্পর্ক রয়েছে। আর অংশীদার হিসেবে আমরা অনেক বিষয়েই কথা বলার অবস্থানে আমরা রয়েছি। দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে যেমন কথা বলার আছে তেমনি, উদ্বেগ জানানোর সুযোগও রয়েছে।"

তিনি বলেন, "আমরা নিয়মিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মানবাধিকার ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়ে আসছি। এই উদ্বেগ আমরা প্রকাশ্যে যেমন জানান দেই তেমনি অপ্রকাশ্যেও কথা বলি।"

বাংলাদেশ সরকারকে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা শক্তিশালী করার আহবান জানান নেড প্রাইস। তিনি বলেন "আমরা আহ্বান জানাই শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা, একই সঙ্গে শরণার্থীদের সুরক্ষা শক্তিশালী করতে।"

স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র বলেন, "বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তাদেরকে আমরা কমপক্ষে ৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছি। শুধু ২০২১ সালে খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নে কমপক্ষে ৩০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে ইউএসএইড। একই সঙ্গে গণতন্ত্রকে সমুন্নত করা এবং সুশাসন এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অন্তর্ভুক্ত পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্র। ফলে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।"

অপর এক প্রশ্নে সাংবাদিক মুশফিক বলেন, "বাংলাদেশ নিয়ে আরও একটি প্রশ্ন। বিরোধিনেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসকে পদ্মাসেতু থেকে নদীতে ফেলে দেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন, তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ব্যবহার করেছেন মুহাম্মদ ইউনুস। যাতে তাদেরকে শাস্তি দেয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাকে এভাবে শাস্তি দিতে হবে। তিনি চান তাদেরকে পদ্মাসেতু থেকে নদীতে ফেলে দেয়া হোক। দেখুন, তিনি প্রকাশ্যে একথা বলেছেন এবং দেশজুড়ে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ এসব বিক্ষোভকারীদের ওপর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল হামলা করছে। এ বক্তব্যের বিষয়ে কি বলবেন? "

জবাবে নেড প্রাইস বলেন, "সারাবিশ্বে আমরা যেমনটা করি, আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো সভাসমাবেশের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, যেকোনো দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভের অধিকারের প্রতি। এটা সার্বজনীন অধিকার। তা বাংলাদেশের জনগণের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, যেমনটা সারাবিশ্বে প্রযোজ্য। আমরা সরকার এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই এসব অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে। আমরা আহ্বান জানাই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দিতে, যাতে তাদের বক্তব্য শোনা যায়।"

এনএল/