যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

মানব পাচারে বাংলাদেশের অবস্থান সন্তোষজনক নয়

মানব পাচারে বাংলাদেশের অবস্থান সন্তোষজনক নয়

পাচার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিলেও বাংলাদেশের মানব পাচার পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। মঙ্গলবার রাতে মানব পাচার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

ট্রাফিকিং ইন পার্সন (টিআইপি) শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব পাচার রোধে ন্যূনতম যা করা প্রয়োজন, তা পুরোপুরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে গতবারের তুলনায় মানব পাচার রোধে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টা বেড়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ধাপের নজরদারির তালিকায় রাখা হয়েছে। মানব পাচার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনের র‌্যাংকিংয়ে তৃতীয়বারের মতো একই জায়গায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য, ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ টিয়ার টু ওয়াচলিস্টে ছিল এবং ২০২০ সালে টিয়ার টুতে উন্নীত হয়।

প্রতিবেদনে আগের মতো এবারো দেশগুলোর পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে তিনটি ধাপে। যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইনের (টিভিপিএ) বিষয়গুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ধাপগুলো তৈরি করা হয়েছে। মানব পাচার বন্ধে যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদণ্ড অর্জন করতে পেরেছে, সেগুলোকে প্রথম ধাপে রাখা হয়েছে। যেসব দেশ ন্যূনতম মানদণ্ড অর্জন করতে পারেনি কিন্তু প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্যভাবে, সেগুলোকে রাখা হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। আর যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদণ্ডও অর্জন করতে পারেনি, আবার পাচার বন্ধে উল্লেখযোগ্য চেষ্টাও চালাচ্ছে না, সেগুলোকে রাখা হয়েছে শেষ ধাপে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তি প্রদানে সরকারের প্রচেষ্টা বেড়েছে। এ ঘটনায় একজনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল বহাল রয়েছে। মানব পাচারের বিচারে ২০২১ সালের আগস্টে সাতটি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। এ ছাড়া জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) শ্রম কনভেনশনের প্রটোকল অনুসমর্থন করেছে।

তবে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে টিভিপিএর ন্যূনতম মান প্রতিপালন করতে পারেনি বাংলাদেশ। আগের বছরের তুলনায় পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়েছে। পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সেবায় ঘাটতি রয়েছে। রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলোর অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর বাড়তি ফি নেয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে। অবৈধভাবে শ্রমিক পাঠানো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে শ্রমিকেরা পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন।

রিক্রটিং এজেন্সিগুলো যেন অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে না পারে সেজন্য সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শসহ অন্যান্য সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে মানব পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারি বৃদ্ধিসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।