জাতিসংঘ হাইকমিশানরকে মুখ খোলার তাগিদ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের এটা পরিষ্কার করে বলে দেওয়া উচিত যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চলমান ঘটনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের মোতায়েনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ (এইচআরডব্লিউ) আর আট আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অবিলম্বে বন্ধে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফরে প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো উচিত বলে মন্তব্য করেছে যৌথ বিবৃতি দানকারী মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

বিবৃতিতে বলা হয়, সফরে মিশেল ব্যাচেলেট সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং রোহিঙ্গা শিবিরে যাবেন। সফরে তিনি যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর স্পষ্ট নিন্দা না জানান এবং এ অবস্থার পরিবর্তন না চান, তবে আওয়ামী লীগ তার নীরবতাকে ওই সব ঘটনার বৈধতাদানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে। সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলটি অধিকারকর্মীদের উপেক্ষা করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়ছে, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর শত শত মানুষ গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং মারা গেছেন। এই সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালে র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বাংলাদেশে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন, মানবাধিকারকর্মী ও তাদের পরিবার এবং মানবাধিকার সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে আজ প্রকাশ করা হয় এই বিবৃতি। এতে আরও বলা হয় গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনার সব অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করতে হবে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে।

গুম, খুন, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি, তাদের পরিবার ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই কমিশন গঠনে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সমর্থনদানের প্রস্তাব ব্যাচেলেটের দেওয়া উচিত বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এইচআরডব্লিউ ছাড়া বিবৃতি দেওয়া অন্য সংস্থাগুলো হলো অ্যান্টি–ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন), এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম–এশিয়া), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট (সিপিজেপি), ইলিওস জাস্টিস (মনাশ ইউনিভার্সিটি), ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ) ও রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট আগামী ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত থাকবেন তিনি।