জাতিসংঘ সংবাদদাতা
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ নেই মর্মে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য ও কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত এসংক্রান্ত রিপোর্টকে প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।
অপরদিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর ঢাকা সফরকালে দেয়া হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেটের বক্তব্য চুড়ান্ত বলে মনে করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিক।
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের পক্ষে প্রধান মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদেশেনি সোমবার এক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় জাস্ট নিউজকে বলেন, “এমন ভুল তথ্য দুঃখজনক। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে সরকার, সুশীল সমাজ এবং অনন্যা প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার বৈঠকে বাংলাদেশে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগের কথা বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। সফর শেষে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়েছে।”
গত ২৫ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট বিশ্ব পরিস্থিতির উপর সংবাদ সম্মলেনে দেয়া বক্তব্য কোনো বৈশ্বিক রিপোর্ট নয় উল্লেখ করে মুখপাত্র জানান, "দেশগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ মূলক এটি কোনো বৈশ্বিক রিপোর্ট ছিলোনা।”
মুখপাত্র রাভিনা বলেন, "বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুগুলো নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা করেছেন হাইকমিশনার। ২৫ আগস্ট তিনি জেনেভায় যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এসেছে। আর ঐদিন ছিলো রোহিঙ্গা গণহত্যার পঞ্চম বার্ষিকী।"
জাতিসংঘের ব্রিফিং
এদিকে সোমবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংএ এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান-মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগের জায়গায় বাংলাদেশ নেই-এ বিষয়টি উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় খবর ছড়ানো হচ্ছে। আসলেই কী জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন নয়? অথচ আমরা দেখেছি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের আহবান জানিয়েছেন ? এবিষয়ে আপনার প্রতিক্রায়া জানতে চাই? জাতিসংঘ কী মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেনা?
জবাবে মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিক একবাক্যে বলেন, 'আমি আপনাকে হাইকমিশনারের দেয়া বক্তব্যের প্রতি আবারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তিনি এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে কথা বলার অধিকারী শীর্ষ ব্যক্তি।'
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট বাংলাদেশ সফর শেষে গত ১৭ আগস্ট গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার না করে সরকারকে আমলে নিতে বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট। তিনি বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত সংস্থা গঠনের তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘের এই শীর্ষ কূটনীতিক।