বৃটেন প্রবাসি ২ সাংবাদিকের ভাইদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে সিপিজে

বৃটেন প্রবাসি ২ সাংবাদিকের ভাইদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে সিপিজে

সরকারের সমালোচনা করে রিপোর্ট লেখার কল্পিত দায়ে বৃটেন প্রবাসী দুই সাংবাদিকের ভাইকে বাংলাদেশ গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি সরকারকে নিঃশর্ত ছাড়াই অনতিবিলম্বে গ্রেফতার নূর আলম চৌধুরী পারভেজ এবং আব্দুল মুকতাদির মনুকে মুক্তি দিতে বলেছে।

গ্রেফতার প্রবাসী দুই সাংবাদিকের ভাইকে মুক্তি দেবার পাশপাশি তাদের পরিবারকে যেনো আর কোনাে ধরনের হয়রানি না করা হয় সেই আহবান জানিয়েছে সিপিজে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে সিপিজে বলেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বৃটেনের সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের ভাই নূর আলম চৌধুরী পারভেজকে নোয়াখালীতে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মামলাটি সম্পর্কে জানেন এমনক একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে সিপিজেকে ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের দায়ের করা এফআইআর-এ বলা হয়েছে, "বৃটেন বসবাস করা (সাংবাদিক) লিটন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন আর তাতে ইন্ধন যুগাচ্ছেন পারভেজ। জনগণের মনে সন্দেহ আর বিক্ষোভ তৈরি করতেই এমনটা করা হচ্ছে।"

এদিকে, ৯ সেপ্টেম্বর সাপ্তাহিক সুরমার বিশেষ প্রতিবেদক এবং লন্ডন বাংলা চ্যানেলের মালিক আব্দুর রব ভুট্টোর ভাই আব্দুল মুক্তাদির মনুকে মৌলভীবাজার শহর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নাম জানালে প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন এরকম ভয় থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি গ্রেফতারের এই বিষয়টি সিপিজেকে ফোন নিশ্চিত করেছেন।

সরকার প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করছে উল্লেখ করে সিপিজের এশিয়া পোগ্রাম বিষয়ক সমন্বয়ক বে লিহ ই বলেন, "ঝুঁকিতে থাকা সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের যে ভয়াবহ কায়দায় সরকার টার্গেট করছে সেদিকে কূটনৈতিক অংশিদার এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অবশ্যই নজর দেয়া উচিত। সরকারের অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে এবং নিঃশর্তভাবে গ্রেফতার নূর আলম চৌধুরী পারভেজ এবং আব্দুল মুকতাদির মনুকে মুক্তি দেয়া উচিত। একিসঙ্গে প্রবাসে থাকা সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার, হয়রানি কিংবা যেকোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক আচরণের শিকার করা বন্ধ করা উচিত।"

পুলিশের এফআইআর-এ মনু সম্পর্কে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে তিনি তার বৃটেন প্রবাসী ভাই ভুট্টো মিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাকে সরাতে চাচ্ছেন এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।

শেখ হাসিনা বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সফরের কয়েকদিন পূর্বেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গত ১৪ আগস্ট লিটন সাপ্তাহিক সুরমায় একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেন যেখান সরকারি কর্মকর্তারা টাকাপাচারে বিষয়ে জড়িত থাকলে তাদের জবাব দিহির আওতায় আনতে শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানানো হয়।

এক সূত্রের বরাত দিয়ে সিপিজে জানিয়েছে, পারভেজকে হয় তার ভাইয়ের সরকারের সমালোচনা করে সাংবাদিকতা করার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে নতুবা গত ৩০ আগস্ট লিটনের সংগঠন বৃটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশে গুমের প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ করেছে সেজন্য গ্রেফতার করা হয়েছে।

অন্যদিকে, মনুর মামলা সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র সিপিজেকে জানিয়েছে ভুট্টোর সমালোচনাধর্মী সাংবাদিকতার জন্যই মনুকে গ্রেফতার করা হয়েছে, নতুবা আগস্ট মাসে অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট কর্ণেল হাসিনুর রহমানের দুটি সাক্ষাতকার তার লন্ডন বাংলা চ্যানেলে প্রকাশ করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১১ এবং ২০১৮ সালে হাসিনুরকে সামরিক গোয়েন্দার দুই বার গোপনে আটক করেছেন বলে বক্তব্য দেবার পর বিষয়টি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর নজরে আসে।

সাংবাদিক ভুট্টো সিপিজেকে জানিয়েছেন, সাক্ষাতকার প্রকাশের পর থেকেই অজ্ঞাত জায়গা থেকে ফোন এবং ম্যাসেজে নানান রকম হুমকি পেয়েছেন। সমালোচনামূলক সাংবাদিকতা না করতে থাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

মনুকে গ্রেফতারের পর থেকেই তার সঙ্গে পরিবারকে সাক্ষাতের কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা।

অভিযোগগুলোর বিষয়ে পুলিশ, আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী অফিসে ইমেইলে যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর পায়নি সিপিজে।

এর আগে ২০২১ এর অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসি সাংবাদিক কনক সারওয়ারের বোন নুসরাত শাহরিন রাকাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হয়রানির শিকার হয়েছেন সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিলের মা।

এমএন/