নয়াদিল্লিতে ব্লিংকেন, আলোচনায় বাদ যাবেনা এ অঞ্চলের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার

নয়াদিল্লিতে ব্লিংকেন, আলোচনায় বাদ যাবেনা এ অঞ্চলের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার

মুশফিকুল ফজল আনসারী

জি- টুয়েন্টি সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন। পাশাপশি যুক্ত হবেন রাইসিনা সংলাপেও। ভূ-রাজনৈতিক এবং বর্তমানে চাপে থাকা অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনসহ নানান ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ এই দেশটিতে তাঁর এই সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে ইঙ্গিত করে বুধবার নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কৌশলগত সম্পর্কের অংশীদার। যেই সম্পর্কের গভীরতা ব্যাপক।

তিনি জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শংকরসহ দেশটির অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সবকিছু পাকাপোক্ত করে রাখা হয়েছে। জি-টুয়েন্টি ছাড়াও রাইসিনা সংলাপ, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে, আঞ্চলিক কৌশলগত বিষয়ে দফা-রফা, সর্বপরি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো দুই দেশের অভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের অবস্থান ভারতের মোদি সরকারের কাছে জানান দিতে নয়াদিল্লিতে ব্লিংকেন।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে ব্লিংকেনের ভারত ও মধ্য এশিয়া সফর এবং বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে এ তথ্য দেন মুখপাত্র নেড প্রাইস।

বুধবার মধ্য এশিয়া সফর শেষে নয়াদিল্লিতে পৌঁছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে তার এই সফরটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনে যোগ দেবার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ রয়েছে ব্লিংকেনের।

ব্রিফ্রিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, জি-টুয়েন্টি সম্মেলনকে সামনে রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থোনি ব্লিংকেন।তিনি এঅঞ্চলের স্থিতি ও নিরাপত্তার পাশাপাশি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মানুষের ভোটাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে নয়াদিল্লির সাথে আলোচনা করবেন বলে কী আপনি মনে করেন? কেনোনা বাংলাদেশ এসমস্ত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবিরত সংগ্রাম করে চলেছে।

জবাবে নেড প্রাইস বলেন, "কয়েক ঘন্টা আগেই (ব্রিফ্রিং চলাকালীন সময়) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। তিনি সেখানে জি- টুয়েন্টি এবং রায়সিনা সংলাপে যোগ দিবেন। সম্মেলনে যোগ দেবার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শংকরের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হবেন ।"

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কৌশলগত এবং গভীর উল্লেখ করে নেড প্রাইস বলেন, " ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক একটি বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব। এই অংশীদারিত্ব বিস্তৃত, গভীর এবং ব্যাপক। জি-টুয়েন্টি টেবিলে যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হবে সেগুলোও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কথা বলার সুযোগ পাবেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।"

এসব বিষয় ছাড়াও নতুন অনেক ক্ষেত্র যেমন- প্রযুক্তি, চার দেশের জোট-আইটুইউটু নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানান স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই সিনিয়র কর্মকর্তা।

নেড প্রাইস বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনা স্থান পাবে একটি মুক্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় দুই দেশের পরিকল্পনা নিয়ে।

এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের ওপর জোর দিয়ে নেড প্রাইস বলেন, "আপনার প্রশ্নের ব্যাপারে যেটা বলবো সেটা হলো-ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের দুই দেশকে একত্রিত করে তা হল অভিন্ন স্বার্থ। আমরা সকলেই একটি মুক্ত এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গড়ে তোলার বিষয়ে আগ্রহী। কিন্তু দুই দেশের জনগণ সম্পর্ক গভীর হয় আমাদের মধ্যে যৌথ মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার উপর নির্ভর করে। এবং অবশ্যই, বিশ্বের দুটি বৃহত্তম গণতন্ত্রিক দেশ হিসাবে, আমরা সবসময় এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করি যেনো আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারি, এবং আমাদের তত্পরতা যেনো আমাদের নিজেদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার অবস্থানে রাখে।”

অপর একপ্রশ্নে এই স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই করেসপন্ডেন্ট জানতে চান, "সম্প্রতি জি-টুয়েন্টি সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীরা রাশিয়া এবং চীনের বিরোধীতার কারণে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। জি- টুয়েন্টিকে এই রাজনীতিকরণের বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?"

জবাবে নেড প্রাইস বলেন, " পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের একটি চূড়ান্ত ঘোষণা সংক্রান্ত আলোচনা চলছে, তাই আমি আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে আমি যা বলব তা হল জি- টুয়েন্টিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম। আমরা এই বছরের এই ফোরামে ভারতের নেতৃত্ব এবং এর কার্যকর ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাই এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম যেখানে, ভারতীয় নেতৃত্ব অংশগ্রহণকারীরা প্রতিনিধিদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলতে সক্ষম হবেন। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ফেন্টানাইল এবং মাদকদ্রব্যের মতো সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে কথা বলার সুযোগ নিশ্চিত করবে যা অবশ্যই এই দেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মানুষের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, জি- টুয়েন্টি কোনো নিরাপত্তা ফোরাম নয় তবে গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে নিরাপত্তা নিয়ে এই ফোরামের সদস্যরা যে আলোচনা করেছেন তা গুরুত্বপূর্ণ।

যৌথ বিবৃতি প্রসঙ্গে নেড প্রাইস বলেন, "গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীরা সম্মলেনে যে বিষয়ে আলোচনা করেছেন তােত বুঝা যায় সম্মেলনে অগ্রগতি হচ্ছে, অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিয়ে কথা হয়েছে। বিভাজন রয়েছে, এটা রাশিয়া এবং চীন যারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। আপনি দেখেছেন যে গত সপ্তাহে ভারত থেকে আসা বিবৃতিতে এটি খুব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে সম্মেলনের ফলাফলটা দেখতে এ সপ্তাহটা আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।"