ওয়াশিংটনে রাইট টু ফ্রিডমের আলোচনায় প্যানেল আলোচকরা 

সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে, র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা

সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে, র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা

জাতীয় নিবার্চনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ সরকারকে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের আহবান জানাচ্ছে। শুধু আহবানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে করনীয় নির্ধারণেও সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে ওয়াশিংটন।  

সোমবার ওয়াশিংটন ভিত্তিক অধিকার সংগঠন-রাইট টু ফ্রিডম’র আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত 'বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

এতে বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটি একটি গেম চেঞ্জার। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন  ঢাকাকে এই বার্তা দিয়েছে যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিশ্চিতে তাদের অবস্থান কতোটা কঠোর হতে পারে।

রাইট টু ফ্রিডম এর প্রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলামের সঞ্চালনায় এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এম মনসুর (ভার্চুয়ালি অংশ নেন) এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেপুটি চিফ অফ মিশন জন এফ ড্যানিলোভিজ।

আলোচনার শুরুতেই দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন উড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।

কুগেলম্যান বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিলতর হচ্ছে। তারা চাচ্ছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের প্রভাব তৈরি করতে । আমার মতে যুক্তরাষ্ট্র চায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর চীনের অর্থনীতির নির্ভরতা কমাতে। ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত উভয় দেশই বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোতে চীনের প্রভাব বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্য রয়েছে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ, নৌপথের আধুনিকায়ন, পশ্চিম এবং ভারত মহাসাগরে তৎপরতা বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে চীন নৌঘাঁটি বানানোর বিষয়টির কথা বলা যেতে পারে।”

বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে কুগেলম্যান বলেন, “ঢাকার উপর ক্রমাগত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। আর কেমন প্রভাব পড়ছে সেটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে। বিরোধীদলকে কঠোর হস্তে দমন করার নীতি অবলম্বন করেছে সরকার। আবার পিছু হটতেও বাধ্য হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সরকার কিছু সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হলেও সাম্প্রতিক বছর এবং মাসগুলোতে আমরা একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। সরকার বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। চাপটা দেশের ভিতর থেকে তৈরি হলেও এটা আঞ্চলিকভাবে তৈরি হচ্ছে, আরও বিস্তৃত বললে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ তৈরি হচ্ছে।”

কুগেলম্যান বলেন, “একদশকের বেশী সময় ধরে দেশ চালাতে গিয়ে বেশ কিছু অর্থনৈতিক সফলতা রয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারের। দারিদ্রতা ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। সরকার মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি বিশাল অংশকে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে সেটি সাধুবাদ জানানোর মতো বিষয়। জলবায়ু মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার যেসকল পদক্ষেপ নিয়েছে আমরা সে প্রসঙ্গের কথা উল্লেখ করতে পারি।”

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোনো পক্ষে যোগ দিতে চাপ দিচ্ছেনা উল্লেখ করে উড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক বলেন, “তিন বছর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ভালো। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে বেইজিং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্যাটিজির অংশ হতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্যাটিজির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করে। গত মাসে ঢাকা ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্যাটিজি নিয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা তুলে ধরেছে। রিজভীর মন্তব্যের কয়েক সপ্তাহ পরই বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের দূত ঢাকাকে ইন্দোপ্যাসিফিক কোয়ালিশনে যোগ না দেবার আহবান জানায়। এবং এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে সতর্ক করে।”

বাংলাদেশের অবনতিশীল গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কুগেলম্যান বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার দুর্বল রেকর্ডের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নজরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটি গেম চেঞ্জার বলে আমি মনে করি। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে এই বার্তা দিয়েছে যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিশ্চিতে দেশটি অবস্থান কী হবে। এই নিষেধাজ্ঞা ঢাকাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এর ফলাফলটা আমরা দেখতে পেলাম কয়েক সপ্তাহ আগেই যখন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ঢাকায় গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যান তখন সরকার দলের কর্মীদের দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হন।”

আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে কুগেলম্যান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশ সরকারকে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের আহবান জানাচ্ছে। সরকার কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপ নিবে সেটাই দেখার বিষয়।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু না হলেও কিছু আঞ্চলিক মিত্রের সমর্থন রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারত সরকারের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তারা চায়না দলটি ক্ষমতার বাইরে থাকুক। আর বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে চীনের মোটেও কোনো মাথাব্যাথা নেই।”

ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান প্রসঙ্গে কুগেলম্যান বলেন, “বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য প্রধান মিত্রদরে সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করতে চায় না। তারা ইন্দোপ্যাসিফিক পলিসিতেও যুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটি চায় র্যাবের নিষেধাজ্ঞা যেন প্রত্যাহার হয়। তারা দুই দিকেই ভারসাম্য রাখতে চায়।”

এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে দায়িত্বপালন করা  এম এফ’র প্রাক্তন মিশন প্রধান এবং অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এম মনসুর বলেন, “বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিলগ্ন পার করছে। এখানে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক স্বার্থের বিষয় জড়িয়ে পড়েছে। যুদ্ধের পর বাংলাদেশের যখন যাত্রা শুরু হয়, তখন ছিলো খাদ্য স্বল্পতা, ক্ষুধা, ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো। বাংলাদেশকে তখন সবচাইতে দরিদ্র দেশগুলোর একটি মনে করা হতো। আমি মনে করতো পারি দারিদ্রতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ২য়। মাথাপিছু আয় ছিলো ১০০ ডলারের কম। আমাদের শুরুটা এমনি ছিলো। মাথাপিছু আয় এখন ২,৭০০ ডলার ছাড়িয়েছে। এটাকে অগ্রগতি বলা যায়।”

ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বড় রকমের দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। নীতিমালার অভাবে এই ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। যারা এখানে রয়েছে তারা ব্যাংকার নন, অনেকে ব্যবসায়ী যারা নিজের স্বার্থে ব্যাংক ব্যবহার করছে।”

“বাংলাদেশে অর্থনীতির ভিত্তি মূলত নব্বই দশক থেকে শুরু এবং ২০০১ সালের পর থেকে এটি শক্ত অবস্থানে উন্নীত হয়  তখনকার অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করে,” যোগ করেন ড. মনসুর।

দূর্নীতি, সুশাসনের অভাব এবং গণতন্ত্রের সংকট দেশের অর্থনীতির প্রগতির পথে বড় বাধা বলে মনে করেন তিনি। 

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেপুটি মিশন চিফ জন এফ ড্যানিলোভিজ বলেন, “বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যা ঘটেছে তা নিয়ে অব্যাহত উদ্বেগ জানিয়ে আসছে হিউম্যান রাইটস  ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস, আরকে ফাউন্ডেশন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ইস্যুতে এই মানবাধিকারের প্রসঙ্গটা গুরুত্বপূর্ণ, যেটা নিয়ে আমরা সবাই ভাবছি।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনকে সামনে রেখে এরকম সংলাপ আয়োজনের দরকার রয়েছে। এটা ঢাকা এমনকি এর বাইরে অন্য দেশেও প্রয়োজন রয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।”

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের হয়রানি প্রসঙ্গে ড্যানিলোভিজ বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতার থাকতে হবে। আমরা যদি বিগত কয়েকদিন পেছেন থাকাই তাহলে দেখতে পাবো বাংলাদেশে সাংবাদিকরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রধান সারির গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “গ্রামীন ব্যাংকের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে নিজেদের প্রধান টার্গেটে পরিণত করেছে ক্ষমতাসীন সরকার। অন্যান্য এনজিও এধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।”

ড্যানিলোভিজ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশ সরকার পররাষ্ট্রনীতিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা পরিবারের কর্তৃত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার প্রতি কারা অনুগত সেটাকে বিবেচনা করা হয়।”

তিনি বলেন, “বিএনপি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে দাবী জানাচ্ছে সে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া দরকার।”

ড্যানিলোভিজ বলেন, “বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলপ্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নজরদারি প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। বিরোধীদলের আন্দোলন এবং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের স্পর্শকাতর প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।”

প্রবাসী সাংবাদিকদের সরকারের হয়রানি প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেপুটি মিশন চিফ জন এফ ড্যানিলোভিজ বলেন, “দেশের বাইরে যেসব সাংবাদিকরা সরকারের সমালোচনা করে তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব বিষয়গুলো বতর্মান পরিস্থিতিকে অতীতের চাইতে অধিকতর কঠিন করে তুলছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বিষয়গুলো আলোচনায় আনতে হবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য শুধু আগামী নির্বাচনটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বলা হলো সেগুলো মধ্য মেয়াদের পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শুধু সরকার নয় বরং বিরোধীদলকেও এ চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।”

ড্যানিলোভিজ বলেন, “ক্ষমতার পালাবদলের প্রক্রিয়াটা কেমন হবে সেবিষয়ে সরকার এবং বিরোধীপক্ষকে মনযোগ দেয়া প্রয়োজন। র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা, কিংবা আরও যত ধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেটা একধরনের চাপ প্রয়োগ। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো এটা পরিবর্তনে কতটুকু প্রভাব তৈরি করে তা দেখা।”

প্যানেল আলোচনায় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে নির্বাচন প্রসঙ্গে একজন জানতে চান, “এর আগেও সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল আগের রাতেই উদযাপন করা হয়েছিল। সব কিছুই কারচুপিতে ভরা ছিল। এরপর সারা বিশ্বের সবাই বলেছিল, আপনাদের অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা উচিত, আর কখনো এমনটা করা উচিত নয়! সামনের নির্বাচনে এর ভিন্ন আর কী হতে পারে?”

জবাবে ড্যানিলোভিজ বলেন, “আমরা যা করতে পারি তা হল নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার জন্য যেসব উপাদান অবদান রাখে সেগুলোতে নজর দিতে পারি৷ সেগুলোকে ঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারি। একটা ইস্যু রয়েছে পর্যবেক্ষক, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই।”

একজন মানবাধিকার কর্মী বলেন, “র‍্যাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় তারা জঙ্গি দমন করেছে, এটা, সেটা। নির্বাচনে পর্যবেক্ষকরা কিইবা করতে পারবেন যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে?”

এ প্রশ্নের উত্তরে কি কুগেলম্যান বলেন, “র‍্যাব কর্তৃক নির্যাতনের বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত। অনেকদিন পর্যবেক্ষণের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন দেখলো কোনো ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে না, বড় পদক্ষেপ নিতে হবে, তখনই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো। এটা অনেক বড় পদক্ষেপ কারণ বিগত বছরগুলোতে তালেবান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কারো উপর দেশটির নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার নজির নেই।”

চীন ও ভারত সরকারকে টিকিয়ে থাকতে সাহায্য করছে এমন প্রসঙ্গ উঠলে ড্যানিলোভিজ বলেন, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকার সমর্থকরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। সে কারণেই চীন বাংলাদেশে 'খেলতে' এসেছে। এখানে চীনের প্রকল্প এবং বিনিয়োগের সাথে দুর্নীতির সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া, আমি চীনের এই রেজিমের পিলার হওয়ার মতো কিছু দেখি না। ভারতের সমর্থন অনেকটা নৈতিকভাবে এবং সেটা দৃঢ়। এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারত সরকারের সাথে কথা বলছে। আশা করি, আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে (বাংলাদেশকে) দেখবো, ভারতও তাই করবে। একেপেশে ভাবে দেশটিকে দেখলে তা যে দীর্ঘমেয়াদে তাদের জন্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে তা তারা ভেবে দেখবে। কিন্তু, আমি জানি এই চ্যালেঞ্জটি জটিল।”

অ্যাম্বাসেডর মাইলাম তার বক্তব্যে বলেন, “নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কিছু করা হলে তা তাদেরকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেবে। তখন মানুষের সব প্রশ্নের উত্তরই হবে সহিংসতা। আমার মনে হয় না কোনো সরকার, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার অংশ হবে।”

আলোচনার এক পর্যায়ে বিরোধী দলগুলো কর্তৃক ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করাকে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল বলে বর্ণনা করেন অ্যাম্বাসেডর মাইলাম। 

ন্যাশনাল প্রেসক্লাব ওয়াশিংটনের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, স্কলার, কূটনীতিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউএসআইপি, এনডিআই, সিআরআই, নেড, বিশ্বব্যাংক, ফ্রিডম হাউস, এনপিআরসহ নানা সংস্থার প্রতিনিধির অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত ওই আলোচনা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল রাইট টু ফ্রিডমের ফেসবুক পেইজসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। 

এমএন/