জাতিসংঘের ব্রিফ্রিংয়ে শামসুজ্জামানের আটক, মতিউর রহমানের মামলা এবং জুলকারনাইনের ভাইয়ের ওপর হামলা প্রসঙ্গ

সাংবাদিকদের ওপর ক্রমাগত নিপীড়নে জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বিগ্ন: মুখপাত্র ডোজারিক

সাংবাদিকদের ওপর ক্রমাগত নিপীড়নে জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বিগ্ন: মুখপাত্র ডোজারিক

মুশফিকুল ফজল আনসারী

সাংবাদিকদের ওপর ক্রমাগত নিপীড়ন, হামলা এবং গ্রেফতারের ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্থোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিক।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক অব্যাহত সাংবাদিক নিপীড়নের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ মন্তব্য করেন তিনি।

গণমাধ্যম স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে ডোজারিক বলেন, নিপীড়ন এবং গ্রেফতারের কারণে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের মিডিয়ার ওপর সরকারের খড়গ হস্ত হবার বিষয়টি উল্লেখ জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "বাংলাদেশে মতপ্রকাশ এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার ওপর দমন-নিপীড়ন চলমান রয়েছে। গতকাল প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসেছে সরকারের বাহিনী। এরপর সরকার তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। একই আইনে মামলা করা হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ  পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধেও। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে আল জাজিরায় অনুসন্ধানি ইউনিটে কাজ করা সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামির ভাইকে ঢাকায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছিলো। জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রে এরকম মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবনমনের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?"

জবাবে ডোজারিক বলেন, "এবিষয়ে আজকের ব্রিফ্রিংয়ের শুরুতেও জেমসের (আল জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক) এক প্রশ্নের উত্তরে কথা বলেছি। জাতিসংঘ মহাসচিব বিষয়টি নিয়ে বার বার কথা বলেছেন এবং বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের ওপর যে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে তা নিয়ে তিনি অব্যাহতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছেন। মহাসচিব এ বিষয়টিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সাংবাদিকরা নিপীড়ন এবং গ্রেফতারের শিকার হচ্ছেন। এটা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকে খুব কঠিন করে তুলেছে।"

আমরা যে বিশ্ব প্রত্যাশা করি সেখানে মুক্ত গণমাধ্যম হচ্ছে একটি মেরুদন্ড বলে উল্লেখ করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মুখপাত্র।

উল্লেখ্য, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ২৬ মার্চ একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান। সাধারণ মানুষ কতটা কষ্ট দিন কাটাচ্ছে সেবিষয়টিই তুলে ধরেছিলেন জনগণের সামনে।  স্বাধীনতা দিবসে তাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে দিনমজুর জাকির হোসেন বলেন,  ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ তার এ বক্তব্য ছিলো দেশের চলমান দুর্দশার বাস্তব এক চিত্র। সাধারণ মানুষ তার বক্তব্যকে সমর্থন করে এবং খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়। আর তাতেই শাসক গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হতে হয়েছে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে। ২৯ মার্চ ভোর রাতে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসে গোয়েন্দা বাহিনী।সেই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধেও।

এদিকে, গত ১৭ই মার্চ আল জাজিরায় কাজ করা বৃটেন প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামির ভাই মাহিনুর আহমেদ খানের ওপর হামলা চালিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। ‘নতুন সাংবাদিক হয়েছ, দেশ নিয়ে লেখো’-এই কথা বলে তারা মারধর করতে থাকেন মাহিনুরকে।

জুলকারনাইন  অভিযোগ করেছেন, মাহিনুরকে মারধর করার সময় তার (জুলকারনাইন) সাংবাদিকতা করা ও সরকারবিরোধী কথা বলার বিষয় হামলাকারীরা উল্লেখ করেছেন।

এমএন/