অস্ত্র বিক্রি নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্ট

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান যুক্তরাষ্ট্রের

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান যুক্তরাষ্ট্রের Photo by Ken Kobayashi

মুশফিকুল ফজল আনসারী, স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুর্নবিবেচনা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একিসঙ্গে দেশটির জান্তা সরকারের কাছে কেউ যেন অস্ত্র ব্রিক্রি না করে এবং অস্ত্র বানানোর কাঁচামাল সরবরাহ না করে সেটা বন্ধ করতে যেন শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয় সে আহবানও জানিয়েছে দেশটি।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত টম এনড্রুস দেশটির জান্তা সরকারের কাছে বিভিন্ন দেশের অস্ত্র সাপ্লাই দেবার বিষয়টি নিয়ে গত ১৭ মে একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণতান্ত্রিক সরকারকে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করার পর বেশ কয়েকটি দেশ থেকে জান্তা সরকার এক বিলিয়ন ডলারের বেশী অস্ত্র এবং অস্ত্র বানানোর কাঁচামাল কিনেছে।

জাতিসংঘের পরিচালিত ১০ মাসের এই তদন্তে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক যে কয়টি চক্র মিয়ানমারকে অস্ত্রের চালান দিয়েছে তার শীর্ষে রয়েছে- রাশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, ভারত এবং থাইল্যান্ড।

মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফ্রিংয়ে আসেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। প্রশ্নোত্তর পর্বে মিয়ানমার প্রসঙ্গে তার কাছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণতান্ত্রিক সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করার পর থেকে এ পর্যন্ত এক বিলিয়ন ডলারের বেশী অস্ত্র এবং অস্ত্রের কাঁচামাল ক্রয় করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এ অস্ত্রের সাপ্লাইয়ের যোগানদাতাদের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, চীন এবং ভারত। এই অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে যার গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলন করছে তাদের বিপক্ষে। এবিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?"

জবাবে মিলার বলেন, "আমি ঐ রিপোর্টটি সম্পর্কে অবগত নই। এ বিষয়ে আপনাকে পরে অবগত করা হবে।"

ব্রিফ্রিং শেষে এই প্রশ্নের একটি লিখিত জবাব পাঠান যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূতের তদন্ত রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্র এই প্রতিবেদকের করা প্রশ্নের জবাবে বলেন, "মিয়ানমারের বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানির যে তদন্ত রিপোর্ট জাতিসংঘ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র তাকে স্বাগত জানায়। মিয়ানমার জান্তা সরকার নৃশংস মানবাধিকার লংঘনে এসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে।"

তিনি বলেন, "বিদেশি বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ব্যক্তিমালিকানাধিন কোম্পানি মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে বর্বর কর্মকান্ড এবং মানবাধিকার লংঘনে জান্তা সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।"

সেনা অভ্যুত্থানের জন্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে যুক্তরাষ্ট জবাব দিহিতার আওতায় আনতে চায় উল্লেখ করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র চায় মিয়ানমারের জান্তার কাছে অস্ত্র বিক্রি আর তাদের সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে।"

মিয়ানমারের ৮২ ব্যক্তি এবং ৩৮ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যারা অস্ত্র সরবরাহে জড়িত তারাও রয়েছে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায়।

মিয়ানমারে জনগণের ওপর পরিচালিত বর্বরতা বন্ধে দেশটিতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করাটা জরুরি বলে মন্তব্য করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র।

জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে বিরোধীদলকে নৃশংস কায়দায় দমন করতে আকাশ থেকে বোমা নিক্ষেপ করছে দেশটির জান্তা বাহিনী এবং যারা জান্তা সরকার বিরোধী তাদের গ্রামে গ্রামে হামলা করছে।
এতে বলা হয়, ক্ষমতা দখলের পরপরই নাটকীয়ভাবে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে জান্তা সরকার।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে অত্যাধুনিক অস্ত্রের মূল জোগানদাতা রাশিয়া এবং চীন। জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর ২০২২-২৩ সালে রাশিয়া প্রায় ৪০৬ মিলিয়ান ডলার এবং চীন  ২৬৭ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে দেশটির জান্তা সরকারের কাছে।  ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা ২৫৪ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে।

এতে বলা হয়, অস্ত্র ব্যবসার লেনদেনে সিঙ্গাপুরের ব্যাংকগুলো বেশী ব্যবহার করেছে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ড থেকে অস্ত্র বিক্রি ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশটি সিঙ্গাপুরের বিকল্প হয়ে উঠেছে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকে ভারত দেশটির কাছে প্রায় ৫১ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে বলে জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এনড্রুস মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র  বিক্রি এবং সরবরাহে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা দেবার আহবান জানিয়েছেন।

এমএন/