বিরোধীদল নিপীড়ন, মতপ্রকাশে বাধা, বিচারহীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ

বাংলাদেশে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য

লন্ডন, জুন ১৮ (জাস্ট নিউজ): বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশিদার হিসেবে দেশটি সবসময়ই এ বিষয়টি আহবান অব্যাহত রাখবে বলেও জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসের সদ্য প্রকাশিত মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র বিষয়ক ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অধ্যায়ে নিজেদের এ মতামত তোলে ধরেছে দেশটি। নির্বাচন স্বচ্ছতার আহবানের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতি, মতপ্রকাশের বাধা দান এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি, নিপীড়ন এবং রোহিঙ্গা ইস‌্যুসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৭ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কার্যত কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সদস্য কর্তৃক নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে, আর এসবের নির্ভরযোগ্য তথ্যাদি রয়েছে। একইভাবে সরকারের পীড়ন অব্যাহত রয়েছে বিরোধীদলসমূহ, সুশীল সমাজ আর মিডিয়ার উপরেও।

মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য বারবারই বাংলাদেশ সরকারে কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মিডিয়া এবং সুশীল সমাজের কাছে পাওয়া তথ্য জানান দিচ্ছে যে বাংলাদেশে গুম বেড়েছে, আর তাতে আইনশৃঙ্খলবাহিনী জড়িয়ে পড়ছে। হিউম‌্যান রাইটসের তথ্যমতে ২০১৭ সালে ৮০ জনেরও বেশি লোককে গোপনে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং গুম করা হয়েছে। এরকম ১৭ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এর আগের বছরগুলোতেও এসব ঘটনা ঘটে থাকলেও তার কোনো সমাধা মিলেনি।

এতে বলা হয়, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। আর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এসব হত্যাকে ক্রসফায়ার বলে চালিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্যমতে ২০১৭ সালে ১৫৪ টি বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে।

বিরোধী দলের নেতাদের উপর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার বিরোধীদলসমূহের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা আরোপ করেছে। সরকার বিরোধীদলগুলোকে স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দিচ্ছে না।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিচারবিভাগের স্বাধীনতার বেহাল দশার সমালোচনাও করা হয়। এতে বলা হয়, সাংবিধানিক একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সরকার গত নভেম্বর মাসে জোরপূর্বক দেশটির প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। বিষয়টি দেশটির বিচারবিভাগের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি রোধে কার্যত কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মৃত্যুদন্ড ব্যবস্থা বন্ধ করার আহবান জানিয়ে বলা হয়, মৃত‌্যুদন্ড ব্যবস্থা বন্ধে বাংলাদেশে কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছেনা। ২০১৭ সালে ২৫৩ জনকে মৃত‌্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে, কার্যকর হয়েছে ৬টির। যুক্তরাজ্য সর্বাবস্থায় মৃত‌্যুদন্ডের বিরোধীতা করে।

বাংলাদেশে স্বাধীন মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্থ হওয়া চিত্র তোলে ধরে বলা হয়, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম এর মত প্রকাশের স্বাধীনতা সূচক ইনডেক্স অনুযায়ী ২০১৭ সালে ১৮০ টি দেশের মধ্য বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬ তম। আগের বছরের তুলনায় আরো দুই ধাপ অবদমন ঘটেছে এখানে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যনুসারে ২০০৬ সালে তৈরি বিতর্কিত ৫৭-ধারায় ২০১৭ সালে ৫৪ জন সাংবাদিককে জেলে যেতে হয়েছে। সরকার যদিও এ ৫৭ ধারা সংশোধন করার কথা বলছে তবুও সম্প্রতি করা খসড়া আইনটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো। আমরা সাংবাদিকদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, একিসঙ্গে তাদের অধিকার এবং নিরাপত্তার পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছি।

প্রতিবেদনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। আর এ ইস্যুতে যুক্তরাজ্য পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে রাখাইনে ফিরে যাবার বিষয়ে সরকারের বক্তব্যকে সমর্থন করে যুক্তরাজ্য। একিসঙ্গে রাখাইন পরিস্থিতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে কাজ করে যাবে দেশটি।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/০৩৩০ঘ)