সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

ফিলিস্তিন-ইসরাইল চাইলে দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব

ফিলিস্তিন-ইসরাইল চাইলে দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব

নিউইয়র্ক থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারি, সেপ্টেম্বর ২৭ (জাস্ট নিউজ): মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন এবং ইসরাঈল দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব এবং এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি নেই বলে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বুধবার লট নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন ট্রাম্প।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমার ব্যক্তিগত অনুধাবন হচ্ছে-মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা খুবি জরুরি। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা কঠোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি, দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটা বাস্তবায়নযোগ্য। তবে নির্ভর করে উভয়পক্ষের স্বদিচ্ছার উপর, রাষ্ট্র একটা হবে কিংবা দুইটা- এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীদের ছিল সরব উপস্থিতি। প্রেসিডেন্ট একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত হলেও হাসিমুখে নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেন। ফিলিস্তিন-ইসরাইল ছাড়াও রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, জাপান, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অভিযোগ এবং বাণিজ্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক তিক্ততা সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আমার সম্পক খুবই হৃদ্যতাপূর্ণ। চীনের জনগণও খুবি সম্ভাবনাময়। মূল সমস্যাটা হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে নিয়ে। এর চুক্তিতেই যত ত্রুটি।যদি এ সংস্থা বাদ দিয়ে চীনাকে ভাবা হয় তাহলে তফাতটা ধরা যাবে। উল্টো ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা মাসে মাসে গুণতে হচ্ছে বিলিয়ন ডলারের কর।

সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ট্রাম্পের ভাষণের সময় হলজুড়ে যে হাস্যরসের তৈরি হয় সে বিষয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বলেন, বিষয়টিকে সংবাদ মাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা এক ধরনের ফেইক নিউজ। হলে উপস্থিত যারা ছিলেন তারা আমাকে তুচ্ছ করে হাসেননি বরং আমার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে হেসেছেন। আমরা মজা করেছি। এটা আমাকে লক্ষ্য করে কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সংবাদ সম্মেলনে ইরান প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “অন্য বিশ্ব নেতারা ইরান নিয়ে কি ভাবেন সেটা আমাদের কাছে কোনো বিষয় নয়। ইরানকে আমার কাছে ধরনা দিতে হবে, হয়তো তারা এ জন্য কোনো চুক্তির প্রস্তুতিও নিতেও পারে, অথবা নাও হতে পারে।”

তিনি বলেন, “ইরান চরমভাবে ধুঁকছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ের চাইতে তাদের এখনকার সময়টা খুবি বাজে যাচ্ছে। প্রতিটি শহরেই দাঙ্গা লেগে আছে।ওবামা সেসময় শুধু ইরান সরকারের সুবিধার দিকটিই দেখেছে, তাদের জনগণের কথা ভাবেনি।তবে আমি ইরানের জনগণের পক্ষে।”

সিরিয়ায় বর্তমানে একটি দুর্যোগময় পরিস্থিতির মুখোমুখি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি আহবান করেছিলাম এমনটা যেন না ঘটে। যখন জানলাম সিরিয়ার ইদলিবে অপারেশন চালানোর জন্য ৩০ লাখ মানুষকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া, ইরান আর সিরিয়া। মাত্র ৩৬,০০০ সন্ত্রাসীকে ধরতে তারা বোমা নিক্ষেপ শুরু করবে এতগুলো মানুষের উপর-আমি বললাম এটা করতে দেয়া যাবেনা। সামাজিক মাধ্যমসহ সব জায়গায় এর বিরুদ্বে আওয়াজ তুললাম, মাইক পম্পেও এবং জন বোল্টনসহ সবাইকে এ আদেশ দিলাম যে-এটা ঘটতে দেয়া যাবে না। আপনারা শেষতো দেখেছেন হামলা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।

নাফটা চুক্তি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি এটাকে মোটেও পছন্দ করিনা। এটা কানাডা এবং মেক্সিকোকে সুবিধা দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। এ চুক্তির কারণে হাজারো লোক চাকরি হারাচ্ছে। একের পর এক কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের স্বার্থ রক্ষা করে মেক্সিকোর সঙ্গে নতুন চুক্তি করেত চাচ্ছি।

উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। উত্তর কোরিয়া পাহাড় বেষ্টিত সুন্দর একটি দেশ। এমন একটা সময় ছিলো আনবিক বোমার পরীক্ষা চালানোর কারণে পাহাড়ের চেহারা পর্যন্ত পাল্টে যেতো। আমরা সেটা বন্ধ করেছি। উত্তর কোরিয় নেতা কিম জং উন আর আমি এখন হাসিমুখে ভাব বিনিময় করি- যেটা কেউ কেউ ভয়ংকর বলেও সমালোচনা করেন! সাবেক প্রেসিডেন্টরা যেটা পারেননি, আমি সেটা করে দেখিয়েছি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নারীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে বেশ বিনয়ি সুরেই ট্রাম্প বলেন, মাফ করবেন। আমাকে এখানে দোষী বানানো হয়েছে। আমার মনে চারজন মহিলা এ দোষারোপ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আরো জানতে চাইলে হেনিটি’র সঙ্গে কথা বলতে পারেন। যোগাযোগ করতে পারেন সংবাদ মাধ্যম ফক্সের সঙ্গেও-তারা বিষয়টি কভার করে শক্তিশালী সংবাদ তৈরি করেছে।এবং বলেছে যারা অভিযোগ করেছে তারা ঘুষ নিয়েছে।

জাপানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, জ্বালানি এবং গ্যাসের বিষয়ে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সহায়তা করছে সেটা অবিশ্বাস্য। তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যা কিনছে তার পরিমাণকে দ্বিগুণ করে নিয়েছে। দেশটি এলএনজি আমদানি দ্বিগুণ করেছে। আমরা সবার সঙ্গে ভারসাম্যমূলক বাণিজ্য করতে চাই।

বিচারক কাভানাগের শুনানি এবং তার বিষয়ে আনা অভিযোগের ব্যাপারে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বছরের পর বছর এফবিআই তদন্ত করেছে। তারা কাভানাগ বিষয়ে ভালো করেই জানে। অভিযোগের কিছুই তারা খুঁজে পায়নি। এ ঘটনায় ডেমোক্রেটদের মনে কোনো প্রভাব ফেলবেনা।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/০০১০ঘ)