ওয়াশিংটন প্রেস ক্লাবে বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সিনহা

প্রধান বিচারপতি যেখানে ন্যায় বিচার বঞ্চিত সেখানে অন্য কারোরই সুবিচার অসম্ভব

প্রধান বিচারপতি যেখানে ন্যায় বিচার বঞ্চিত সেখানে অন্য কারোরই সুবিচার অসম্ভব

ওয়াশিংটন থেকে বিশেষ সংবাদদাতা, সেপ্টেম্বর ২৯ (জাস্ট নিউজ): বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই উল্লেখ করে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, যে দেশে একজন প্রধান বিচারপতিই ন্যায় বিচার পাননা, সেখানে অন্য কোনো ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদদের অবস্থাটা কি সেটা আসলে প্রভুই ভালো জানেন।

বিদেশে শরণার্থীর মতো করে জীবন কাটাচ্ছেন মন্তব্য করে সিনহা বলেন, তিনি নিজের জীবন নিয়ে শংকিত। দেশে কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই, ফিরে গেলে খুন হতে পারেন বলেও আশংকা প্রকাশ করেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি।

শনিবার ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে নিজের সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক বই ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। রাইট টু ফ্রিডম’র আয়োজনে প্রকাশনা অুনষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উড্রো উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম।

বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে আইনের শাসন ও মত প্রকাশে বাধা, নির্বাচন, বই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুপ প্রতিক্রিয়া, নিজের জীবনের হুমকিসহ নানান বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা।

সংবাদ সম্মেলনে “শেখ হাসিনা বলেছেন-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে কেউ অর্থায়ন করে আপনাকে দিয়ে এ বই লিখিয়েছে”- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সিনহা বলেন, যদি কেউ আমাকে টাকা দিয়েই এটা করাতো তা হলে এর প্রমাণ থাকতো, লেখায় সূক্ষ এডিটিং (সম্পাদনা) এর কারসাজি থাকতো। আমি যেটা বলবো সেটা হচ্ছে- আমার বইতে দক্ষ সম্পাদকদের মতো সম্পাদনার কোনো কাজ নেই, আর আমি এমন সম্পাদনা করেও বইটি লেখতে পারিনি। আর এতে এ অভিযোগের কোনো ধরনের প্র্রমাণও পাবেন না। আমি বরং আপনাকেই প্রশ্ন করতে চাই- বইটি প্রকাশ করার জন্য অ্যামাজন কি আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে? এটাতো অ্যামাজন প্রকাশ করেছে।

দেশে ফিরে যাবার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাকে যখন গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিলো, আপনারা ভিডিও ফুটেজটি নিশ্চয় দেখেছেন, আমি যখন দেশত্যাগ করার জন্য বাসা থেকে বের হই তখন সেখানে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার হাজারো সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। আমার বইতে উল্লেখ করছি- তখন ভীড়ের চাপে আমার গাড়ির ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ভেঙ্গে গিয়েছিলো। আপনি ভিডিও চেক করলে দেখতে পাবেন সেখানে আমি একটা বিষয় বলেছিলাম-আমি অসুস্থ ছিলাম না। আমাকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। আমি ফিরে আসবো-সেটা অতীতে বলেছিলাম কিন্তু আমার জীবন এখন ঝুঁকিতে, আর তার কারণটা হচ্ছে টেরোরিস্ট গ্রুপ (সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলা)। এখানে সরকারও আরেকটা ফ্যাক্টর। প্রতিদিন বাংলাদেশের যে দৃশ্য আমরা দেখছি, আমাকে যে নিরাপত্তা দেবার কথা তার বদলে তারা আমাকে খুন করে ফেলতে পারে। কারণ দেশে কোনো আইনের শাসন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে- কে আমার জীবনের নিরাপত্তা দেবে? পরিবারকেও আমার সঙ্গে দেখা করার কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়াপরাসন বেগম খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পাবেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিনহা বলেন- যে দেশে একজন প্রধান বিচারপতিই ন্যায় বিচার পাননা, সেখানে অন্য কোনো ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদদের অবস্থাটা কি সেটা আসলে প্রভুই ভালো জানেন।

আত্মজীবনী লেখার পেছনে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার আহবানের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিনহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং তার পৃষ্ঠপোষক বেশকিছু মিডিয়া অনেকের নামে গুঞ্জন তোলেছে, তারাই জানে তাদের সেসব নামের কথা। এখন এটা তাদেরই দায়িত্ব যে কিভাবে এবং কেন এটা হয়েছে সেটা প্রকাশ করে জানানো। আমি একটা বই লিখেছি-এটা কি কোনো অপরাধ? বই লেখাটাকে কেউ কেউ সমর্থন করেছে- এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এতো ভয় কেন? একটা বই প্রকাশ করার কারণেই তারা এত ভীত। নিশ্চিতভাবেই তার চেয়েছিল আমার মুখ বন্ধ রাখতে। আমি যেনো কোনো কথা না বলি, কোনো কিছু লিখতে না পারি, কোনো গোপনীয়তা প্রকাশ না করে ফেলি-তারা এটাই চায়। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। আপানার মিডিয়াতে একটা বিষয় দেখেছেন, যে বিষয়ে আমি বইয়েও উল্লেখ করেছি- এবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১১ জন লোকের বিশাল একটা বহর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে। এটা কেন হবে আমি বুঝিনা। অথচ প্রতিবেশি ভারত গত বছর এসেছিল মাত্র ২০ জন সফরসঙ্গি নিয়ে। এতো লোকের কাজটা কি? তারা জনসমাগম করছে, কুইনসে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। আপনারা একটা বিষয় জেনে অবাক হবেন যে, আমি যেখানে থাকি তার পাশেই নজরদারির জন্য ডিজিএফআইয়ের দুই জনকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা জানালা দিয়ে একটি ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছে- আমার বাসায় কে ঢুকছে বা বের হচ্ছে তার সব রেকর্ড করছে। আমি নিরাপত্তা নিয়ে এতোটাই ভীত যে বাসা থেকে বের হতে পারছিনা, এমনিক পুরো ২৪ ঘন্টাই বাসার মধ্যে কাটাতে হয়।

“আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- নির্বাচনের পূর্বে তড়িঘড়ি করে বইটি প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি। এটি পরেও বের করা যেতো।”- বই প্রকাশের সঙ্গে নিবাচনের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিনহা বলেন-আপনারা জানেন আমি শুধু একটি স্যুটকেস নিয়ে দেশ থেকে বের হয়েছি। আমাকে জোরে করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তারপর অস্ট্রেলিয়ায় এক মাস, কানাডায় দুই মাস আর যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরের কাছাকাছি হবে অবস্থান করছি। দুই মাস আমি থাকার জন্য কোনো ঘর পাইনি, সমুদ্র সৈকতে কাটিয়েছি, না পেয়েছি কোনো ডেস্কটপ যে বইটি বিন্যাস করবো। এখানে আমি ৮০০ এর বেশি পৃষ্ঠা লিখেছি, বইটির ইন্ডেক্সও সাজাতে পারিনি ভালো করে। বইটি আমি বেশ আগেই জুলাই মাসে বের করতে চেয়েছিলাম কিন্তু যথাযথ প্রকাশক খুঁজে পাইনি। শেষমেষ অ্যামাজনের সঙ্গে কথা বলে সম্মত হবার পর বইটি ছাপালাম। তাদের যদি জনসমর্থন থেকেই তাকে তাহলে তাহলে তারা কেনো এতো ভয় পাচ্ছে? আপনি একজনকে চাইলেই দমিয়ে রাখতে পারেন না, যুক্তরাষ্ট্রে এটা সম্ভব না। আমার বই হোক বা অন্য কারোটা হোক- তা নিয়ে এতো ভয় কেনো আপনাদের (সরকারের)? আপনি কেন ভয় পাচ্ছেন? জনগণের ভালোর জন্যই যদি কাজ করে থাকেন তাহলে ভয়টা কিসের? সরকার কি ক্ষতি করেছে যার জন্য ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে? বইটির কাজ করার জন্য আমার সময় লেগেছে, তারপর বের করলাম, ভালো করে কাজটা শেষ করতে পারিনি, আশা করি আগামী ডিসেম্বরে এর আরেকটা পুর্নমুদ্রণ বের করবো।

ভারত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে-নিজের বইয়ে লেখা এমন অভিমতে ব্যাপারে সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- ভারতের সাত অঙ্গ রাজ্য রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে সরাসরি দেশটির ভালো কোনো যোগাযোগ নেই। সেখানে যেতে হলেও আসামসহ অন্যান্য রাজ্য ঘুরে ৪৮ ঘন্টার মতো সময় লেগে যায়। তাই তারা বাংলাদেশ দিয়েই একটি করিডোর চাচ্ছে। সাত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং মনিপুরে অস্থিরতা বিদ্যমান রয়েছে। ভারতের একটা ধারণা হচ্ছে বাংলাদেশ এ অঙ্গরাজ্যগুলোর সন্ত্রাসীদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণসহ নানা ধরণের সহযোগিতা করে থাকে। আওয়ামী লীগ ভারতকে আশ্বাস দিয়েছে তারা এ ধরেণর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সুযোগ করে দেবে না। আওয়ামী লীগকে ভারতের সমর্থন দেবার এটাও একটা কারণ। ভারত চিন্তা করছে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে তাহলে সেটা তাদের জন্য সুবিধার কারণ হবে-আভ্যন্তরীণ, বাণিজ্যিকসহ বিভিন্ন দিক দিয়েই ভারত সুবিধা পাবে। অধিকাংশ জনগণই চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন বাংলাদেশে হোক। আওয়ামী লীগ নিজেই দাবি জানিয়েছিল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবেনা। অথচ তারাই এখন এ বিষয়টির বিরোধীতা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ কেন তাদের অতীতকে ভুলে গেলো? তারা কেন একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে লজ্জা পাচ্ছে? যদি তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে, জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে কারা ক্ষমতায় থাকবে। ভারত এমন একটি রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করছে যারা কিনা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। আমি বইতে এটা উল্লেখ করেছি যে, ভারত তাদের নীতির কারণে যেভাবে শ্রীলংকা এবং নেপালকে হারিয়েছে ঠিক সেভাবে বাংলাদেশকেও হারাবে। পাকিস্তানও তাদের শত্রু। আগামীতে ভারতকে দুটি পাকিস্তানের মোকাবেলা করতে হবে। ভারত এখনও ক্ষমতাসীন সরকারকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে।

বইটি কোনো আবেগ কথন নয় উল্লেখ করে সিনহা বলেন, আমার সম্মুখে যা ঘটেছে বাস্তবিক তাই একজন প্রধান বিচারপতি হিসেবে তোলে ধরেছি। এটা ইমোশনাল কোনো কিছু নয়।

নিজে কোনো রাজনীতি করেন না এবং রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন উল্লেখ করে সিনহা বলেন, আমি যেটা বলতে চাই সেটা হলো দেশে যদি কোনো গণতন্ত্র না থাকে, আইনের শাসন না থাকে তাহলে এটার সুবিধাভোগী হয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। তারা ফাঁকা জায়গা পেয়ে যায়। আইনের শাসন না থাকলে দুর্নীতিবাজরা এদিক-ওদিক টাকার ছড়াছড়ি করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়।

বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্য দ্বন্দ্ব দূর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একসঙ্গে বসার আহবান জানালে তিনি এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিকে- ‘সে আমার কর্মচারি’ বলে উল্লেখ করেন। একটি দেশের প্রধান বিচারপতিকে তিনি কর্মচারির সঙ্গে তুলনা করে বসলেন। আমি বললাম- আপনি কেন এভাবে বললেন? বিষয়টা এরকম যে আমি কারো উপদেশ শুনে শুনে কাজ করছি। এ অনুষ্ঠানে আর স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। তখন প্রধানমন্ত্রী সৌজন্যতাবোধটুকুও রাখলেন না, আমার দিকে না চেয়ে এবং কোনো কথা না বলেই ডায়াস ছেড়ে চলে গেলেন। এমনকি চাও মুখে নিলেন না।

২০১৪ সালের বিতর্কিত এবং একতরফা নির্বাচন প্রসঙ্গে সিনহা বলেন, আপনারা জানেন, ২০১৪ সালে যে নির্বাচনটা হয়েছে, সেটা আদতে কোনো নির্বাচনই ছিলোনা। ১৫৩ সদস্য কোনো প্রকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছিলো। তারা শুধু নমিনেশন দাখিল করেছে আর নির্বাচিত হয়েছে। বাকি যে আসনগুলো ছিলো তাতে দুই, তিন বা বেশি হলে পাঁচ শতাংশ ভোট পড়েছে কারণ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচন প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ ছিলোনা। এমনকি উপ-নিবাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনগুলো স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি।

সরকার বাকশাল কায়দায় সরকার গঠন করেছে মন্তব্য করে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেন। তিনি ঘোষণা দিলেন- দেশে এখন থেকে শুধু একটি দল থাকবে যার নাম-বাকশাল। সরকারি কর্মকতারা এতে যোগ দিতে পারবেন। চারটি মাত্র সংবাদপত্র রেখে বাকিসব বন্ধ করে দিলেন। সরকারি মিডিয়া ছাড়া আর কোনো-ইলেকট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়া থাকবেনা বলে জানালেন। এবং একদলের শাসন কায়েম করে বসলেন। প্রকৃতপক্ষে ২০১৪ সালে এসে তিনি (শেখ হাসিনা) এমন এক সরকার বানালেন যেটা হচ্ছে তার বাবার সরকার পদ্ধতিরই একটি কার্বন কপি। যেটা হচ্ছে-বাকশাল। একদলের শাসন ব্যবস্থা।

একতরফা নির্বাচনকে সমর্থন যোগানোর জন্য ভারতের কড়া সমালোচনা করে সিনহা বলেন, আমাদের আনফরচুনেট (দুর্ভাগ্যজনক) পার্টি ভারত, আঞ্চলিক পরাশক্তি যাকে বলা হয়, তারা এই সরকারকে (শেখ হাসিনা সরকার) নিজেদের সমর্থন দিয়ে বসলো। তারা বলে বসলো- নির্বাচন যথাযথ হয়েছে। তারপর রাশিয়া এবং আরো কিছু কিছু দেশ তাতে সায় দিয়ে বসলো। আর ভারতই প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বেশ কয়টি দেশের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।

শেখ হাসিনা সরকারের শাসন ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় বসার পরপরই শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর শক্তিশালী গোয়েন্দাবাহিনী ডিজিএফআইয়ের সহায়তা নিয়ে সাধারণ মানুষকে ধরপাকড় শুরু করলো। এর কোনো ধরনের জবাবদিহিতাই নেই। তারা রাজনীতি, ব্যবসাসহ এমন কোনো জায়গা নেই বাদ দেয়নি- সবখানেই হস্তক্ষেপ করা শুরু করলো। তারা বাসা এমনকি রাস্তা থেকেও মানুষকে অপহরণ করছে সিভিল পোশাক পরিধান করে। নিখোঁজ হবার মাস দুয়েক পর দেখা যাচ্ছে হয়তো নদীতে ভেসে উঠছে লাশ কিংবা রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে। এগুলো দেশের নিত্য দিনের ঘটনা। এমন এক সময়েই পুলিশের গ্রেফতার, নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত একটা মামলা আমার কাছে আসলো। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমি কিছু গাইডলাইন তৈরি করে দিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুলিশ একজনকে রিমান্ডে নিয়ে যায়, তখন তারা (পুলিশ) একটা গল্প বানায় এরকম- আটকৃত ব্যক্তিকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো যেখানে তার অস্ত্র মজুদ করা ছিলো, সেগুলো উদ্ধারের জন্য ঐ এলাকায় গেলে গ্রেফতারকারির সঙ্গিরা পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং এক পযায়ে আসামী মারা যায়। আমি বললাম এটা হবে না, পুলিশ যদি কাউকে রিমান্ডে নিতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই এর আগে আদালতে উপস্থিত করতে হবে।

ষোড়শ সংশোধনীর সমালোচনা করে সিনহা বলেন, শেখ হাসিনা অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সংবিধানে একটা সংশোধনী নিয়ে আসেন। ষোড়শ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চতর আদালতের কর্তৃত্ব বাগিয়ে নেন। আর বিষয়টি নিয়ে ঘোরতর আপত্তি ছিলো আইনজীবিদের। কারণ এর ফলে আর কোনো আইনের শাসনই অবশিষ্ট থাকলো না। তখন হাইকোর্টে আমি একটি স্পেশাল বেঞ্চ গঠন করি, তারা সংবিধান সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। রায়টা সবার মত নিয়ে হলেও একপর্যায়ে একজন বিচারক বলে উঠেন- স্যার সর্বসম্মত বিষয়টাতে আমি একমত হতে পারছিনা। আপনি ‘সর্বসম্মত’ শব্দটা কেটে দিন। পরে আমি জানতে পারলাম যে- ঐ বিচারক ডিজিএফআই দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলো। আর গোয়েন্দাই তার মন পরিবর্তনে বাধ্য করে। অপর আরেকজন বিচারক ডিজিএফআইয়ের আরেক কর্মকতার ভিজিটিং কার্ড আমার কাছে নিয়ে আসেন। আমি তখন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দিয়ে বললাম- আপনার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কোর্টে আমার বিচারকদের প্রভাবিত করছে। আমি বিষয়টি আইনমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করলাম আর বলে দিলাম কোনো সামরিক কর্মকর্তাকে আমি কোর্ট বিল্ডিংয়ের আশেপাশে দেখতে চাইনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের অনুকূলে রায় দেবার জন্যও প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেছিলেন উল্লেখ করে সিনহা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সম্মানে রাজধানীর একটি হোটেলে ডিনারের আয়োজন করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেন- আপনি কি আপনার বিচারকদের একটু বলে দেবেন তারা যেন আমাদের অনুকূলে বিচারের রায়গুলো প্রদান করে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বললাম- আমি সর্বশেষ লোক, যাকে আপনি দেখতে পাচ্ছেন, আমি অতীতে কখনো এটা করিনি এবং বিচার প্রশাসনের কাজে আমি ভবিষ্যতেও কোনো হস্তক্ষেপ করতে যাবো না। যদি কোনো বিষয় সামনে আসে তাহলে সেটা আমি খতিয়ে দেখবো। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে আমার উপর একের পর এক চাপ তৈরি হচ্ছিলো। আমি আইনমন্ত্রীকে বললাম-আপনার সরকার নিম্ন আদালত নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, আর উচ্চ আদালতের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেবার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার ব্যবস্থায় একটা পরিবর্তন আনার জন্য সরকারের প্রতি আমি আহবান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো উত্তর দেয়নি। সময়ের পর সময় যাচ্ছিলো- আমি ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। সরকার শুধু সময় পার করে কালক্ষেপণ করে যাচ্ছিলো। তারপর ষোড়ষ সংশোধনীর শুনানি করলাম। এর কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা সম্পর্কে আমি ধারণা করতে পেরেছিলাম বিভিন্ন জনের বডি ল্যাংগুয়েজ থেকে। রায়ের ঠিক একদিন আগে আমার কাছে প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিবের কাছ থেকে একটা ফোন আসলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম ফোন পেয়ে-একজন স্টাফ আমাকে ফোন করে বসেছে! আমাকে ফোনে বললো-স্যার, আপনি কি দয়া করে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে চা’য়ের আমন্ত্রণে বসবেন। আমি বিষয়টাকে হালকাভাবেই নিলাম। দুপুরে মোবাইলে একটা মেসেজ পেলাম, যেটা বইতে উল্লেখ করেছি। মেসেজে দেখে ব্যক্তিগত সেক্রেটারিকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মিটিংয়ের কোনো খবর জানো? সে জানালো- না স্যার এমন কোনো খবর পাইনি। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম-বিষয়টা কি? জানালো বিষয়টি হয়তো খুব গোপনীয়-তাই প্রকাশ করা হয়নি। পরে যখন সেখানে গেলাম, আমাকে নেয়া হলো প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিবের রুমে। রুমে নেবার পর খুব বিস্মিত হয়েছিলাম! এটা নাকি সাংবিধানিক ক্ষমতাসম্পন্ন প্রধান বিচারপতির জন্য বিশেষ রুম! আমি কি এখানে বসবো, না বসবো না এ নিয়ে যখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে তখন- সামরিক সচিব বললেন- স্যার কফি, বা কোনো কিছু খাবেন প্লিজ।

৪৫ মিনিট অপেক্ষার আমাকে নেয়া হলো প্রেসিডেন্টের রুমে, সেখানে গিয়েতো চোখ যেন চড়ক গাছ! বিস্মিত হয়ে গেলাম। দেখলাম প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেল সেখানে উপস্থিত। তখনি বুঝে গেলাম কেনো আমাকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তখন প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন- আপনাকে আমার ফেবারে রায় দিতে হবে, অর্থাৎ আমার সরকারের পক্ষে রায়টা দিতে হবে। আমি হাসলাম। এটা কিভাবে হবে, কারণ রায় কি হবে তাতো জানিনা। সে বিষয়ে বিচারকরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে যায়নি। বিচারকরা কি চিন্তা করছেন তা আমি জানিনা। তারা বললেন- না, আমরা শুধু আপনার মতামতটা জানতে চাই। আমি বললাম-ঠিক এ মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনি যদি শুধু আমার মতামত জানতে চান তাহলে বলবো- আমার অন্য ছয় জন বিচারক এখনো তাদের কোনো মতামত জানায়নি। আমার মতটা যদি আপনার পক্ষে যায় আর বাকি ছয় জনেরটা বিপক্ষে যায় তাহলে বিষয়টা কি রকম হবে। তারা বললেন-অন্যদেরটা বাদ দেন আমরা শুধু আপনার মতামত জানতে চাই। বললাম আমি কিছু বলতে পারবো না। আরো বললাম-আপনি, আপনার আইনমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছিলাম যেন নিম্ন আদালত সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়, এ অনুচ্ছেদের কারণে আমি সঠিকভাবে কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারছিনা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন-না এটা করা যাবেনা। এটা করা যাবেনা। কারণ আমার বাবা এটা সংশোধন করেছিলেন, আমি এটা পরিবর্তন করতে পারবো না। আমি ফলাফলটা পেয়ে গেলাম। তারপর প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম-বিষয়টা একটু এভাবে ভেবে দেখুন প্রধানমন্ত্রী, আপনি অফিসে যাচ্ছেন অথবা সরকারি ভবনে ফিরে আসছেন এমন সময় দেখলেন আপনারই চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারি পায়ের উপর পা তোলে বসে আছে, সে না দাঁড়াচ্ছে কিংবা আপনাকে স্যালুট করছে। এ অবস্থায় আপনার প্রতিক্রিয়াটা কেমন হবে? তিনি আমার দিকে তাকিয়ে দেখছিলেন, তারপর বললেন- শাট আপ! গো আউট! আমি বললাম- নো। আই ডো নট গো। হো আর ইউ? ইউ ক্যান নট ডু অ্যানিথিং টু মি। বিকজ প্রেসিডেন্ট ইজ মাই অ্যাপয়েন্টি। অথরিটি। ইউ ক্যান নট ডু অ্যানিথিং। বিকজ আই অ্যাম নট লিসেন ইউর ওয়াড। আমি প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম-উড ইউ অ্যাবল টু রান ইউর গভর্নমেন্ট? আমাদের বিচারবিভাগে এটাই ঘটছে। কোনো দুর্নীতি বা অবৈধ কোনো কিছু দেখার পরও প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমি কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছিনা। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না।

তিনি বলেন এভাবেই আমরা সাড়ে চার ঘন্টা সময় (সন্ধ্যা ৭.০০ টা থেকে রাতা ১১.৩০) নষ্ট করলাম। সেখানে শুধু কফি পরিবেশন করা হয়েছিলো। তারা আমাকে একের পর এক চাপ দিয়ে যাচ্ছিলো, আর আমি বলছিলাম-নো, নো, নো। এটা হতে পারে না।

নিজের সম্পর্কে আনা দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে সিনহা বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ডিনারের পর বিচারপতিরা আমাকে বললেন, আদালত খোলার পর তারা আর আমার সঙ্গে বসবেন না। আমার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে। বুঝে নিলাম-আড়ালে ষড়যন্ত্র পাকানো হয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কি অভিযোগ তা আমি নিজেও জানি না।

ছুটি নিতে বাধ্য করা প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, একদিন সকালে কোর্টে যাবার পর ডিজিএফআই চীফ আসলেন আমার অফিসে। আমাকে বললেন-স্যার আপনি সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বুঝতে পারবেন! স্যার, আপনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, আপনাকে তিন মাসের ছুটিতে যেতে হবে, দেশ ছাড়তে হবে। একজন প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কর্মকর্তা সুপ্রিম কোর্টে আমার অফিসে এসে কিভাবে কথা বলছে- আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার সেক্রেটারি জানালো- স্যার, এ ব্যাপারে আমার করার কিছু নেই। ঐ কর্মকতা চলে যাবার পর সেক্রেটারি বললো- স্যার, আমি জানি না, আপনি কি সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা কিছু করতে পারছিনা। আপনি কিছু দিন ছুটি নেন। পুরো কোর্ট বিল্ডিং সাদা পোশাকধারী সামরিক বাহিনীর লোকেরা ঘিরে রেখেছে। আমরা হুমকির মুখে।

সিনহা বলেন, দেশে কোনো আইনের শাসন নেই। এটাকে সভ্যতা বলা যাবে না। আমি শুধু দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। আমরা এখন দেশে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারিনা। এই যুক্তরাষ্ট্রেই ২০০-৩০০ সাংবাদিক রয়েছেন যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন শুধু স্বাধীনভাবে লেখা চালিয়ে যাবার জন্য।

বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র তার পক্ষ থেকে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, বাংলাদেশের ক্রম অবনতিশীল বিচারব্যবস্থা বিব্রতকর, যেটা সাবেক প্রধানবিচারপতি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন। দেশটিতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নতি সাধনের দিকটিতেই আমাদের মনযোগ দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি তাঁর বইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার চিত্র তোলে ধরেছেন। মিডিয়ার যারা এটা নিয়ে লিখবেন বা প্রতিবেদন তৈরি করবেন তারা এ বইয়ে বিচার বিভাগসহ নানান বিষয়ের সন্ধান পাবেন। সাবেক এই প্রধান বিচারপতির বই থেকে দেশটির রাজনৈতিক নেতারা একটি শিক্ষা পাবেন এমনটাই লেখকের প্রত্যাশা।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে বইটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন উড্রো উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার মাইলাম। বইয়ের একটি কপি তাঁর হাতে হস্তান্তর করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও এপি’র প্রাক্তন এডিটর ম্যারন বিলকাইন্ড, স্টেট ডিপার্টমেন্টের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক প্রধান ড. ম্যাডেলিন ওয়েসল, ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই’র ওয়াশিংটন ব্যুরো প্রধান ললিত কে জাহ প্রমুখ।

ওয়াশিংটন মেট্রো আওয়ামী লীগের নামে কতিপয় উশৃঙ্খল যুবক অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে চাইলে আমন্ত্রণপত্র দেখাতে পারেনি। কোনো প্রকার আমন্ত্রণ ছাড়া জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা চালালে নিরাপত্তা কর্মীরা প্রেসক্লাবের ভবনের গেট থেকে তাদের বের করে দেয় এবং অবস্থা বেগতিক দেখে তারা দ্রুত সরে পড়ে।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/১৩১০ঘ)