মুশফিক-মুমিনুলের সেঞ্চুরি, দলের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩০৩

মুশফিক-মুমিনুলের সেঞ্চুরি, দলের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩০৩

ঢাকা, ১১ ণভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : এক পর্যায়ে প্রথম সেশনের ব্যর্থতাকে আলোচ্য বিষয় মনে হচ্ছিলো বাংলাদেশের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের পরের সেশনগুলো লেখা হলো ভিন্ন রচনায়। মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হকের চোয়ালবদ্ধ মানসিকতায় ঢাকায় জোড়া সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনটি হয়ে থাকলো বাংলাদেশের। প্রথম দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩০৩ রান।

দিনের শেষটা আরও বড় স্বস্তি নিয়ে বের হতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু মুমিনুল হক ব্যক্তিগত ১৬১ রানে চাতারার বলে চারিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভাঙে দিনের প্রধান আলোচিত জুটি। মুমিনুলের ২৪৭ বলের ইনিংসে ছিলো ১৯টি চার।

তারপর নাইটওয়াচম্যান তাইজুলকে দিয়ে দিনের বাকি ৫ ওভার শেষ করার কৌশলটাও কাজে আসেনি স্বাগতিকদের। ৪ রানে জার্ভিসের বলে গ্লাভসবন্দী হয়ে ফিরলে পতন ঘটে পঞ্চম উইকেটের। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শূন্য রানে ও মুশফিকুর রহিম ১১১ রানে মাঠ ছেড়ে যান। জিম্বাবুয়ের পক্ষে তিনটি নেন পেসার জার্ভিস, একটি করে উইকেট নেন তিরিপানো ও চাতারা।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে টস জয়কে মুখ্য হিসেবে দেখছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মিরপুর স্টেডিয়ামে টস জিতলেও শুরুর স্বস্তিটা দীর্ঘস্থায়ী ছিলো না টপ অর্ডারের ব্যর্থতায়। প্রথম সেশনে ৫৬ রান তুলতে গিয়ে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। প্রথম দিকে সাবধানি শুরু করেও উইকেটে থিতু হওয়ার মানসিকতায় আবারও ব্যর্থ ছিলেন হয়েছেন ইমরুল, লিটনরা।

সপ্তম ওভারে জার্ভিসের বলেই হয় শুরুর সর্বনাশ। শর্টার লেন্থের বল ইমরুল বুঝে ওঠার আগেই ভেতরের কোনায় লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপারের হাতে। এই জার্ভিসই এক ওভার বিরতি দিয়ে ফেরান লিটন দাসকে। মিড উইকেটে অলস ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মাভুতার হাতে।

নতুন নামা মিঠুন অভিষেকটা রাঙাতে পারলেন না সফলতায়। বরং বিবেচনাহীন শট খেলে ব্যর্থতা সঙ্গী করে ফিরেছেন। তিরিপানোর একেবারের বাইরের বল অযথা খেলতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মিঠুন। আর এই অভিষেকে ৪টি বল খেলে বিদায় নিয়েছেন রানের খাতা খোলার আগেই।

দিনের তৃতীয় ওভারেই উইকেট পতনের মুহূর্ত তৈরি করেছিলেন জার্ভিস। তার শর্টার লেন্থের বল হাল্কা বাঁক নিয়েছিলো শরীরের একটু বাইরে থেকে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্যাচ আউটের আবেদন করলে আম্পায়ার ক্যাটেলবোরো আঙুল তুলে দিয়েছিলেন। লিটন রিভিউ নিলে বাতিল হয়ে যায় সেই আবেদন।
মাঝে মুমিনুল একবার প্রাণ পেয়েছেন পয়েন্টে দাঁড়ানো ব্রায়ান চারির ব্যর্থতায়। আর জীবন পেয়েই নিজের স্বরূপটা চিনিয়েছেন পরের সেশনে। প্রথম টেস্টের ব্যাটিং ব্যর্থতার পর বাংলাদেশ ঢাকা টেস্টে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার শুরুর প্রতিরোধেই। এমন ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতায় বিদায় নেওয়ার আগে চতুর্থ উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে গড়েছেন সেরা জুটি। আগের ১৮০ রানের জুটি পার করে মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুলের ‍জুটিতে এসেছে ২৬১ রান। এছাড়া সার্বিকভাবে এই জুটি যে কোনও উইকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ।

আগের জুটিটি ছিলো এই বছরের শুরুতে চট্টগ্রামে। লিটনের সঙ্গে মিলে চতুর্থ উইকেটে ১৮০ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল। এই জুটি গড়তে ১৬১ রানের দায়িত্বশীল এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন মুমিনুল। যার সবশেষ সেঞ্চুরিটি এসেছিলো এই বছরের জানুয়ারিতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দুই ইনিংসে ছিলো রানের বন্যা। এরপর হঠাতই সেই ব্যাটে রান খরা! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও ছিলেন নিষ্প্রভ। ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে অবশেষে রান খরা কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে।

প্রথম সেশনে ২৬ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের ইনিংসটা গড়ে দিয়েছে মুমিনুল ও মুশফিকুর রহিমের দৃঢ়চেতা ব্যাটিং। সিকান্দার রাজার বলে চার মেরে মুমিনুল উদযাপন করেন নিজের সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে মাটি কামড়ে থাকার মানসিকতা ছিলো মুশফিকুর রহিমেরও।

সেই মানসিকতায় তুলে নিয়েছেন বছরের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বছরের শুরুতে চট্টগ্রাম টেস্টে ৯২ রানই এই বছরে টেস্টে সর্বোচ্চ স্কোর ছিলো মুশফিকের। মাঝে বেশ কয়েকটি সিরিজ গড়ালেও ইনিংস লম্বা করতে না পারার ব্যর্থতা সঙ্গী করেছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে অবশেষে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি পেলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। এই দুজনের প্রথম দিনের জোড়া সেঞ্চুরিতে রানের চাকাও সচল হয়েছে বাংলাদেশের। ৮ ইনিংস পর মিললো ২০০ রানের বেশি স্কোর বোর্ড!

(জাস্ট নিউজ/এমজে/১৭২৯ঘ.)