চিটাগংয়ের জয়রথ ছুটছেই

চিটাগংয়ের জয়রথ ছুটছেই

এবারের বিপিএলে রীতিমতো উড়ছে চিটাগং ভাইকিংস। কোনোমতেই তাদের নামানো যাচ্ছে না। জয়রথ ছুটছেই। রাজশাহী কিংসকে ৬ উইকেটে হারাল মুশফিক বাহিনী। দুরন্ত এ জয়ের কাণ্ডারি মুশফিক, মোসাদ্দেক ও শেহজাদ। শেষের জন ২৫ রানে ফিরলেও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন প্রথম দুজন। মুশফিক ৬৩ ও মোসাদ্দেক ৪৩ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন।

১৫৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় চিটাগং। মিরাজের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আরাফাত সানির বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে ফেরেন ইয়াসির আলি। সেই জের না কাটতেই সানির স্পিন জালে ধরা পড়েন মোহাম্মদ শেহজাদ। ড্রেসিংরুমের পথ ধরার আগে ১৭ বলে ৫ চারে ২৫ রান করেন এ আফগান হিটার।

প্রথম পাওয়ার প্লেতেই টপঅর্ডারের মূল ৩ উইকেট খুইয়ে চাপে পড়ে চিটাগং। সেখান থেকে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন মুশফিকুর রহিম। একপর্যায়ে জমাট বেঁধে ওঠে তাদের জুটি। ফলে রানের চাকা ঘুরে দ্রুতগতিতে। দুর্দান্ত খেলতে খেলতে আচমকা স্তব্ধ হয়ে যান নাজিবুল্লাহ। সানির শিকার হয়ে ফেরার আগে ১৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৩ রান করেন এ আফগান। ততক্ষণে জয়ের ভিত পেয়ে যায় বন্দরনগরীর দল।

জাদরান ফিরলে মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিক। দারুণ খেলেন তারা। দুর্দান্ত বোঝাপড়া গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। দুজনই সমানতালে রান তোলেন। ফলে জয়ের পথে এগিয়ে যায় চিটাগং। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট ও ২ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে দলটি। ৪৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬৩ রানের হার না মানা মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেন মুশফিক। আর ২৬ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৩ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন তারা।

ফর্মের তুঙ্গে আছেন লরি ইভানস। গেল ম্যাচেই অনবদ্য সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে খেলেন আরেকটি অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংস। নাটাইটা মূলত ইভানসই ধরে রাখেন। শেষদিকে কোপ দাগান ক্রিশ্চিয়ান জোনকার। তিনিও খেলেন নান্দনিক ইনিংস। তাতে লড়াকু পুঁজি পায় রাজশাহী কিংস। চট্টলার দলটিকে ১৫৮ রানের টার্গেট দেয় বরেন্দ্রভূমির দলটি।

বিপিএলের ২৭তম ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন চিটাগং অধিনায়ক মুশফিক। ফলে প্রথমে ব্যাট করতে নামে মেহেদী হাসান মিরাজের রাজশাহী। তবে শুরুতেই হোঁচট খায় উত্তরবঙ্গের দলটি। রবি ফ্রাইলিংকের শিকার হয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। এর রেশ না কাটতেই খালেদ আহমেদের কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন মার্শাল আইয়ুব।

পরে রায়ান টেন ডেসকাটকে নিয়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন লরি ইভানস। সেই প্রচেষ্টা আলোর মুখও দেখে। দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই ছোটাতে শুরু করেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি। তাতেই ঘটে বিপত্তি। আবু জায়েদের বলে ইয়াসির আলির দুর্দান্ত ক্যাচ হয়ে ফেরেন ডেসকাট। ২০ বলে ৪ চারে ব্যক্তিগত ২৮ রানে এ ডাচ ফেরার পরই সানজামুলের শিকারে পরিণত হন জাকির হাসান। দুর্দান্ত ক্যাচে তাকেও ফেরত পাঠান ইয়াসির। ফলে হঠাৎ চাপে পড়ে রাজশাহী। ২ উইকেটে ৬১ থেকে তাৎক্ষণিক ৭২/৪ হয়ে যায় কিংসরা।

একে একে টপঅর্ডারের সবাই ফিরলেও ক্রিজ আঁকড়ে বসে থাকেন ইভানস। ফলে লড়াকু পুঁজি গড়ার আশাও থাকে রাজশাহীর। একপ্রান্ত আগলে রানের ফোয়ারা ছোটান তিনি। তাতে এগোতে থাকে তারা। গেল ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। এদিনও তিন অংক ছোঁয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আর কত? দলের প্রয়োজন ও সময়ের দাবি মেটাতে গিয়ে খালেদ আহমেদের বলে মুশফিকের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। সাজঘরে ফেরত আসার আগে ইভানস খেলেন ৫৬ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৭৪ রানের নান্দনিক ইনিংস।

এ ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে শেষদিকে কোপ দাগান ক্রিশ্চিয়ান জোনকার। একের পর এক বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারিতে রানের নহর বইয়ে দেন তিনি। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন মিরাজ। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে ১৫৭ রান তুলতে সক্ষম হয় রাজশাহী। জোনকার খেলেন ২০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রানের হার না মানা ঝড়ো ইনিংস। ১০ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক। চিটাগংয়ের হয়ে খালেদ ২ উইকেট লাভ করেন। এছাড়া ১টি করে উইকেট পান ফ্রাইলিংক, সানজামুল ও আবু জায়েদ।

একে/