তামিম-শামসুরের ব্যাটে চিটাগংকে হেসেখেলে হারাল কুমিল্লা

তামিম-শামসুরের ব্যাটে চিটাগংকে হেসেখেলে হারাল কুমিল্লা

লক্ষ্যটা মাত্র ১১৭। ফলে জয়টা অবশ্যম্ভাবী ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের। তবে ম্যাচের আগে বৃষ্টি হওয়ায় উইকেটের কারণে কিছুটা শংকা ছিল। কারণ, এখানেই ব্যাট করতে নেমে ধুঁকেছে চিটাগং ভাইকিংস। তবে সব শংকাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন তামিম ইকবাল ও শামসুর রহমান। দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দলকে এনে দিলেন সহজ জয়। তাদের ব্যাটে সব সংশয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চিটাগংকে ৭ উইকেটে হেসেখেলে হারাল কুমিল্লা।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে মন্থর শুরু করেন তামিম-আনামুল। উইকেট বুঝে প্রথমে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেন তারা। তবে সেই নীতিতে অটল থাকতে পারেননি আনামুল। রান তুলতে গিয়ে খালেদ আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে মোহাম্মদ শেহজাদকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে শামসুর রহমানকে নিয়ে খেলা ধরেন তামিম। প্রথমে ধীর-লয়ে চললেও ক্রিজে সেট হওয়া মাত্রই হাত খোলেন তারা। দুজনই ছোটাতে থাকেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি। ফলে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যায় কুমিল্লা। আস্তে আস্তে উভয়ই এগিয়ে যান ফিফটির দিকে। তবে অতিরিক্ত চড়াও হতে গিয়ে আবু জায়েদের বলে সিকান্দার রাজার তালুবন্দি হয়ে ফেরেন শামসুর। সাজঘরে আসার আগে ২২ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি।

এর আগে ৭০ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল চিটাগং ভাইকিংস। ফলে ১০০ রানের নিচে অলআউট হওয়ার শংকা দেখা দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত তা হতে দেননি মোসাদ্দেক হোসেন। ধ্বংস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে মাত্র ২৫ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় হারা না মানা ৪৩ রানের ইনিংস খেলে দলের মান বাঁচিয়েছেন। তার সংগ্রামী ইনিংসে নির্ধারিত ১৯ ওভারে ৮ উইকেটে ১১৬ রানের সংগ্রহ পায় মুশফিক বাহিনী।

সকাল থেকেই চট্টগ্রামে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। কিছুটা থামায় মাঠে গড়ায় চিটাগং বনাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ম্যাচ। যাতে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন চিটাগং অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ফলে প্রথমে বোলিং শুরু করে ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা। দুপুর দেড়টায় গড়ানোর কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হয় ১০ মিনিট বিলম্বে। শুরু হতেই ফের বৃষ্টি হানা দেয়। ফলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পরই থামে বৃষ্টি। স্বাভাবিকভাবেই ফের শুরু হয় খেলা। ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসে ১ ওভার। তবে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপাকে পড়ে চিটাগং। পড়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের পেস তোপে। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাদমান ইসলামকে ফিরিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা দেন এ পেসার। খানিক পর ইয়াসির আলিকে এভিন লুইসের ক্যাচ বানিয়ে ধাক্কাটা দ্বিগুণ করেন তিনি। এর রেশ না কাটতেই মুশফিককে তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলেন ওয়াহাব রিয়াজ।

পরে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ শেহজাদ। তবে সেই প্রচেষ্টায় বেশিক্ষণ জ্বালানি জোগাতে পারেননি জাদরান। অযাচিতভাবে মেহেদী হাসানকে তুলে মারতে গিয়ে সাইফউদ্দিনকে ক্যাচ দিয়ে আসেন তিনি। পরে বল হাতে আতঙ্ক ছড়ান শহীদ আফ্রিদি। তার তোপের মুখে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি ক্যামেরন ডেলপোর্ট। খামাখা তাকে তুলে মারতে গিয়ে শামসুর রহমানকে ক্যাচ দিয়ে আসেন তিনি। এর জের না কাটতেই পাকিস্তানি লেগস্পিনারের দুর্দান্ত কুইকারে সোজা বোল্ড হয়ে সিকান্দার রাজা ফিরলে বিপর্যয়ে পড়ে চিটাগং।

ধারাবাহিক বিরতিতে টপঅর্ডার-মিডলঅর্ডাররা এলে-গেলেও ভরসা হয়ে ছিলেন শেহজাদ। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়ছিলেন তিনি। মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে তার সংগ্রামও থামে। আবু হায়দার ও আনামুল হকের যৌথ প্রচেষ্টায় রানআউটে কাটা পড়েন তিনি। ফেরার আগে ৩৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন এ আফগান হিটার। এতে ১০০ রানের নিচেই গুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় চাটগাঁর।

তবে তা হয়নি মোসাদ্দেক সৌজন্যে। অষ্টম উইকেটে নাঈম হাসানের সঙ্গে ২২ রানের জুটি গড়ে তা প্রতিরোধ করেন তিনি। ওয়াহাব রিয়াজের বলে নাঈম বোল্ড হয়ে ফিরলে আবু জায়েদের সঙ্গে ২৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে মান বাঁচান। তাতে ৮ উইকেটে ১১৬ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ পায় চিটাগং। ধ্বংস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে মাত্র ২৫ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় হার না মানা ৪৩ রানের ইনিংস খেলে লজ্জা এড়ান সৈকত। কুমিল্লার হয়ে ২টি করে উইকেট লাভ করেন আফ্রিদি, রিয়াজ ও সাইফ।

এমজে/