স্বাদের জয়ে মালিঙ্গার বিষাদের বিদায়

স্বাদের জয়ে মালিঙ্গার বিষাদের বিদায়

তিন ম্যাচের অডিআই সিরিজে প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশকে ৯১ রানে হারিয়ে শুভ সূচনা করল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। পেসার লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচে, তাকে দারুণ এক জয় উপহার দিলো লঙ্কান টিম।

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে কুশল পেরেরার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে ৩১৫ রানের বড় লক্ষ্য দেয় শ্রীলঙ্কা।

লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে ৪১.৪ ওভারে সবকটি উেইকেট হারিয়ে ২২৩ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। দলের হয়ে মুশফিকুর রাহিম সর্বোচ্চ (৬৭) ও সাব্বির রহমান করেন (৬০) রান।

এর আগে কুশল পেরেরার (১১১) রানের ওপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান সংগ্রহ করে লঙ্কানরা।

তিন ম্যাচ অডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচে শুক্রবার বিকেল ৩টায় (বাংলাদেশ সময়) কলম্বো প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। মুদ্রা নিক্ষেপে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে।

ফিল্ডিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে শরুতেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল বল তুলে দেন দীর্ঘ ২১ মাস পর জাতীয় দলে ফেরা পেসার শফিউল ইসলামের হাতে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতীয় দলের জার্সিতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন শফিউল। তবে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন তারও এক বছর আগে। চোটে পড়া মাশরাফির জায়গায় নেয়া হয় তাকে।

দীর্ঘ সময় পর জাতীয় দলে ফিরে অধিনায়কের আস্থার দাম দিতেও দেরী করেননি শফিউল। প্রথম ওভারে কোনো উইকেটের দেখা না পেলেও ইণিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্ম বলেই তুলে নিলেন প্রথম উইকেট। দারুণ এক ডেলিভারিতে লঙ্কান ওপেনার অভিশকা ফার্নান্দোকে ৭ রানে সৌম্য সরকারের তালুবন্দিতে সাজঘরে ফেরান শফিউল।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান আরেক ওপেনার করুনারত্নে ও ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামা কুশল পেরেরা।

জুটিতে দুজনে তোলেন ৯৭ রান। দলীয় ১০৭ রানের মাথায় ৩৭ বলে ৩৬ রান করে মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচ বানিয়ে করুনাকে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে ফের টাইগারদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় দুই লঙ্কান ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। শুরুতে থেকেই পেরেরা ছিলেন বিধ্বংসী। বাংলাদেশী বোলারদের ওপর বয়ে দেন পেরেরা ঝড়। ২২ ওভারেই দেড়শ ছাড়িয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। তখন মনে হচ্ছিলো, চার শ রানের কিনারা ঘেঁষতে পারে লঙ্কানরা।

হেসে-খেলে ৮২ বলে পেরেরা তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্ম শতক। সেঞ্চুরির পর বেশিদূর যাওয়া হয়নি তার। ৯৯ বলে ১১১ রান করে সৌম্য সরকারের বলে মোস্তাফিজুর রহমানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ১৭ চার ও এক ছক্কায় ইনিংসটি সাজান পেরেরা।

পেরেরা ফিরে গেলে পরের ওভারেই কুশল মেন্ডিসকে ফেরান রুবেল হোসেন। ৪৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। দুই কুশলকে ফেরানোয় খেলায় ফেরে বাংলাদেশ।

এরপর লাহিরু থিরিমান্নেকে ২৫ ও থিসারা পেরেরাকে ২ রানে পেরালে বড় সংগ্রহের পথটা অনেকটা সরু হয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত ম্যাথুসের ৪৮ ও ধনাঞ্জয় ডি সিলভার ১৪ ও ক্যারিয়ারের শেষ অডিআইতে ব্যাট করতে নামা লাসিথ মালিঙ্গার অপরাজিত ৬ রানের সুবাধে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে শফিউল ইসলাম ৩টি, মোস্তাফিজুর রহমান ২টি, রুবেল হোসেন, মেহেদি হাসান ও সৌম্য সরকার একটি করে উইকেট শিকার করেন।

৩১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৯ রানের মধ্যে চার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ মিথুন, সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহকে হারিয়ে কঠিন চাপে পড়ে বাংলাদেশ। লাসিথ মালিঙ্গার করা ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে শূন্য রানে তামিম ‍ও অষ্টম ওভারের তৃতীয় বলে নুয়ান প্রদীপের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ১০ রানে ফেরেন মিথুন। নবম ওভারে মালিঙ্গার বোল্ড হয়ে ১৫ রান করে ফেরেন সৌম্য সরকারও। ১০ বলে ৩ রান করে লাহিরু কুমারার শিকার হন মাহমুদুল্লাহ।

পঞ্চম উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে লক্ষ্য তাড়ার সাহস দেখাচ্ছিলেন সাব্বির রহমান ও মুশফিকুর রহিম। মাইরমুখী ভঙ্গিতে খেলে ৪২ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি তুলে নেন সাব্বির। কিন্তু অর্ধশতক করে বেশিদূর যেতে পারেননি সাব্বির। ৫৬ বলে ৭ চারে ৬০ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন এই ডানহাতি।

এমজে/