ইমনের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে বরিশালের জয়

ইমনের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে বরিশালের জয়

পারভেজ হোসেন ইমনের রেকর্ডগড়া দ্রুততম সেঞ্চুরিতে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীকে ৮ উইকেটে পরাজিত করেছে ফরচুন বরিশাল। চমক লাগানো এই জয়ে টুর্নামেন্টে টিকে থাকল তামিম শিবির।

আগে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর দারুণ সেঞ্চুরিতে সাত উইকেটে ২২০ রানের পাহাড় গড়ে রাজশাহী। তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বরিশাল এই লক্ষ্য স্পর্শ করে ১১ বল হাতে রেখে, মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে।

জিততে হলে করতে হবে ২২১ রান। বরিশালের জন্য ম্যাচটি ছিল ডু অর ডাই। আর তাই শুরু থেকেই রাজশাহীর বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলেছে বরিশালের ব্যাটসম্যানরা। শুরুতে তামিম ধীর লয়ে থাকলেও খুনে মেজাজে ছিলেন আরেক ওপেনার সাইফ হাসান। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। দলীয় ৪৪ রানের মাথায় তিনি আউট হন সাইফউদ্দিনের বলে। ১৫ বলে তিনি করে যান ২৭ রান।

দলের জয়ে বরিশালের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পারভেজ হোসেন ইমনকে সাথে করে অধিনায়ক তামিম ইকবাল চালান তার তাণ্ডব। এই জুটি যখন ভাঙে, তখন বরিশালের রান ১৬১। ৩৭ বলে ৫৩ রান করে দুর্ভাগ্যজনক রানআউট তামিম। তার ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও একটি ছক্কার। তামিমের বিদায়ের পর বরিশাল শিবিরে হা হুতাশ বাড়তে থাকে। চিন্তার ভাঁজ সবার কপালে, এই স্কোর ছুতে পারবে বরিশাল?

বরিশালের হয়ে সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে আলোর দিশারী হিসেবে দেখা দেন পারভেজ হোসেন ইমন। আগেই ফিফটি করা ইমন চলতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে। বরিশালও তখন জয়ের জন্য চোখ করে আছে পাখির মতো। শেষের দিকে ম্যাচ বরিশালের মুঠোয় চলে যায়। রান-বল সমান। তখন হিসাবটা ছিল সেঞ্চুরি পাবেন তো ইমন? এক পর্যায়ে ১২ বলে ৪ রান দরকার ছিল বরিশালের জয়ের জন্য। ব্যক্তিগত ৯৬ রানে তখন অপরাজিত ইমন। তার মানে সেঞ্চুরির জন্য একটি বাউন্ডারিই যথেষ্ট, দলও জিতবে হেসে খেলে।

১৯তম ওভারে বল করতে আসেন রাজশাহীর আনিসুল ইসলাম ইমন। ব্যাট হাতে বরিশালের পারভেজ হোসেন ইমন। কাভার দিয়ে দারুণ চার ইমনের, হলো সেঞ্চুরি, দলও জিতলে ৮ উইকেটে। বরিশাল শিবিরে তখন জয়ের উন্মত্ত আনন্দ উল্লাস।

৪২ বলে ১০০ রানে অপরাজিত ইমন, বাংলাদেশের হয়ে সব ধরনের টি-২০ ক্রিকেটে যা দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। আগেরটি ছিল তামিম ইকবালের ৫০ বলে। ৪২ বলের ইনিংসে ইমন হাঁকিয়েছেন নয়টি চার ও সাতটি চার। অনুমিতভাবে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ইমনই।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রাজশাহীর হয়ে দুর্দান্ত সূচনা করেন দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও আনিসুল ইসলাম ইমন। পাওয়ার প্লেতেই চার-ছক্কার ফুলঝুড়িতে রাজশাহী তোলে বিনা উইকেটে ৬৪ রান। বড় স্কোরের আভাস তখন থেকেই শুরু হয়। সেই কাজটি ভালোমতো করেন রাজশাহীর অধিনায়ক শান্ত। ইমন আউট হওয়ার পরও শান্তর ব্যাট ছিল খোলা তরবারি। রীতিমতো কচুকাটা করেন প্রতিপক্ষের বোলারদের।

উদ্বোধনী জুটিতে শান্ত-ইমন তোলেন টুর্নামেন্ট সেরা ১৩১ রান। শেষ পর্যন্ত এই জুটি বিচ্ছিন্ন করেন পেসার সুমন খান। সাজঘরে ফেরার আগে ইমন করে যান ৩৯ বলে ৬৯ রানের ঝড়ো ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল সাতটি চার ও তিনটি ছক্কার মার।

এরপর অবশ্য রান যা এসেছে তা শান্তর ব্যাটে। মাঝে রনি তালুকদার ও সোহান হালকা ঝলক দেখালেও কাজের কাজ করেন রাজশাহী অধিনায়ক। ৫২ বলে তিনি তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। শেষ ওভারে গিয়ে শান্ত আউট হন কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে। সাজঘরে ফেরার আগে শান্ত করে যান ৫৫ বলে ১০৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস।

শেষ ওভারে অবশ্য চমক দেখান বরিশালের পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। ততক্ষণে অবশ্য রানের পাহাড়ে চড়ে বসেছে রাজশাহী। ২০তম ওভারে হ্যাটট্রিক করেন রাব্বি। একে একে তিনি ফেরান নুরুল হাসান সোহান, নাজমুল হোসেন শান্ত ও ফরহাদ রেজাকে। চতুর্থ বলে রাব্বি আউট করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে। ২০ ওভারে রাজশাহীর সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২২০ রান। ৪ ওভারে ৪৯ রানে বরিশালের হয়ে সবোচ্চ ৪ উইকেট নেন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। বাকি দুটি উইকেট নেন আরেক পেসার সুমন খান।

ছয় ম্যাচে দুই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় তলানিতেই আছে বরিশাল। তবে সাত ম্যাচে পাঁচ হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে থেকেও স্বস্তিতে নেই রাজশাহী। কারণ দলটির ম্যাচ বাকি মাত্র একটি। অন্যদিকে বরিশালের রয়েছে দুই ম্যাচ বাকি। রাজশাহী শেষ ম্যাচ জিতলেও তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচগুলোর দিকে। তবে বাকি দুটি ম্যাচ জিতলে কোনো হিসাব ছাড়া শেষ চারে জায়গা করে নেবে তামিমের বরিশাল।