ট্যাম্পারিং হাতেনাতে ধরেছি বহু, লাভ হয়নি: ইংলিশ আম্পায়ার

ট্যাম্পারিং হাতেনাতে ধরেছি বহু, লাভ হয়নি: ইংলিশ আম্পায়ার

ঢাকা, ১ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : সাবেক আম্পায়ার জন হোল্ডার বিবিসিকে বলেছেন, ১৯৮৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তার কেরিয়ারে বহুবার হাতেনাতে তিনি বল ট্যাম্পারিং ধরেছেন, কিন্তু শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকায় অস্ট্রেলিয়ান দলের বল ট্যাম্পারিং ধরা পড়ে যাওয়ার পরে এ নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় চলছে।

কিন্তু সাবেক ইংলিশ আম্পায়ার জন হোল্ডার- যিনি ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করেছেন- বিবিসিকে বলেছেন, তার ১৩ বছরের কেরিয়ারে মাঠে হরহামেশা এই প্রতারণা প্রত্যক্ষ করেছেন।

বহুবার বল ট্যাম্পারিং হাতেনাতে ধরেছেন কিন্তু শাস্তির বিধান না থাকায় কিছু করতে পারেননি।

মি হোল্ডার বলেন, ১৯৯১ তে লন্ডনে ওভালের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে এক টেস্ট ম্যাচে ইংলিশ ক্রিকেটারদের বল ট্যাম্পারিং নিয়ে তিনি লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিলেন কিন্তু কিছু হয়নি।

“ওভারের শেষ বল গেল উইকেট-কিপার অ্যালেক স্টুয়ার্টের কাছে। আমি বলটা তার কাছ থেকে নিয়ে নিলাম। দেখলাম বুড়ো আঙ্গুলের নখ দিয়ে বলটাকে আঁচড়ানো হয়েছে। প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলাম অমি। বুঝতে পারছিলাম পুরোপুরি প্রতারণা করা হচ্ছে।”

সাথে সাথে ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন গ্রায়াম গুচকে ডেকে তিনি বলেন, “ক্যাপ্টেন বলে এত আঁচড় কেন একটু বুঝিয়ে বলবেন?” কাঁধ উঁচিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে গুচ জবাব দিয়েছিলেন- “বলতে পারবো না।”

কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি তারপর? এই প্রশ্নে মি হোল্ডার বলেন, বলে আঁচড়ের জন্য তখন কোনো শাস্তির বিধান ছিলো না। “আমরা শুধু বলটা বদলে দিতে পারতাম।”

ক্রুদ্ধ মি হোল্ডার শুধু বল বদলেই অবশ্য ক্ষান্ত হননি, তার ম্যাচ রিপোর্টে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড দলের বল ট্যাম্পারিং নিয়ে লিখেছিলেন কিন্তু ঘটনা সেখানেই চাপা পড়ে যায়।

মি হোল্ডার বলেন, কর্মকর্তাদের জানালেও ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা ছিল।

উদাহরণস্বরূপ একটি ঘটনার উল্লেখ করেন সাবেক এই আম্পায়ার -

“১৯৯২ সালে পাকিস্তান সিরিজের আগে ধারাভাষ্যকার জ্যাক ব্যানিস্টার একটি বই লিখেছিলেন। তিনি ওভালের মাঠে ঐ বল ট্যাম্পারিংয়ের কথা লিখেছিলেন। ইংলিশ ক্রিকেটে বোর্ডের লোকজন তখন প্রতিবাদে মুখর হয়ে পড়ে। একজন কর্মকর্তা তখন বিবৃতি দিয়েছিলেন- কোনো বল ট্যাম্পারিং হয়নি। পরিষ্কার ধামা চাপা দেয়া হয়েছিল”।

ভারত-পাকিস্তান সিরিজ

১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে ভারতের সাথে টেস্ট সিরিজে প্রথমবারের মত নিরপেক্ষ আম্পায়ার হিসাবে গিয়েছিলেন জন হোল্ডার। সাথে ছিলেন আরেক ইংলিশ আম্পায়ার জন হ্যাম্পশায়ার।

মি হোল্ডার বলেন, চারটি টেস্ট ম্যাচ হয়েছিলো ঐ সিরিজে এবং প্রতিটি ম্যাচে ইচ্ছা করে আঁচড় দিয়ে বল বিকৃত করার ঘটনা ঘটেছিলো।

“এক পর্যায়ে আমি এবং জন হ্যাম্পশায়ার দুই দলের ইমরান এবং শ্রীকান্ত (সে সময়ে পাকিস্তান ও ভারতের দুই অধিনায়ক) এবং দুই দলের ম্যানেজার ইন্তেখাব (আলম) এবং চান্দু বোর্দেকে নিয়ে বসে বললাম - এগুলো কী হচ্ছে, এভাবে বল আঁচড়ানো অবৈধ...কিছুই করতে পারিনি।”

জন হোল্ডার বলেন, চোখের সামনে বড় বড় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে এরকম অনৈতিক আচরণ দেখে তিনি প্রচণ্ড বিরক্ত হতেন।

“আমার মনে হয় ক্রিকেট নিয়ে একটা ভ্রান্ত ইমজে তৈরি করা হয়েছে যে ক্রিকেটে ভদ্রলোকের খেলা। বাজে কথা।”

বরঞ্চ তিনি বিশ্বাস করেন - ক্রিকেটে যত টাকা আসতে, জেতার জন্য যত চাপ বাড়ছে, ক্রিকেটাররা তত বেশি অনৈতিক পথ নিচ্ছে। সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৯১৭ঘ.)