ফ্রান্সের দ্বিতীয় শিরোপা রাশিয়ায়

ফ্রান্সের দ্বিতীয় শিরোপা রাশিয়ায়

ঢাকা, ১৫ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : পেরেছেন কিলিয়ান এমবাপে। পেরেছে ফ্রান্স। দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরাই বাজিমাত করেছে রাশিয়া বিশ্বকাপে। দ্বিতীয়বারের মতো জিতে নিয়েছে ফিফার সবচেয়ে বড় মঞ্চ। মস্কোর লুঝনিকিতে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়েছে ৪-২ ব্যবধানে। ফুটবলের বিশ্ব দরবারে উঁচিয়ে ধরেছে শিরোপা। এর আগে ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে ফ্রান্স।

এরপর ২০০৬ সালে উঠেছিল ফাইনালে। কিন্তু সেইবার ইতালির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে পাওয়া হয়নি দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের স্বাদ। রাশিয়ায় ফরাসিদের সেই আক্ষেপ ঘুচালো এমবাপের ফ্রান্স। তাতে স্বপ্নের ফাইনালে জেতা হয়নি ক্রোয়েশিয়ার। যদিও শুরু থেকে শেষ অবধি দাপুটে ফুটবলই উপহার দিয়েছে জ্লাটকো ডালিচের শিষ্যরা। কিন্তু শেষতক এমবাপে-পগবাদের গতিশীল ফুটবলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণই করতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়ানদের।

রবিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে খেলা শুরুর পর থেকেই ইউরোপের দুই দেশ আক্রমণ পাল্টা আক্রমন দেখলো সবাই। ফাইনালের মঞ্চে ১৮ মিনিটেই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডি বক্সের বাইরে গ্রিজম্যানকে ফাউল করেন ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার। ফ্রি কিক পায় পায় ফ্রান্স। গ্রিজম্যানের নেওয়া সেই ফ্রি কিকে মানজুকিচের মাথা ছুঁয়ে বল জালে জড়ালে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে প্রথমবারের মত আত্মঘাতী গোল করলেন মানজুকিচ।

পিছিয়ে পড়ে দমে যায়নি ক্রোয়েশিয়া। ২১ মিনিটে ভিদার শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে পেরেসিচকে ফাউল করে ফ্রি কিক পায় মদ্রিচ। মদ্রিচের নেওয়া ফ্রি কিক থেকে ভিদার ক্রসে বা-পায়ের দুর্দান্ত শটে গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান ইভান পেরেসিচ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও গোল করে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন এই ইন্টার মিলান তারকা।

গোল খেয়েও কি বসে থাকার পাত্র ফ্রান্স? ফেবারিটের তকমা লাগানো ফ্রান্স ৩৫ মিনিটে কর্নার থেকে আক্রমণ করলে ইভান পেরেসিচের হাতে বল লাগলেও রেফারি এড়িয়ে যান। কিন্তু ভিএআরের মাধ্যমে রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন।

ফাইনালের মঞ্চেও ভিএআর নির্ধারক হয়ে দাড়ালো। স্পট কিক থেকে টুর্নামেন্টে নিজের ৪র্থ গোলটি করে ফ্রান্সকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান। বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে পেরেসিচ দ্বিতীয় ফুটবলার যিনি ম্যাচে গোল করলেন এবং প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি উপহার দিলেন। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ফ্রান্স।

গোল শোধে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। ৪৮ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার রেবিচের শট রুখে দেন লরিস। ৫৩ মিনিটে গোল ব্যবধান মারার সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে। কিন্তু দ্রুত গতির এই ফুটবলার ডি বক্সের ভেতর সুবাসিচের গায়ে শট মারেন।

স্রোতের বিপরীতে কাউন্টার এটাক থেকে ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ডান পায়ে শট নেন পগবা কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হলে ফিরতি শটে বা-পায়ে দুর্দান্ত গোল করে ফ্রান্সকে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা।

গোল খেয়ে যেন খেই হারিয়ে ফেলে ক্রোয়েশিয়া। এই সুযোগে আরো এক গোল করে বসে এমবাপে। ৬৫ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে ডান পায়ের দুর্দান্ত শটে এই বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ গোলটি করেন এমবাপে। কিংবদন্তী ফুটবলার পেলের পর দ্বিতীয় তরুণ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করলেন এই পিএসজি তারকা।

বিশ্বকাপ গোলরক্ষকদের জন্য অভিশাপ হয়েই রইল। ফর্মের তুঙ্গে থাকা গোলরক্ষকরা শিশুসুলভ ভুল করলেও বাকি ছিলেন ফ্রান্সের হুগো লরিস। ফাইনালের মঞ্চে তিনিও দৃষ্টিকটু ভুল করে বসেন। ৬৯ মিনিটে ফ্রান্সের ডিফেন্ডার লরিসকে ব্যাক পাস দেন। কিন্তু রক্ষণমুখে থাকা মানজুকিচকে কাটাতে গিয়ে তার পায়ে লেগে গোল খেয়ে বসে ফ্রান্স।

বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে এক ম্যাচে আত্মঘাতী গোল এবং দলের পক্ষে গোল করলেন মানজুকিচ। ম্যাচের শেষ দিকে গোল শোধের অনেক চেষ্টা করলেও আর তেমন কোন সুযোগই তৈরি করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ফলে ১৯৯৮ সালের পর দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো ফ্রান্স।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৩১০ঘ.)