মাশরাফি ভাইয়ের কথাটি দারুণ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে: মুশফিক

মাশরাফি ভাইয়ের কথাটি দারুণ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে: মুশফিক

ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : পকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা কিভাবে দলকে অণুপ্রেরণা জুগিয়েছেন সেই বর্ণনা দিলেন মুশফিকুর রহিম।

তিনি বলেন,'মাশরাফি ভাই একটি কথাই বলেছিলেন যে যুদ্ধে নামলে পেছনে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। যুদ্ধে নামলে গা বাঁচিয়ে চললে চলবে না। হয় মারবেন, নয় মরবেন।'

মুশফিকের কথায়, 'মাশরাফি ভাই যে কথাটি বলেছে, এটা দারুণ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কারণ লড়াইয়ে নামলে আসলে দেখার সুযোগ নাই দলে কে আছে না আছে। আমাকে আমার শত ভাগ দিতে হবে।'

বুধবার সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালের মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচ–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সেই অভিজ্ঞতার কথা জানান মুশফিকুর রহিম।

তিনি বলেন, আমরা ফল নিয়ে চিন্তা না করে চেষ্টা করেছি শতভাগ দিতে। জানতাম সেটি দিতে পারলে আমরাই জিতব। হয়ত একদিন আমিও থাকব না। কারও জন্য কিছু থাকে না। আমরা পাঁচজনও থাকব না। তার পরও ক্রিকেট চলতে থাকবে। সবাই সেদিক থেকে অনুপ্রাণিত ছিল সত্যিই, যে কিছু দেখাতে হবে। মেহেদি, মুস্তাফিজ, মিঠুন, জুনিয়ররাই আজকের ম্যাচের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ প্রসঙ্গে মুশফিক বলেন, এটা স্রেফ আরেকটি ম্যাচ। পাকিস্তান বা কোনো দলের বিপক্ষে ম্যাচ বিশেষ কিছু নয়। আফগানিস্তান ভালো প্রতিপক্ষ ছিল। শ্রীলঙ্কাও, যদি দুটি ম্যাচেই হেরে বিদায় নিয়েছে, তবু ওরাও বিপজ্জনক দল। জানুয়ারিতে দেশের মাটিতে ওরা আমাদের হারিয়েছিল। কোনো দলকেই তাই সহজ ভাবে দেখার কিছু নেই। আমরা তাই এই ম্যাচটিকেও আর সব ম্যাচের মতো করে নিয়েছি। তবে তৃতীয়বার এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার হাতছানি ছিল্, এজন্য ছেলেরা উজ্জীবিত ছিল। আশা করি এবার আমরা এক নম্বর হতে পারব।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আমার সেরা পাঁচ ইনিংসের মধ্যে থাকবে। ওই সময় একটি জুটি আমাদের দরকার ছিল। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল। তবে পাকিস্তানের পেস বোলিংয়ের যে মান, আমরা জানতাম শুরুতে গোটা দুই উইকেট হারাতে পারি। কিন্তু আমরা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, সেটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, মিঠুনকেও কুতিত্ব দিতে হবে। প্রথম ম্যাচে ভালো করার পর ভালো করতে পারছিল না। এবার দারুণ খেলেছে। ১২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর প্রতিপক্ষ তেতে থাকেব, আমরা জানতাম। এজন্যই আমরা শুরুতে চাপটা সামলে নিয়েছি। পরে শট খেলেছি।

মুশফিক বলেন, আমি মনে করি না স্কোর যথেষ্ট ছিল। তবে লড়ার মতো ছিল। বোলারর দারুণ করেছে। বিশেষ করে মুস্তাফিজ। সে চ্যাম্পিয়ন বোলার। আমরা সবাই জানি। সে যত ধারাবাহিক হতে পারবে, দলের জন্য তত ভালো। অন্য বোলাররাও, মিরাজ, রিয়াদ ভাই, সবাই দারুণ করেছে।

তিনি বলেন, এই ম্যাচ আমাদের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তামিম ও সাকিব না থাকায় আমার ও রিয়াদ ভাইয়ের ওপর বেশি দায়িত্ব ছিল চাপ সামলে লম্বা ইনিংস খেলার। দেশের হয়ে প্রায় দুইশ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকলে আসলে প্রতি তিন ম্যাচের দুটিতেই রান করা উচিত। আমরা সেটাই চেষ্টা করি। দল হিসেবে উন্নতি করতে হলে এটাই করতে হবে। আমারও সেটিই লক্ষ্য যেহেতেু এখন ভালো ছন্দে আছি, সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে। উইকেট বিলিয়ে না আসতে।

মুশফিকের কথায়, আশা করি যত ম্যাচ খেলবে, জুনিয়ররাও এই ব্যাপারগুলো শিখবে। যেমন মিঠুন যদি প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করত, তাহলে অন্য রকম মানসিকতা থাকত ওর। কিন্তু সেটি হয়নি। দুই ম্যাচে ব্যর্থতার পর এখন আবার তাকে অন্যরকম ভাবতে হয়েছে। এই ব্যাপারগুলো ওরা যত খেলবে, তত শিখবে।

তিনি বলেন, সত্যি বলতে, আমার মনে হয়েছিল ২৩৯ যথেষ্ট নয়। আমি ওই সময় আউট হয়ে বেশ হতাশ ছিলাম। কারণ উইকেট দেখে আমার মনে হয়েছিল, ২৬০ রান লড়াকু স্কোর। সেটা করতে হলে আমার টিকে থাকতে হতো। কিন্তু বোলাররা দারুণ করেছে। এই রান ডিফেন্ড করতে হলে শুরুতে উইকেট দরকার ছিল। মুস্তাফিজ যা করেছে, এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না। গুরুত্বপুর্ণ উইকেট নিয়েছে। মাশরাফি ভাইয়ের ক্যাচটি ছিল অসাধারণ। কারণ আমরা জানতাম ওদের ব্যাটিংয়ে শোয়েব মালিকই আমাদের মূল হুমুকি। দু-একটি সুযোগ হাতছাড়া করলেও ফিল্ডিং সব মিলিয়ে ছিল দারুণ। তামিম ও সাকিব না থাকার পরও ছেলেরা নিজেদের ক্যারেকটার প্রমাণ করতে পেরেছে। দেখিয়ে দিয়েছে ওরা না থাকলেও কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এই ধরণের ম্যাচ জয় থেকে অনেক অনুপ্রেরণাও মেলে অনেক।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৭২৭ঘ.)