জানাযায় লাখো মানুষের ঢল

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানের দাফন সম্পন্ন

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানের দাফন সম্পন্ন

সিলেট, ১৯ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : সিলেটের বিশিষ্ট আলেম, নগরীর জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে প্রিন্সিপাল অফিসের কাছে নিজের তৈরি বাগানের পাশে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা ইউসুফ।

প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানের জানাজা উপলক্ষে সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জানাজায় সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। নামাজের পূর্বে মরহুমের জীবনী নিয়ে দেশ বরেণ্যে রাজনীতিবিদ, আলেম-উলামা ও ইসলামি স্কলাররা বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান ছিলেন একজন সংগ্রামী আলেমে দ্বীন ও বহুগুণে গুণান্বিত শ্রদ্ধাভাজন মানুষ। দ্বীনি শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে ইসলামি রাজনৈতিক অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

বক্তারা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, চার ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।

বরেণ্য এই আলেমে দ্বীনের মৃত্যুতে সিলেট অঞ্চলে হাজার হাজার শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের ঘনশ্যাম গ্রামে।

প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন থেকেই হার্টের সমস্যা ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। ভারত থেকে তিনি চিকিৎসা নিয়ে গত মঙ্গলবার দেশে ফেরেন। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় বুধবার থেকে তিনি যথারীতি মাদরাসায়ও আসা-যাওয়া শুরু করেন। শিক্ষা জীবনের শুরু ফুলবাড়ির বইটিকর প্রাইমারী স্কুল থেকে। পরে কিছুদিন রুস্তুমপুর কওমি মাদরাসায় পড়ে ভর্তি হন ফুলবাড়ি আজিজিয়া আলিয়া মাদরাসায়। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ফুলবাড়ি মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ফাজিল এবং ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেট আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন।

সুরমা নদীর তীরে কাজির বাজার পেঁয়াজহাটা মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসাবে তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি মসজিদের পাশে একেবারে নদীর টানআইলে প্রতিষ্ঠা করেন জামেয়া মাদানিয়া মাদরাসা। প্রথমে তা মক্তব মাদরাসা হলেও পরবর্তীতে তার অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ, সাধনার বিনিময়ে মাদরাসাটি বিরাট আকার ধারণ করে।

ছাত্র জীবন থেকেই তিনি তার বাবার সূত্রে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর হজরত মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) কর্তৃক খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন। পরে খেলাফত আন্দোলন ছেড়ে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিতি খেলাফত মজলিসে যোগ দিয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুকালে তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমিরের দায়িত্বে ছিলেন।

বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রায় ২০টির মতো বই রচনা করেছেন। তিনি শায়খুল আরব ওয়াল আজম হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা আল্লামা আব্দুল জলিল বদরপুরী (র.) শিষ্য ছিলেন।

১৯৯৪ সালে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়ে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি পান প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান। তার সংগঠন সাহাবা সৈনিক পরিষদের ব্যানারে ওই সময় সিলেটে অসংখ্য সভা-সমাবেশ করা হয়। এ ছাড়া দেশের নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সব সময়ই তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।

(জাস্ট নিউজ/এমজে/১৯০৭ঘ.)